মুসলিম পোর্ট

ভারতীয় উপমহাদেশে ৭০০ শত বছর ন্যায়ভিত্তিক শাসনের আনুষ্ঠানিক পতন হয়েছিলো আজ। যে দিনটিকে আমরা পলাশী দিবস হিসেবে স্মরণ করে থাকি। আদতে, পালাশীর আম্রকানন তো একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এই আনুষ্ঠানিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে পাঠ করার চেয়ে এর পেছনের কারণ গুলোকে সঠিকভাবে পাঠ, বিশ্লেষণ ও সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাই সময়ের সবচেয়ে বড় কাজগুলোর একটি।
কেননা, এই গুরুত্বপূর্ণ দিবসটিকে ভারতীয় উপমহাদেশে স্মরণ করা হয়ে থাকে শুধুমাত্র একটা ক্ষমতার পালাবদলের যুদ্ধ হিসেবে। যে যুদ্ধের পরাজিত নায়ক নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা এবং ভিলেন চরিত্রে আছে লর্ড ক্লাইভ। সেই সাথে, আয়ুষ্কালে ‘বিশ্বাসঘাতক’ শব্দের প্রতিক এই অঞ্চলে “মীর জাফর” বৈ কি!
কিন্তু, পলাশীর উত্তর ও পূর্ব ঘটনা প্রবাহ ও ইতিহাস বরাবরই থেকে যায় আলোচনার বাইরে। বস্তুতঃ
৭০০ বছর মুসলমানদের নেতৃত্বে সাজানো উপমহাদেশ বৃটিশ জায়নাবাদীদের কর্তৃক দখলের মাত্র ১৩ বছরের মাথায়ই শুরু হয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ! এক বছরে শুধু বাংলা অঞ্চলেই এক কোটি লোক মারা যায়। ১৭৭২ সালে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেসটিংস তার চিঠিতে নিজেই সাক্ষ্য দিয়েছেন, শুধু বাংলা প্রদেশেই এক তৃতীয়াংশ মানুষ দুর্ভিক্ষপীড়িত হয়ে মারা গিয়েছিলো।
কিন্তু কেন এই ভরাডুবি?
এই বিষয় গুলোর যথার্থ পর্যালোচনাই এখন ভারতীয় উপমহাদেশের জন্য সবচেয়ে জরুরি অধ্যায়।

আমাদের মনে রাখতে হবে,
পলাশী শুধু একটি যুদ্ধে পরাজয়ের বাস্তবতা নয়, বরং একটি সমৃদ্ধশালী জাতিসত্ত্বার পতনের ইতিহাস।

পলাশী শুধু বাংলার পতনই নয়, একই সাথে সমগ্র ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য শোষণের ইতিহাসের সূচনা বিন্দু।

পলাশী শুধু নবাব সিরাজুদ্দৌলার পতনই নয় বরং ৭০০ বছরের ইসলামী সভ্যতার পরাজয়ের শোকগাথা।

পলাশীতে রবার্ট ক্লাইভের বিজয় শুধু উপমহাদেশে ইংরেজদের শাসনই শুরু করেনি, পাশাপাশি তা যায়নবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদের উভ্যুদয়ের উপাখ্যানও বটে।

পাশাপাশি বৃটিশ জায়নবাদী দর্শন ও সভ্যতা, তাদের উপমহাদেশীয় ব্রাহ্মণ্যবাদ প্রজেক্ট, আমাদের পতনের কারণ, অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও ইসলামী সভ্যতার শ্রেষ্ঠত্ব ভালোভাবে তুলে ধরাই সময়ের সবচেয়ে বড় কর্ম।
আর হারানো সভ্যতার অভিজ্ঞতা, ৩০০ বছরের পতনকালীন শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে নতুন সভ্যতা বিনির্মাণ-ই হোক আজকের শপথ।