মুসলিম পোর্ট

তুরস্ক। শব্দটি আমাদের মানসপটে ভিন্ন এক তরঙ্গের দোলা দিয়ে যায়। মনের রঙিন পর্দায় ভেসে উঠে ইস্তাম্বুলের নীলাভ এক আধ্যাত্মিক আভা। একসময়ের আধ্যাত্মিকতা ও খিলাফতের সেই প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠে কট্টর জাতীয়তাবাদী শক্তির অন্যতম এক ঘাটি। একদিকে আরব জাতীয়তাবাদ অপরদিকে তার্কিশ জাতীয়তাবাদের বিবাদের শত বিভক্ত খন্ডে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ইসলামী সভ্যতার অন্যতম প্রভাবশালী খিলাফত- উসমানী খিলাফত।

প্রশাসনযন্ত্রের নিষ্পেষণে একজন মুসলিম নিজেকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতেও দ্বিধাবোধ করতো। সেই নিষ্পেষণযন্ত্রকে উচ্ছেদ করতেই যেন সেক্যুলার তুরস্কের স্বর্ণযুগের যাত্রাকালেই এই মাটিতে ১৯২৬ সালের ১০ ই অক্টোবর জন্ম হয় ইতিহাসের স্রোতকে পালটে দেয়া এক ব্যক্তিত্বের। তুরস্কের আপামর জনতার হোজা(উস্তাজ) প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান।

প্রফেসর এরবাকান কে??
প্রফেসর এরবাকান হলেন তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, ইসলামী আন্দোলন মিল্লি গরুশের প্রতিষ্ঠাতা, একজন বিজ্ঞানী, গণিতবীদ এবং ইঞ্জিনিয়ার। একই সাথে তিনি ছিলেন একজন উসূলবীদ, ফিকাহবীদ এবং ফিরাসাত এবং দিরায়েত সম্পন্ন সাহসী ও দৃঢ় চিত্তের একজন নেতা।

তার বাবা ছিলেন উসমানী আমলের বিচারপতি এবং নতুন প্রজাতন্ত্রিক তুরস্কের অন্যতম এক বিচারক।

প্রখ্যাত নকশাবন্দী তরিকতের প্রধান উস্তাজ মেহমেদ জাহিত কতকু এর প্রচন্ড মেধাবী এই ছাত্র অল্প বয়সেই উসমানী এবং আরবী ভাষা রপ্ত করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় রেকর্ড নাম্বার পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে এবং মাত্র ৩ বছরের মাথায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ সিজিপিএ নিয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেন ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। একই সাথে তুরস্কের ইতিহাসে প্রথম কোন স্নাতক পাশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় প্রফেসর এরবাকানকে। উল্লেখ্য, তৎকালীন সময়ে বর্তমানের মতো তুরস্কে PhD ব্যাতীত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ ছিল অকল্পনীয়। জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার জন্য গমণ করলে সেখানেও তার মেধা জার্মান প্রফেসরদেরকে অভিভূত করে। দেড় বছরের মধ্যে তিন তিনটি যুগান্তকারী থিসিস পেপার প্রকাশ করে PhD ডিগ্রী লাভ করেন এবং জার্মানীর বিখ্যাত লিওপার্ড ট্যাংকে অধুনিকীকরণে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন যার জন্য জার্মানী আজও তার কাছে কৃতজ্ঞ।

১৯৪৪ সালের স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে তুরস্কের সেক্যুলারদের ঘাটি ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন এক মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে সেক্যুলার প্রশাসনকে তাক লাগিয়ে দেয়া এরবাকান, ১৯৫৬ সালে মাত্র ৩০ বছর বয়সে সকল হিসাব পালটে দিয়ে তুরস্কের মাটিতে প্রতিষ্ঠা করেন প্রথম ইঞ্জিন ফ্যাক্টরী “গুমুশ ফ্যাক্টরী”। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতি, পাশাচাত্যের দাসবৃত্ততিক মনোভাবের ফলে গুমুশ ফ্যাক্টরী বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়।

ফলশ্রুতিতে শিল্প বিপ্লবকে মোটিভ ধরে, সময়ের বিপরীত স্রোতে চলার অবিচল মনোবল নিয়ে, তুরস্কের মানুষের ভেতরে ইসলামী ধ্যান-ধারণা জাগ্রত করার লক্ষ্যে ও আবারও বৃহৎ তুরস্ক গড়ার দৃপ্ত শপথে এবং জায়োনিজমের বিষদাত ভেঙ্গে নতুন এক বিশ্বব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রখ্যাত নাকশিবন্দী আলেম জাহেদ আহমেদ কুতকু এর পরামর্শে ১৯৬৯ সালে ১০ জন উম্মাদকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেন মিল্লি গরুশ(জাতীয় ভিশন অর্থাৎ ইসলামী ভিশন) আন্দোলনের।

মিল্লি গরুশের রাজনৈতিক দলসমূহঃ
১- মিল্লি নিজাম পার্টি (১৯৭০-১৯৭১) (নিষিদ্ধ)
২- মিল্লি সালামেত পার্টি (১৯৭২-১৯৮১) (নিষিদ্ধ)
৩- রেফাহ পার্টি (১৯৮৩-১৯৯৮) (নিষিদ্ধ)
৪- ফজিলত পার্টি (১৯৯৮-২০০১) (নিষিদ্ধ)
সর্বশেষঃ ৫) সাদেত পার্টি (২০০১- বর্তমান)

মিল্লি গরুশের মূলনীতিসমূহঃ
১- তাওহীদকে সবার উপরে ধরে রাখা এবং তাওহীদের দৃষ্টিকোণ থেকে সবকিছুকে পরখ করা। পরিস্থিতি সহজ হোক কিংবা কঠিন অথবা যত ভয়াবহ হোক না কেন তাওহীদকে সবকিছু উপরে স্থান দিয়ে সে আলোকে সিদ্ধান্ত নেয়া।
২- সর্বদা, সর্বাবস্থায় হক্বের পাশে থাকা। হক্ব কী?? আল্লাহ হচ্ছেন হক্ব। দুনিয়াবী কোন শক্তির পাশে না থেকে হক্বের উপর অবস্থান করা।
৩- সুন্নতকে মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা।
৪- গোড়ামী এবং অতিরিক্ত উদারতা পরিহার করা। সকলের মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উচিত।
৫- সব ধরণের বিদ’আত থেকে দূরে থাকা।
৬- আহলে কিবলার বিশ্বাসীদের কাফির না বলা। যদি কুফরীর সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে ভিন্ন কথা।
৭- ঐক্যের জন্য কথা বলা, সকলের সাথে আলোচনা করা এবং ঐক্যের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা। ইখতিলাফকে পরিহার করা।
১০- গুনাহগার হলেও কোন মুসলিমকে ঘৃণা না করা। তাকে ভালোবেসে সংশোধনের প্রচেষ্টা করা।
১১- সর্বাগ্রে ইসলাম। ইসলামের চেয়ে কোন কিছুর মূল্য কখনোই বেশী নয়। মাজহাব, তরিকত এসকল কিছুকে ইসলামের পরে অবস্থান দেয়া।
১২- যেকোন জায়গায়, যেকোন সময়েই আমরা অবস্থান করি না কেন?? ইসলামী ঐক্যের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা।
১৩- জালিম হচ্ছে আমাদের দুশমন। জালিমকে সর্বদা ঘৃণা করা। কেননা সে মানবতার দুশমন।


মিল্লি গরুশ আন্দোলন প্রতিষ্ঠার পরপরই ১৯৬৯ এর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তুরস্কের কোনিয়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন প্রফেসর এরবাকান। এরপরই ১৯৭০ সালের ২৬ শে জানুয়ারী প্রতিষ্ঠা করেন মিল্লি গরুশের প্রথম রাজনৈতিক দল “মিল্লি নিজাম পার্টি”। এক বছরের মাথায় সামরিক সরকার এই রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করলে প্রফেসর এরবাকান ১১ অক্টোবর ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন “মিল্লি সালামেত পার্টি”। ১৯৭৩ এর জাতীয় নির্বাচনে ১১.৮% ভোট অর্জন করে, ১৯৭৪ সালে জোট গঠন করেন তুরস্কের কট্টর সেক্যুলার দল সিএইচপি(CHP) এর সাথে।

কট্টর বামপন্থী একটি দলের সাথে ইসলামকে সকল কিছু কেন্দ্রে ধারণকারী একটি দলের কোয়ালিশন পুরো মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপকে অবাক করে দেয়। নতুন এক অধ্যায়ের শুরু হতে যাচ্ছে তুরস্কে তারই বার্তা দিচ্ছিল এই জোট।

ইসলামী আন্দোলনসমূহও প্রফেসর এরবাকানের মূলনীতি এবং কাজের দরুণ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়।

ইখওয়ানুল মুসলিমীন বিশেষ করে মিশরের ইখওয়ান এর তৎকালীন নেতা ওমর তিলমেসানী ব্যাপক প্রভাবিত হোন।

ইরান বিপ্লবের নেতা রুহুল্লা খোমেনী পূর্বে তুরস্কে অবস্থানের দরুণ প্রফেসর এরবাকান কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে তার কৌশল অনুসরণ করতে নির্দেশ প্রদান করেন।

মরক্কোর ইখওয়ানের নামকরণ প্রফেসর এরবাকানেরই দেয়া।

মুসলিম ভূমি পুনরুদ্ধারঃ
১৯৭৪ সালে সরকার গঠনের ৬ মাসের মাথায়, তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর এরবাকানের একক প্রচেষ্টায় সাইপ্রাসে বিজয়াভিযান পরিচালনা করে তুরস্ক। উসমানী খিলাফতের পতনের পর এটিই ছিল মুসলিমদের কর্তৃক প্রথম কোন ভূমি পুনরুদ্ধার অভিযান।

ইসলামী ঐক্যের কার্যকারিতাকে বিশ্বের মুসলিমদের নিকট তুলে ধরতে বসনিয়ার নিপীড়িত মুসলিমদের সহায়তার ক্ষেত্রে প্রফেসর এরবাকানের অবদান ছিল অবিস্মরণীয়।

৯০ এর দশকে বসনিয়ার নিপীড়িত মুসলিমদের পাশে দাড়ানোর সাহস যখন কেউ পাচ্ছিলো না তখন প্রফেসর এরবাকান বিরোধীদলে থেকেও সবরকমের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। বসনিয়ার বিখ্যাত নেতা আলীয়া ইজ্জেত বেগভিচ যখন তার কাছে সাহায্যের জন্য আসেন তখন ৩৬ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সেসময়ে বসনিয়ার একটি কৌশলগত স্থানে অবস্থিত মার্সিডিজ ফ্যাক্টরীকে অস্ত্র ফ্যাক্টরীতে রুপান্তর করেন, তাও মাত্র ১১ মাসের মাথায়, তার উপর বিরোধীদলে থেকে। সেই সাথে আলীয়া ইজ্জেত বেগভিচের “ডেমোক্রেটিক একশন পার্টির” নেতাদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ প্রদান এমনকি পার্টির প্রধান কার্যালয়ের ভাড়া পর্যন্ত প্রফেসর এরবাকানের রেফাহ পার্টি বহন করতো।

শুধু তাই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যেমন মরো এবং চেচনিয়া ও দাগাস্তানে অস্ত্র সাহায্য এবং মুজাহিদ বাহিনী প্রেরণ করেন প্রফেসর এরবাকান।

তুরস্কের প্রফেসরের অবদানঃ
তার্কির অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ইসলামী পুনর্জাগরণের জন্য কাজ শুরু করেন পুরোদমে। মাত্র পাচ বছর ক্ষমতায় থেকে তুরস্কের আবহাওয়া সম্পুর্ণ পালটে দিতে অনন্য এক নজির স্থাপন করেন তিনি।

১- আধ্যাত্মিক উন্নয়ন তথা ইসলামকে সরকারী কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিকরন

২- পুনরায় মাদ্রাসা স্থাপন

৩- ৫০০০ এর বেশী কুরআন কোর্স চালু করা

৪- সকল স্কুলে দ্বীন ও আখলাক দারস বাধ্যতামূলক করে দেওয়া

৫- মুসলিম দেশসমূহ থেকে পাশ করে আসা শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেটের স্বীকৃতি দেওয়া।

৬- তুরস্ককে ওআইসির(OIC) এর অন্তর্ভুক্তিকরন

৮- তুরস্কে প্রথম সুদ মুক্ত ব্যাংক চালু করেন

১০- তার শাসনব্যবস্থা এতটাই কার্যকরী ছিল যে, মাত্র ৪ বছরে ২০ লাখের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন প্রফেসর এরবাকান।

শিল্প বিপ্লবঃ
১৯৭৪ এর সাইপ্রাস বিজয়ের পর আমেরিকা তুরস্কের উপর অবরোধ আরোপ করে। তার্কির ইসলামপন্থী থেকে শুরু করে অনেকেই প্রফেসর এরবাকানকে দোষারোপ করছিলো সাইপ্রাস বিজয়ের জন্য এবং আমেরিকার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সংকিত ছিলো। সে সময়ে যারা আমেরিকার ভয়ে এতটাই কাবু ছিলো যে, তাদের উদ্দেশ্যে সংসদে দাঁড়িয়ে ধমকের সুরে বলেছিলেন- “আমেরিকা!! তো আমার কী??”(আমেরিকা আমার কী করবে?)

এমবার্গো দিয়ে তাকে দমিয়ে রাখা যায় নি, উলটো তিনি আমেরিকার ২৫ টি সামরিক ঘাটি বন্ধ করে দিয়ে সেসব ঘাটিতে তার্কির পতাকা উড়িয়ে দেন।

৭০ এর দশকে তুরস্কের মানচিত্র পালটে দিতে প্রফেসর এরবাকান তুরস্কে শিল্প বিপ্লবের সিদ্ধান্ত নেন।

মাত্র চার বছরের(৭৪-৭৮ সালে) মাথায় তুরস্কে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন-

১৮ টি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি,

১৪ টি চিনির ফ্যাক্টরি…

৭৭ টি বৃহৎ শিল্প সেবা প্রতিষ্ঠান

৬৩ টি organized industrial Zone

২৫৩ টি ছোট শিল্প-কারখানা,

৩২ টি বৃহৎ মেশিনারী ফ্যাক্টরী

৪ টি নৌ কারখানা

১০ টি ইঞ্জিন ফ্যাক্টরী

৪ টি ইলেক্ট্রোনিক শিল্প-কারখানা এবং

সর্বশেষ Taksan প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যা ছিলো “ফ্যাক্টরী বানানোর ফ্যাক্টরী।” অর্থাৎ অন্যান্য ফ্যাক্টরী বানাতে হলে যা সরঞ্জাম লাগবে তা এই ফ্যাক্টরি সরবরাহ করবে।

এতো কম সময়ে এরকম উৎপাদন আর কেউ করে দেখাতে পারে নি তার্কির ইতিহাসে।


প্রফেসর এরবাকানের ভাষায়- “এটিই হচ্ছে সত্যিকারের উন্নয়ন। যারা রাস্তা-ঘাট আর বিল্ডিং এর মধ্যে উন্নয়ন খুজে ওরা অজ্ঞ। কারণ এই সাদা বিল্ডিং আমাকে আপনাকে খাবার দিবে না। আপনাকে খাবার দিবে উতপাদনশীল অর্থনীতি। রেড ইন্ডিয়ানদের একটি কথা ছিলো- “যখন নদীর মাছ শেষ হয়ে যাবে, গাছ-পালা ধ্বংস হয়ে যাবে, খাবারের কিছু অবশিষ্ট থাকবে না, তখন এই সাদা চামড়ার বৃটিশরা বুঝতে পারবে যে টাকা চিবিয়ে খাওয়া যায় না।”

রেফাহ পার্টির শাসনামলে অবদানঃ
১৯৮৩ সালে তিনি কারাগার থেকে রেফাহ পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে সরকার প্রফেসর এরবাকানের উপর থেকে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিলে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হন প্রফেসর এরবাকান। ১৯৯৬ সালের ২৮ শে জুন প্রধানমন্ত্রীর আসনে সমাসীন হোন প্রফেসর এরবাকান। তার ৫৪ তম এই সরকারের রয়েছে তুরস্কের ইতিহাসের তাক লাগানো কিছু অনন্যসাধারণ কাজঃ

১। সরকারী চাকুরীজীবীদের বেতন ১০২.৫% বৃদ্ধি করা হয়,

২। নূন্যতম বেতন ১০০% বৃদ্ধি করা হয়।

৩। পেনশন ভাতাকে ৩০০% বৃদ্ধি করেন।

৪। তুরস্কের ইতিহাসে প্রথম ব্যাল্যান্স বাজেট করেন যা এর আগে এবং পরে আর কেউ করতে পারেনি।

৫। অর্থনীতিকে সুদ মুক্ত করার লক্ষ্যে নতুন পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা এবং সুদকে সম্পূর্ণ রূপে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা। সেই সাথে তার্কির সুদের পরিমাণ ১৭০% থেকে নামিয়ে ৮৩% তে নিয়ে আসেন এসেছিলেন মাত্র ১১ মাসের ক্ষমতায়। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নতুন ফান্ড গঠন। এক্ষেত্রে ভ্যাট না নিয়ে, ঋণ না নিয়ে শুধু মাত্র দেশীয় ভাবে ৬ মাসের মধ্যে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড গঠন করে কৃষিক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করেন।

৬) গৃহীত ন্যায়ভিত্তিক অর্থব্যবস্থার ফলে মাত্র ১০ মাসের মাথায় কোন ধরণের ভ্যাট ও কর বৃদ্ধি ছাড়া এবং কোন প্রকারের মূল্যবৃদ্ধি ব্যাতীত তুরস্ক সরকার ২৫.১১ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় অর্জন করে ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে এবং মাত্র ৬ মাসে ৩৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করে তুরস্ক যা আজও তুরস্কের ইতিহাসে রেকর্ড।

ইসলামী ঐক্য এবং নতুন দুনিয়া গঠনের প্রস্তাবনাঃ

প্রফেসর এরবাকান ১৯৭৬ সালে ইসলামী ইউনিয়ন গঠনের প্রস্তাব পেশ করেন OIC এর সম্মেলনে। তিনি প্রস্তাবনা করেনঃ

১) একটি ইসলামী ইউনিয়ন গঠনের যেখানে সকল মুসলিম দেশ নিজেদের সমস্যার সমাধানে একত্র হবে এবং পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে একত্রে অবস্থান নিতে সক্ষম হবে।

২) মুসলিম দেশসমূহের সমন্বয়ে নিজস্ব একটি প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তোলা যা ইউনিয়নের অধীনে থাকবে।

৩) মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে মুক্তবাজার ব্যবস্থা তৈরী করা। শুল্কমুক্ত বা নামমাত্র শুল্কে মুসলিম বিশ্বের যেকোন দেশ যেন স্বাধীনভাবে বাণিজ্য করতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এবং যাতায়াতের জন্য কোন ভিসার যেন প্রয়োজন না হয়।

৪) মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে “ইসলামিক দিনার” নামক অর্থনৈতিক মুদ্রা চালু করা যা ৫৭ টি মুসলিম দেশে গ্রহণযোগ্য হবে। অধিকাংশ বিশ্লেষকগণ বলেন- ১৯৭৬ সালে প্রফেসর এরবাকানের প্রস্তাবিত এই চিন্তা থেকেই ইউরোপী ইউনিয়ন ১৯৯৯ সালে “ইউরো” চালু করে।

৫) মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতির সমন্বয় সাধন করা।

৭০ এর দশকে ইসলামী ইউনিয়ন গঠন হলে হয়তো নতুন এক বিশ্বব্যবস্থা আজ আমরা প্রত্যক্ষ করতাম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সেটি হয় নি।

ইসলামী ঐক্যের জন্য আজীবন কাজ করে যাওয়া প্রফেসর এরবাকান ৯০ এর দশকে উপসাগরীয় যুদ্ধ রুখতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু আরব শাসকদের একগুয়েমি এবং তাদের উপর আমেরিকার প্রভাবের দরুণ সেই প্রচেষ্টা সফল হয় নি।

D-8: নতুন বিশ্বব্যবস্থার প্রথম পদক্ষেপঃ
একটি ইসলামী বিশ্বব্যস্থার স্বপ্নকে সামনে রেখে তার স্বপ্নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৯৭ সালের ১৫ই জুন Developing-8 অর্থাৎ D-8 প্রতিষ্ঠা করেন। সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়ার মূলমন্ত্র যেখানে “শক্তিই সকল কিছুর উৎস” সেখানে তার প্রতিষ্ঠিত D-8 এর মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করেন “সবার উপরে হক্ব”।

D-8 এর মূলনীতিঃ
যে দেশসমূহ নিয়ে D-8 গঠন করা হয়েছিল।
১) তুরস্ক, ২) ইরান, ৩) মিশর, ৪) মালয়শিয়া, ৫) ইন্দোনেশিয়া, ৬) নাইজেরিয়া, ৭) বাংলাদেশ, এবং ৮) পাকিস্তান(পারমাণবিক)

D-8 এর লগোতে ছয়টি তারা সংগঠনটির ৬ টি মূলনীতিকে ইঙ্গিত করে। সেগুলো হল-
• যুদ্ধ নয় শান্তি
• দ্বন্দ নয় সংলাপ
• শোষণ নয় সহযোগীতা
• দ্বৈতনীতি নয় আদালত
• অহমিকা নয় সমতা
• বলপ্রয়োগ ও কর্তৃত্ববাদীতা নয়, মানবাধিকার, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র ।

যদি আরেকটু লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখতে পাবেন এসব হচ্ছে ইমাম আবু হানীফার ফিকাহ থেকে নেয়া হয়েছে প্রতিটি মূলনীতি কিন্তু ভাষা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

D 8 এর গুরুত্বঃ
তেল- পৃথিবীর ১৪% তেল রিজার্ভ আছে এই ৮ টি দেশে এবং এই ৮ টি দেশ থেকে বাৎসরিক পৃথিবীর ১০% তেল উত্তোলন করা হয়। আবার এই ৮ টি দেশ কর্তৃক পৃথিবীর ৬.৭% তেল ব্যবহৃত হয়।


গ্যাস- বিশ্বের ২৩.২% প্রাকৃতিক গ্যাসের রিজার্ভ আছে D-8 এর দেশসমূহে। সেই সাথে D-8 থেকে বছরে বিশ্বের ১৩.২% গ্যাস উত্তোলন করা হয়। আর D-8 এর দেশসমূহ প্রতিবছর বিশ্বের ১১.২% গ্যাস ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও বর্তমান বিশ্বের স্ট্র্যাটেজিক পদার্থ বোরন ও ক্রোমিয়াম ব্যাপক পরিমাণে মজুদ রয়েছে D-8 এর ভেতরে। বিশ্বের তুলা রপ্তানিতে D-8 এর দেশ সমূহের বৃহৎ একটি ভূমিকা এখনো বিদ্যমান। স্ট্র্যাটেজিক পজিশন ছাড়াও D-8 এর অধীনে পৃথিবীর মধ্যভাগের সর্বোচ্চ এলাকা, সাথে রয়েছে ৮ টি দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠী। মুসলিম বিশ্বের কথা চিন্তা করলে, মুসলিম দেশ সমূহের মধ্যে ৬০% জিডিপি হচ্ছে D-8 এর, একই সাথে OIC অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহের ৬৫% জনশক্তি D-8 এর দেশসমূহ থেকেই। মুসলিম বিশ্বের বৈদেশিক বাণিজ্যের দিক থেকে D-8 ১০০ ভাগের মধ্যে ৫৮ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। D-8 এর অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহের সম্মিলিত জিডিপি ৪.৯ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থাৎ এটি বিশ্ব অর্থনীতির ৫%। অথচ নিজেদের তুলনায় তা কিছুই না।

ভৌগলিক গুরুত্বঃ
ভৌগলিক দিক দিয়ে এই ৮ দেশের অবস্থান বিবেচনা করলে ডি-৮ এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব কতটুকু তা বুঝা কোন কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়। অর্থনৈতিক রুটগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়ঃ

১) তুরস্কঃ ইউরোপ এবং এশিয়ার সংযোগস্থল। চানাক্কালের এবং বসফরাস প্রণালী দুটো তুরস্কের সীমানায়। তুরস্কের অধীনেই দু-দুটি প্রণালী। একই সাথে কেরচ প্রণালী তুরস্কের এই দুই প্রণালী ছাড়া অচল। অর্থাৎ তুরস্কের যদি চায় তাহলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৩ টি প্রণালী নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। রাশিয়াকে এ পথেই বাণিজ্য করতে হয়।

২) মিশরইরানঃ সুয়েজ ক্যানেল, বাব-আল মান্দেব এবং হরমুজ প্রণালী পাশাপাশি তিনটি প্রণালী। ইউরোপ থেকে এশিয়ার বাণিজ্য জাহাজের রুট একমাত্র এটিই।

৩)মালয়শিয়াইন্দোনেশিয়াঃ মালাক্কা প্রণালী হচ্ছে এই দুই দেশের অধীনে। জাপান, চীন, ও কোরিয়া উপদ্বীপের সকল বাণিজ্য এ প্রণালী দিয়েই করতে হয়।

৪)পাকিস্তাননাইজেরিয়াবাংলাদেশঃ তিন দেশের সামর্থ্য সম্পর্কে সকলেই জানি। তেলসমৃদ্ধ দেশ নাইজেরিয়া, পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন পাকিস্তান এবং উৎপাদনশীল বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বের অমূল্য সম্পদ।

যদি এখনো নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়ন করে এবং এসব প্রণালীতে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সক্ষম হয় তাহলে পৃথিবীর ৭০% বাণিজ্য মুসলিমরা নিয়ন্ত্রণ করবে।

ফিলিস্তিনি এবং নাজমুদ্দিন এরবাকানঃ
ফিলিস্তিন এবং প্রফেসর এরবাকান একে অপরের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলা এবং ফিলিস্তিনের স্বার্থে পদক্ষেপ নেয়ার দরুণ তাকে দুই দুইবার সামরিক অভ্যুত্থানের সম্মুখীন হতে হয়েছে। একবার ১৯৮০ সালে তখন ছিলেন বিরোধীদলে। আর ইতিহাসের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে এই প্রথম কোন বিরোধীদলের বিপক্ষে ক্যু সংঘঠিত হয় শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে এবং সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করে ১৯৮০ সালে ইসরাইলের সাথে সকল ধরণের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের প্রাক্কালেই সামরিক অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়।

একইভাবে ১৯৯৭ সালে সরকারের থাকাকালীন সময়ে তুরস্ক থেকে সেনা পাঠানোর প্রস্তাব সংসদে পাশ হওয়ার মাত্র ১ সপ্তাহের মধ্যে আবারও সামরিক অভ্যুত্থান হয় যা পরবর্তীতে কয়েকজন জেনারেল স্বীকার করে নিয়েছিল।

ফিলিস্তিনের হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া তুরস্ক সফরে এসে একবার বলেছিলেনঃ
১৯৯৭ সালে ক্যু এর পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- “প্রফেসর এরবাকান তুরস্কে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে আপনারা ফিলিস্তিনে কোন ধরণের হামলা করেন নি। এর কারণ কী?
জবাবে সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী বলেছিল- যে লোক ৩ দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়ে সাইপ্রাস বিজয় করে নিতে পারে, সে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ফিলিস্তিনে হামলা আত্মহত্যার শামিল”।

১৯৯৭ সালের ক্যু এর পর হাজারো জনতা তার বাসার সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন- “উস্তাজ, মরতে বললে মরবো, মারতে বললে মারব”। প্রফেসর এরবাকানের সামান্য এক ইশারায় তুরস্ক গৃহযুদ্ধে নিপতিত হতে পারতো। কিন্তু প্রফেসর এরবাকান ছিলেন তুরস্কের রাজনীতিতে অসীম ধৈর্য্যশীল একজন মানুষ। সংঘাত ও মেরুকরণকে তিনি সর্বদাই অপছন্দ করতেন। তাই সেসময় সকলকে ধৈর্য্য ধারণ করতে বলেন তিনি।

এরপর ১৯৯৮ সালে রেফাহ পার্টিকে নিষিদ্ধ করে তুরস্ক সরকার। এরপর তিনি গঠন করেন ফজিলত পার্টি। ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রধান বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করে ফজিলত পার্টি। ২০০০ সালে ফজিলত পার্টিকে তুরস্ক সরকার নিষিদ্ধ করলে ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন “সাদেত পার্টি” যার উপর এখনো পর্যন্ত কোন ধরণের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি তুরস্ক সরকার। প্রধান বিরোধীদল ফজিলত পার্টি নিষিদ্ধ হলে সেসময় হঠাতই ফজিলত পার্টির দ্বিতীয় সারির নেতা আব্দুল্লাহ গুল এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ফজিলত পার্টি পরবর্তী সাদেত পার্টিতে যোগ না দিয়ে, সেক্যুলারিজমকে আদর্শ ধরে এবং ইসরাইল ও আমেরিকাকে নিজেদের বন্ধু ঘোষণা দিয়ে গঠন করে একে পার্টি। পার্টি গঠনের মাত্র ২ বছরের মাথায় ক্ষমতায় যায় একে পার্টি। নতুন গঠিত


একটি দলের মাত্র ২ বছরের মাথায় এককভাবে সরকার গঠন অনেকের কাছে আজও এক বিস্ময়ের ব্যাপার।

৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সব মিলিয়ে প্রফেসর এরবাকান মাত্র ২৩ বছর রাজনীতি করেছেন সক্রিয়ভাবে। আর বাকি ১৭ বছর হয় জেলে ছিলেন অথবা ছিলেন রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ। মৃত্যুর পূর্বে তাকে আবারও সাদেত পার্টির প্রধান করা হয়।

যে ঘুম-ভাঙ্গা সিংহের গর্জনে বাতিল শক্তি সদা-কম্পমান থাকতো, সে সিংহ-পুরুষ ২০১১ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারী এই দুনিয়া ছেড়েছিলেন আর রেখে গিয়েছেন তার স্মৃতি ও প্রেরণার কিছু রঙের তুলি।

তার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ তুরস্কের জনগণ প্রকাশ করে তার জানাযায়। তুরস্কের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ যে জানাযা অনুষ্ঠিত হয় সেটি হচ্ছে প্রফেসর এরবাকানের জানাযা।

ক্ষমতায় ছিলেন সব মিলিয়ে মাত্র পাচ বছর। কিন্তু এই পাচ বছরের শাসনামলে তিনি দেখিয়ে গিয়েছেন কীভাবে পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে লড়তে হয়, কীভাবে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়।

তুরস্কের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন ন্যায়বিচার ও আদালতের প্রতীক। তিনি ছিলেন ভদ্রতা ও বিনয়ের অনন্য এক উদাহরণ। ডানপন্থী ও বামপন্থীদের সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। তাদের আস্থার জায়গা ছিলেন প্রফেসর এরবাকান। তুরস্কের রাজনীতিতে ভারসাম্যের প্রতীক ছিলেন তিনি।

প্রফেসর এরবাকানের সমগ্র জীবন হচ্ছে তুরস্কে সত্যিকার মুসলিমদের ক্ষমতার আসনে সমাসীন হওয়ার জীবনী। তার জীবনী হচ্ছে সেক্যুলার তুরস্কের বুকে ইসলামের পতাকাকে উড্ডীন করে তোলার জীবনী।

প্রফেসর এরবাকানের জীবনী হচ্ছে পুরো তুরস্কের শিল্প বিপ্লবের জীবনী। তার জীবনী হচ্ছে পাহাড় সমান বাধাকে উপেক্ষা করে, সেনাবাহিনী কর্তৃক ক্যু দ্বারা নির্বাসিত হয়েও পুনরায় তুরস্কের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার জীবনী।

আজ তুরস্কের রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামী আবহাওয়ার যে সামান্য সুবাতাস দেখা যাচ্ছে তার পুরো কৃতিত্বই হচ্ছে তুরস্কের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও ইসলামী আন্দোলন মিল্লি গরুশ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর এরবাকানের।

১৯২৬ থেকে ২০১১ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত নাতিদীর্ঘ তার এই জীবনে বাধা-বিপত্তিকে মাড়িয়ে পুরো তুরস্কের মাটিতে পুনরায় ইসলামী জাগরণের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ এককভাবে অত্যন্ত সফলতার সাথে।

সুদানের ইসলামী আন্দোলনের সংগ্রামী নেতা হাসান তুরাবীর তাই বলেছিলেন- “পাশ্চাত্য সভ্যতা ও দর্শনের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত আন্দোলন মিল্লি গরুশ।”

তার লক্ষ্য ছিলো জায়োনিজমের হাত থেকে উম্মাহকে রক্ষা করা এবং একটি বাসযোগ্য পৃথিবী প্রতিষ্ঠা করা। সে জন্য তিনি কাজ করে গিয়েছেন আজীবন।

প্রফেসর এরবাকানের বিখ্যাত উক্তি দিয়েই শেষ করতে চাই-
“একটি ফুল দিয়ে কখনো বসন্ত হয় না, তবে প্রতিটি বসন্তই একটি ফুল দিয়ে শুরু হয়।”

-আবিদ ইহসান