ইবনে আল হাইছামের আল-বাইত আল মুজলিম ও আধুনিক ক্যামেরা।
ইবনে আল হাইছাম ‘আল-বাইত আল-মুজলিম’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন যার অর্থ ল্যাটিন ভাষায় ‘ক্যামেরা অবসকুরা’ এবং ইংরেজি ভাষায় ‘ডার্ক চেম্বার’ । ইবনে আল-হাইছাম লক্ষ্য করেন যখন চাঁদের আলো একটি ছোট ছিদ্র দিয়ে তার অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করে, তখন এটি একটি চমকপ্রদ ঘটনা তৈরি করে। আলোক রশ্মিটি একটি উল্টো বিম্ব তৈরি করে । ইবনে আল-হাইছাম জানতে চেয়েছিলেন কেন প্রক্ষেপণটি একটি উল্টো চিত্র তৈরি করেছে।
আলোর সরলরেখায় চলার মৌলিক ধর্ম বুঝতে এই প্রভাবটি তাকে মৌলিকভাবে সাহায্য করেছিল। আলো যখন কোনো বস্তুতে পতিত হয়ে পুনরায় প্রতিফলিত হয়, তখন তা সরলপথে সকল দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
ফলস্বরূপ, যখন কোন বস্তুর উপরের অংশ থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে ইবনে আল-হাইছামের কক্ষের একটি ছোট ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে, তখন এটি একটি সরল পথ অনুসরণ করে এবং কক্ষের নীচের অংশে অবতরণ করে। একইভাবে, বস্তুর নিচের অংশ থেকে প্রতিফলিত আলো একটি সরল পথ অনুসরণ করে এবং কক্ষের দেয়ালের উপরের অংশে অবতরণ করে। এই কারণেই তার দেয়ালে বস্তুটির একটি উল্টো চিত্র তৈরি হয়েছিল।
ইবনে আল-হাইছাম একটি যুগান্তকারী তত্ত্ব তুলে ধরেন যে মানুষের কোনো বস্তুকে দেখতে পাওয়ার সক্ষমতা ঐ বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলোক রশ্মির মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। যা বস্তু থেকে সরল রেখায় প্রতিফলিত হয় এবং তারপরে আমাদের চোখে প্রবেশ করে। তার এই তত্বটি অপটিক্স এর ধারনা বোঝার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত করেছে। তার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে, তিনি গাণিতিকভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে চাঁদের আলো মূলত সূর্যের আলোরই প্রতিফলিত একটি রুপ । এই পর্যবেক্ষণগুলি তাকে বুঝতে সাহায্য করে যে অপটিক্যাল স্নায়ু আমাদের চোখকে মস্তিষ্কের সাথে মিলিত করে যার দরুন আমরা দৃশ্য অনুভব করি ।
অপটিক্সের ক্ষেত্রে তার এ সকল অবদান পরবর্তী সময়ের এই ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ভিত্তি স্থাপন করেছিল, যার মধ্যে টেলিস্কোপ, মাইক্রোস্কোপ, ক্যামেরা এবং চশমার মতো ডিভাইসের উদ্ভাবন উল্লেখযোগ্য । তার বই এবং পরীক্ষাগুলি আমরা কীভাবে রাতের আকাশের বস্তুসমূহ দেখতে পারি তা বোঝার জন্য তার বই এবং পরীক্ষাসমূহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ইবনে আল-হাইছামকে প্রায়শই তার সূক্ষ্ম পরীক্ষা পদ্ধতি ও সুনির্দিষ্ট তত্ব প্রস্তাবনের কারণে প্রথম দিকের বিজ্ঞানীদের একজন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তিনি তার এই সূক্ষ্ম পরীক্ষা পদ্ধতি কেবল নিজের পরীক্ষনেই প্রয়োগ করেননি বরং তার লেখার মাধ্যমে অন্যদেরও এই বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে উৎসাহিত করেছেন।
অনুবাদ- আব্দুল্লাহ সরদার