উন্নয়নশীল আটটি মুসলিম প্রধান দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সহযোগিতার লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে তুরস্ক, মিশর, ইরান, নাইজেরিয়া, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সমন্বয়ে D-8 প্রতিষ্ঠা করা হয়। গোটা দুনিয়ার ১৪ শতাংশ মানুষের বসতিপূর্ণ এ আটটি দেশ বিশ্বমানচিত্রে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, দক্ষ লোকবল এবং নিজস্ব প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পদেও তেমন সমৃদ্ধ ।
মানবসভ্যতার ইতিহাসে একমাত্র যেই ব্যবস্থা গোটা মানবতাকে মুক্তি দিতে সক্ষম হয়েছিলো সে ইসলামী সভ্যতাকে তার পূর্বের অবস্থানে আসীন করবার জন্যই মূলত এ সংগঠনটির সূচনা। দুনিয়ায় প্রকৃতপক্ষেই হক্বের উত্তরসূরী কারা? কারা গোটা মানবতাকে নিজেদের আমানত মনে করে শত শত বছর দুনিয়াতে ন্যায়ভিত্তিকভাবে খিলাফতের দায়িত্ব পালন করে গেছে? D-8 মূলত সে সব বিষয়ে আমাদেরকে পুনর্জাগরিত করার জন্য মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
একইসাথে, গত কয়েক শতাব্দী পূর্ব থেকে আমাদের মুসলিম অঞ্চলগুলোতে পাশ্চাত্যের নিকৃষ্টতম কলোনি স্থাপন, শোষণ, মহাজুলুমের অপকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে পর পর দুটি বিশ্বযুদ্ধে কোটি কোটি মানুষের রক্তের উপর বসে নতুন এক জুলুমপূর্ণ দুনিয়ার রূপরেখা প্রণয়ন, জাতিরাষ্ট্রের বিষাক্ত ছোবলে ছিন্ন-ভিন্ন করে দেয়ার মাধ্যমে আমাদের হাজার বছরের মর্যাদাপূর্ণ খেলাফতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা, পরবর্তীতে ইতিহাসকে নিজেদের মতো করে সাজানোর মাধ্যমে অদ্যাবধি আমাদের সন্তানদের হীনমন্য জাতিতে পরিণত করে রাখা সহ ইত্যকার মহাজুলুমের বিরুদ্ধে ইসলামী সভ্যতার পবিত্র রক্তধারণকারীদেরকে একটি ছাউনির নিচে এনে গোটা দুনিয়ার সামনে আবার মুক্তির ইশতেহার প্রদানকারী, উম্মাহর জন্য রেখে যাওয়া উস্তাজ এরবাকানের এ উত্তম মিরাসের নাম-ই হলো Developing Eight (D-8)।
D-8 এর আবির্ভাব শুধুমাত্র একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত কোনো সংগঠনের আবির্ভাব নয়। এর আবির্ভাবে একইসাথে ধ্বনিত হয়- নিকৃষ্টতম কলোনিয়াল যুগের ইতি আর শোষণের শক্ত প্রতিরোধ। এসব বিষয়কে সামনে রেখে প্রকৃতপক্ষে মানুষের মুক্তিতে ওয়াদাবদ্ধ থাকার জন্যই সকল দলমত নির্বিশেষে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ, সেখানে এর গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন করাই বেমানান ।
এতদ্বসত্ত্বেও, মুক্তির এ ভরসাস্থলকে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাদের চোখগুলো সাম্রাজ্যবাদীদের G-8, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ন্যাটোর মতো সংগঠনসমূহের দিকে নিবদ্ধ করা উচিত। যেগুলো আমাদের ভাইদের রক্তকে পুঁজি করে তাদের শোষণের মাত্রাকে বৃদ্ধি করার জন্যই কাজ করে যাচ্ছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সোভিয়েত নেতা স্ট্যালিন ক্ষমতায় থাকার দরুন সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্নায়ুযুদ্ধ (Cold war) কেন্দ্র করে গড়ে উঠা পশ্চিমা গোষ্ঠীর ‘নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন’ (NATO) ও সমসাময়িক কালেই। প্রাচ্যের চায়না ও সোভিয়েতের মধ্যকার ওয়ার্সো চুক্তি (Warsow Pact), যার সবগুলোই মানবতার জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসেবে প্রমাণিত।
বলাবাহুল্য, সোভিয়েতের পতনের পর NATO টিকে থাকার প্রশ্ন উঠলে সে সময়কার বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার কর্তৃক মুসলিমদের আল্টিমেট শত্রু বানিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের ঐক্য ধরে রাখা ও NATO কে টিকিয়ে রাখার বক্তব্য থেকে একথা সহজেই অনুমেয় NEW WORLD ORDER মুসলিমদের জন্য কতটা কল্যাণ বয়ে আনতে পারে!
ফলাফল- কথিত এ কল্যাণের অংশ হিসেবেই আজ আমার কুদস, আমার সিরিয়া, আমার লেবানন, আমার ইরাক, আমার বসনিয়া, আমার হার্জেগোভিনা, আমার কাশ্মীর, আমার আরাকান ও আমার উইঘুর-সহ গোটা দুনিয়ার আকাশে বাতাসে আমার মজলুম ভাই বোনদের আত্মচিৎকার মুক্তির আবেদন করে চলেছে।
দুর্ভাগ্যবশত, সে আত্মচিৎকার খনিজে ডুবে মুসলিম দেশসমূহের তথাকথিত সংগঠন OIC শুনতে বরাবর-ই ব্যর্থ হচ্ছে।
উম্মাহর এ পরিস্থিতিতে, যখন পৃথিবীর তাবৎ বস্তুকণা, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পতঙ্গ, পক্ষাকূল, সাথে গোটা মানবজাতি, এমনকি ছোট্ট পরমাণুর অতিক্ষুদ্র ইলেকট্রন থেকে শুরু করে সাগরের সুবিশাল তিমি পর্যন্ত সকলেই মুসলিমদের দিকে তাকিয়ে মুক্তির প্রহর গুনছে, ঠিক সে সময়-ই D-8 থেকে D-60 গঠনের মেগা প্রস্তাবনা উম্মাহর জন্য সাহারা মরুভূমিতে মিষ্টি পানির কূপ খুঁজে পাওয়ার সমতুল্য বৈ কী হতে পারে?
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে D-8 এর কর্মতৎপরতা মুসলিমদের জন্য কতটা কার্যকরী হতে পারে তা শুধুমাত্র D-8 ভুক্ত আট দেশের ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনা করলেই অনুমান করা যায়।
ইউরোপের জন্য বিষফোড়া খ্যাত চানাক্কাল ও বসফরাস প্রণালীর মালিক, একইসাথে- কয়েকশত বছরের ইসলামী খেলাফতের রাজধানীর নাম- তুরষ্ক। ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগস্থলে থাকায় বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রও যাকে বলা হয়। এমনকি, ইউরোপের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী রাষ্ট্র রাশিয়ার বাণিজ্য পথ কৃষ্ণসাগরের ক্রেচ প্রণালীও তুরস্কের সার্বভৌমত্বেরই অংশ।
একসময় দুনিয়ার ৭০% অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণকারী সুয়েজ ক্যানেলের অধিকারী, আরব দেশসমূহের রাজধানী খ্যাত, নীলনদের অববাহিকায় গড়ে উঠা উত্তর আফ্রিকার সুসমৃদ্ধ দেশটির নাম- মিশর। উসমানী খেলাফতের সময় নির্মিত লোহিত ও ভূমধ্যসাগরের সংযোগস্থলে অবস্থিত সুয়েজ ক্যানেলের গুরুত্ব হযরত উমর (রা.) এর সময়কাল থেকেই সমভাবে প্রযোজ্য। এমনকি ক্যানেলটি নির্মাণের কাজও আমিরুল মুমিনিন নিজেই শুরু করেছিলেন। ইউরোপ থেকে এশিয়ার একমাত্র বাণিজ্যিক রুটও এটিই, যা ছাড়া লোহিত সাগরের বাব-আল মান্দেবও বলতে গেলে অর্থহীন।
আজকের শোষণপূর্ণ দুনিয়ায় সাম্রাজ্যবাদীদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে যে রাষ্ট্রটি দিনের পর দিন পারমাণবিক শক্তিবর্ধন থেকে শুরু করে নিজস্ব অর্থনীতিতে শক্তিশালী হয়েই চলেছে, সে দেশটির নাম- ইরান। একই সাথে মুসলিম বিশ্বের জন্যও ভৌগলিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূখণ্ডের মালিক এ দেশটি। উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর, দক্ষিণে পারস্য উপসাগর, পশ্চিমে ইরাক, তুরস্ক, আরমেনিয়া ও আজারবাইজান এবং পূর্বে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পরমাণু শক্তিধর দেশ পাকিস্তান ও খনিজ সম্পদে ভরপুর আফগানিস্তান ও তুর্কেমেনিস্তান। সুতরাং ভৌগলিক বিশ্লেষণে সহজেই অনুমেয়, মুসলিম উম্মাহর অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্রটি বিশ্বমানচিত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করে আছে।
প্রশান্ত মহাসাগরের বাণিজ্যিক কেন্দ্রবিন্দু, নিজস্ব বাস্তুসংস্থান ও খনিজ তেলে সমৃদ্ধ ১৩ শতাব্দীতে উমাইয়া খলিফা বিজিত অঞ্চলটির নাম- নাইজেরিয়া। পর্তুগিজ ও ফরাসিদের নিকৃষ্টতম শোষণের আগ পর্যন্ত আফ্রিকার যে সব অঞ্চল দুনিয়ার বুকে সুসমৃদ্ধ অর্থনৈতিক ভিত্তি স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলো, নাইজেরিয়া তাদেরই একটি অংশ। এমনকি, বর্তমানেও গোটা আফ্রিকার সাথে নাইজেরিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক সবচেয়ে উন্নত।
বর্তমান দুনিয়ার উন্নত মুসলিম দেশসমূহের তালিকা করলে সর্বাগ্রে উঠে আসবে মালেশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার নাম। জাপান, কোরিয়া, চীন বা থাইদের সবধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়া সম্ভব যদি ইন্দোনেশিয়া ও মালেশিয়ার দ্বৈত মালিকানায় থাকা মালাক্কা প্রণালীতে তাদের প্রবেশ বন্ধ করা হয়। বুঝাই যাচ্ছে দেশ দুটি কত গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনাপূর্ণ ভূখণ্ডের মালিক।
দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের কথা আলোচনার অপেক্ষা রাখে না। ভারী শিল্পায়নের দারুন সক্ষমতা, উন্নত কৃষি সম্ভাবনা, সমৃদ্ধ সামরিক শক্তি, কী নেই দেশটির!
সবশেষ, বাংলাদেশের উর্বর কৃষি জমিতে সাতশত বছরের উন্নত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কার না জানা? দেশটিতে নিকৃষ্টতম বৃটিশ শোষণের কয়েক বছর পূর্বের জিডিপি পরিসংখ্যানও যদি বিবেচনা করি- ২৩% নিয়ন্ত্রণ শুধু এ বাংলা অঞ্চলের-ই ছিলো। যেখানে বর্তমান দুনিয়ার কথিত সুপার পাওয়ার সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার ১৮%।
সর্বোপরি, আমাদের এত সম্ভাবনার সাথে আরেকটি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো- আমাদের আখলাক এবং আমাদের আছে আধ্যাত্মিকতা। আমরা জানি, আমাদের দ্বীন মানবতা কেন্দ্রিক, আমাদের রাসূল রাহমাতাল্লিল আলামীন। যে শক্তিটি দুনিয়ার আর কারো নেই।
সুতরাং, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে D-8 শুধুমাত্র মৌখিক বুলি-ই নয়, বরং গোটা মানবতার মুক্তির ইশতেহার।
কিন্তু অপ্রত্যাশিত সত্য হচ্ছে, মুসলিম উম্মাহকে সাম্রাজ্যবাদী ও জায়োনিস্ট শক্তি থেকে মুক্ত করা ও সর্বোপরি গোটা দুনিয়াকে শোষণ থেকে মুক্ত করার মহান উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটির অগ্রগতি আমার মুসলিম ভাইদের কারণেই বাঁধার সম্মুখীন। ১৯৭৬ সালে OIC সম্মেলনে উত্থাপিত ইসলামিক ইউনিয়নের প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যাত হয়। সে ধারাবাহিকতায় আজও আমাদের ভাইয়েরা নিজেদের রক্তের সাথে বেইমানি করেই চলছে। সামান্য ক্ষমতার লোভে নিজেদের বিলিয়ন ডলারের সম্পদ সস্তা দরে বিক্রি করছে, নিজেদের খনিজকে নিজেদের ভাইদের হত্যার অস্ত্র বানানোর জন্য ব্যবহার করছে, পাশ্চাত্যের গোলাম হয়ে উম্মাহর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে।
তাদের মনে রাখা উচিত, সে সকল অঞ্চলের খনিজ গ্যাস, তেল, বন্দর, নগরসহ প্রতিটি বালুকণাতে আমার কুদস, বাবরি মসজিদসহ সকল শোষিত অঞ্চলের প্রতিটি মুসলিম সত্তার সমঅধিকার রয়েছে।
তবে সন্দেহাতীতভাবেই, আল্লাহর ওয়াদার সামনে এ সকল বাঁধাসমূহের বিন্দু মাত্রা মূল্যও নেই। কেননা, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে D-8 মূলত মহান আল্লাহর-ই দ্বীনের প্রতিনিধি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
সুতরাং, সূরা আনফালের ৬১ ও ৬২ নং আয়াত আমাদের মনোবলকে আরও হাজার গুণে সম্প্রসারিত করছে-
وَإِنْ جَنَحُوا لِلسَّلْمِ فَاجْنَحْ لها وَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ – وَإنْ يُرِيدُوا أَنْ يَخْدَعُوكَ فَإِنَّ
حَسبَكَ اللهُ هُوَ الَّذِي أيْدَكَ بِنَصْرِهِ وَبِالْمُؤْمِنِينَ
“আর যদি তারা সন্ধির দিকে ঝুঁকে পড়ে তাহলে তুমিও সন্ধির দিকে ঝুঁকবে এবং আল্লাহর উপর নির্ভর করবে । নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। তারা যদি তোমাকে প্রতারিত করতে চায় তাহলে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি তোমাকে স্বীয় সাহায্য ও বিশ্বাসীগণ দ্বারা শক্তিশালী করেছেন।” (সূরা আনফাল : ৬২-৬২)
উল্লেখিত আয়াত দু’টিতে আমাদের রব খুব স্পষ্টভাবেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আমাদের ডিলিংস ওয়ে কেমন হতে পারে সেদিকে ইঙ্গিত করছেন। এর-ই প্রেক্ষিতে যদি আমরা D-8 এর মূলনীতিসমূহকে বিবেচনায় আনি, যা সংগঠনটির লোগোর উপর ৬ টি তারকা হয়ে মিটিমিটি আলো দিয়ে যাচ্ছে-
১. যুদ্ধ নয়, শান্তি।
২. দ্বন্দ্ব নয়, সংলাপ । ৩. শোষণ নয়, সহোযোগিতা।
৪. দ্বৈতনীতি নয়, আদালত ।
৫. আহমিকা নয়, সমতা। ৬. বলপ্রয়োগের পরিবর্তে মানবাধিকার, স্বাধীনতা ।
এ পর্যায়ে আমি আমার সন্তানদেরকে D-8 এর উত্থাপিত যৌক্তিক ইশতেহারের পক্ষে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্পর্কে অবহিত করতে চাই।
গোটা দুনিয়ার ১৫% তেল ও ২৩.২% গ্যাস সমৃদ্ধ এ আট দেশে বর্তমান বিশ্বের স্ট্র্যাটিজিক পদার্থ রোবন ও ক্রোমিয়ামেরও প্রচুর মজুদ রয়েছে। এছাড়াও দুনিয়ার মধ্যভাগের সুবিশাল এক ভূখণ্ডসহ মুক্তির এ সংগঠনটির শুধু আর্ট দেশেই রয়েছে সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ, আওরঙ্গজেব ও আফ্রিকার কিলওয়া সালতানাতের সম্মানিত উত্তরসূরীগণ, পরিসংখ্যানে যা
গোটা দুনিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৬% এরও অধিক
একইসাথে, মুসলিম দেশসমূহের বিশ্ব জিডিপি পরিসংখ্যানে ৬০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে D-8 ভুক্ত এ আট দেশ। মুসলিম উম্মাহর বৈদেশিক বাণিজ্যের ৫৮ শতাংশের নিয়ন্ত্রকও এ আট দেশ। OIC -এর অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহের ৬৫% জনশক্তিও এ আটটি দেশের মধ্যেই।
এবার যদি এ আট দেশের সম্মিলিত জিডিপির কথা বলি, বিশ্ব অর্থনীতির ৫% অর্থাৎ ৪.৯ ট্রিলিয়ন ডলার হলেও বিশ্ববাণিজ্যের ১৬.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের অংশীদার এ আট দেশ। যদি একসাথে কাজ করা সম্ভব হয়, গোটা দুনিয়ার ৭০% অর্থনীতি শুধু মুসলিমরাই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। কিন্তু বর্তমানে, নিজেদের মধ্যকার ব্যবসার পরিমাণ ১২০ বিলিয়ন ডলার। যদি এটি বৃদ্ধি করা না হয়, শক্তিশালীরূপে নিজেদের অবস্থান তৈরি করা কখনোই সম্ভব হবেনা।
D-8 প্রতিষ্ঠিত হবার পরই প্রথম পদক্ষেপ ছিলো, সংশ্লিষ্ট আট দেশের মধ্যকার এ অসম অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
সে পদক্ষেপের অংশ হিসেবে, ১৯৯৭ সালে তুরষ্কে উৎপন্ন হেলিকপ্টার লাহোরে বিক্রি করা হয়। ইসলামাবাদে D-8 এর ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারও প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তী পরিকল্পনাসমূহের অন্যতম হলো- অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহের সমন্বয়ে D-60 গঠন করা। যাদের পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে-
• মুসলিমদের জন্য আলাদা জাতিসংঘ।
• একক মুদ্রাব্যবস্থা (ইসলামী দিনার)।
• মুসলিম দেশসমূহের মধ্যকার কমন বাজার ব্যাবস্থা। • অভ্যন্তরীণ সাংস্কৃতিক সংগঠন।
• সকল মুসলিম দেশের সমন্বয়ে অভ্যন্তরীণ সামরিক জোট।
• প্রযুক্তিগত সাহায্য সংস্থা। • গবেষণা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা।
১৯৭৭ সালে ইসলামী দিনারের ধারণা জাতির সামনে তুলে ধরার সময় উস্তাদ এরবাকান নিজের বানানো একটি দিনারের কয়েন হাতে নিয়ে বলেছিলেন- এটি একটি এ্যাটোম বোমের চেয়েও শক্তিশালী। সে সময়ে আমাদের অঞ্চলসমূহের নেতাগণ এ কথায় পূর্ণ ভরসা না করলেও বর্তমানে সকলেই সাম্রাজ্যবাদের শোষণের অন্যতম ডলার পন্থার বিপরীতে দিনার ব্যাবস্থার প্রয়োজনীয়তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
একইসাথে, দুঃখজনক ব্যাপার হলো- ২০০২ সাল পরবর্তী সময় থেকে D-8 এর এ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের পরিবর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়ছে তুরস্ক সরকার, সংগঠনটির (D-8) মডারেটরের ভূমিকা পালন করার কথা যেই রাষ্ট্রের। যেখানে, D-8 প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটির প্রতি সকলে সমানভাবে গুরুত্ব জোরদার করলে ইউরোপ ও এশিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আজ মুসলিমদের হাতের মুঠোয় থাকতে পারতো।
পরিশেষে, আজকের দুনিয়ার আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মানুষের মুক্তির জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ যদি মুসলিমরা নিতে চায়, D-8 বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। আমাদের মহান রব আমাদেরকে তার দুনিয়ায় একমাত্র প্রতিনিধিত্ব করার মহান লক্ষ্যেই পাঠিয়েছেন, যার দরূণ- আমাদের অঞ্চলসমূহে দুনিয়ার সিংহভাগ খনিজ দান করেছেন, ভারী শিল্পায়নের সক্ষমতা দিয়েছেন, অসাধারণ কৃষি সম্ভাবনা দিয়েছেন, যেগুলো শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি ভূখণ্ডের সম্পদ নয় বরং গোটা মুসলিম উম্মাহর সম্পদ, বিশেষ করে আমার মজলুম ভাই বোনদের পবিত্র হক।
এমনকি আল্লাহ প্রদত্ত সবচেয়ে বড় নেয়ামত; শত্রু-মিত্র পার্থক্য ও আল্লাহর সৃষ্টিতত্ত্বের গভীরতা পর্যবেক্ষণ করবার জন্য আকল দান করেছেন।
উল্লেখিত সকল কথার উর্ধ্বে, আমাদের মহান রব নিজে আমাদের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পদ্ধতি শিক্ষা দান করেছেন। সূরা ফিল, সূরা আনআমের ৮১-৮৬ নং আয়াত, সূরা আনফালের ৬১-৬২ নং আয়াতসমূহ যার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত ।
একইসাথে, তিনি আমাদের আখলাকী ভিত্তি স্থাপনের মতো ঈমানী দৃঢ়তা দান করেছেন। আধ্যাত্মিকতার মতো শক্তিশালী নেয়ামত দান করেছেন। যে শক্তি উপলব্ধি করার জন্য নিজেদের চোখকে নিজেদের রক্তের দিকে সম্প্রসারণ করাই যথেষ্ট। কেননা, যে পূর্বসূরিদের রক্ত ধারণ করে আমরা আমাদের আমানত দুনিয়ায় বিচরণ করছি, সে দুনিয়ায় আমাদের পূর্বসূরীগণ আখলাক ও আধ্যাত্মিকতাকে কেন্দ্র করেই মরক্কোর রাবাত থেকে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা পর্যন্ত হাজার বছর ন্যায়ভিত্তিকভাবে গোটা দুনিয়াকে পরিচালনা করে গেছেন।
মূল- আব্দুল হাদী আওয়াং
অনুবাদ- মুশফিকুর রহমান