ইয়েমেন আরব মালভূমির দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত একটি দেশ। ইয়েমেনের ইতিহাস তিন হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। দেশটিতে আছে অসংখ্য পর্বত, অভ্যন্তরে পশ্চিম-দক্ষিণ ও পূর্বে সরু উপকূলীয় সমভূমি এবং উত্তরে সৌদি আরবের সঙ্গে সীমান্তে মরুভূমি দ্বারা বেষ্টিত। ইয়েমেন তার গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য হাজার বছর ধরেই বিভিন্ন রাজ্য দ্বারা শাসিত হয়েছে। বাণিজ্য প্রসারে ইয়েমেনের লোহিত সাগর রুট আদি থেকেই গুরুত্বপূর্ণ।
ইয়েমেনের প্রাচীন ইতিহাস বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ আরব অঞ্চলে অবস্থিত দেশটির নিকট প্রাচ্যের সভ্যতা প্রাচীনতম কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি। দেশটির অপেক্ষাকৃত উর্বর ভূমি এবং আর্দ্র জলবায়ুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত একটি স্থিতিশীল জনসংখ্যাকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে। তাই তো প্রাচীন গ্রিক ভূগোলবিদ টলেমি দ্বারা স্বীকৃত এর বৈশিষ্ট্য। যিনি ইয়েমেনকে ইউডাইমন অ্যারাবিয়া (লাতিন ভাষায়) হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। যার অর্থ ভাগ্যবান আরব বা সুখী আরব। অর্থাৎ, আরবদের সুখী নগরী।
খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম ও খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে ছয়টি প্রধান রাজ্য আধিপত্য বিস্তার করেছিল এ অঞ্চলে। তারা একে অন্যের মিত্র ছিল এবং প্রধানত মসলা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত মিলেমিশে। তবে এ বাণিজ্য নিয়েই আবার যুদ্ধ বেঁধে যেত। এদের মধ্যে সাবা, মায়িন, কাতাবান, হাদরামাউত, আওসান রাজ্য ও হিমারীয় রাজ্য ছিল। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের আগমন ঘটে এবং ইয়েমেন মুসলিম রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে। এর পূর্ব পর্যন্ত এ ছয় প্রধান রাজ্যের আধিপত্যের পাশাপাশি আলাদা আলাদা ধর্ম ছিল ইয়েমেনজুড়ে।
সাবায়িয়ান নিয়ে জানতে প্রাচীন দক্ষিণ আরবের সংস্কৃতি অধ্যয়ন, প্রত্নতত্ত্বের ছোট শাখার অন্তর্গত বিষয়গুলোও জানতে হবে। কারণ ইউরোপে প্রাচীন দক্ষিণ আরব প্রাচ্যের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি সময় ধরে অজানা ছিল সাবায়িয়ানরা। ১৫০৪ সালে একজন ইতালীয় নাগরিক নাম লোডোভিকো ডি ভার্থেমা প্রথম বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন। অন্যদিকে জোহান ডেভিড মাইকেলিস (১৭১৭-৯১) এবং কার্স্টেন নিবুহর (১৭৩৩-১৮১৫) উভয় অবদান রেখেছিল একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায়। যার মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে অন্য ইউরোপীয় ভ্রমণকারীরা শতাধিক শিলালিপি নিয়ে গবেষণা করেছেন, যা নিয়ে রীতিমতো তদন্ত শুরু হয়। এক পর্যায়ে ফরাসি জোসেফ হ্যালেভিল আঠারো শতকে এবং অস্ট্রিয়ান এডুয়ার্ড গ্লেসার মিলে এক পর্যায়ে ২ হাজার ৫০০ শিলালিপি ইউরোপে অনুলিপন করেছেন। যার জন্য দক্ষিণ প্রাচীন আরবীয় ভাষা ও ইতিহাস বিশ্লেষণ শুরু করেন। এপ্রিগ্রাফিক্যাল উপাদানের ভিত্তিতে এটি করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অবশেষে ইয়েমেনে খননকাজ চালানো হয়। ১৯২৬ সাল থেকে সিরিয়ান ও মিসরীয়রাও প্রাচীন দক্ষিণ আরবে গবেষণায় অংশ নিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রাচীন ইয়েমেনের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক ব্যস্ততার একটি নতুন পর্যায়ে নিয়ে আসে। ১৯৫০-৫২ সালে আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর দ্য স্টাডি অব ম্যান ওয়েন্ডেল ফিলিপস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। যিনি তিমনাহ ও মারিব অঞ্চলে বড় আকারের খননকাজ পরিচালনা করেন।
এছাড়া শাবওয়াহ ও অন্যান্য স্থানে ১৯৭৫-৮৭ সালের ফরাসি খনন, প্যালিওলিথিক অবশেষে ইতালীয়দের তদন্ত এবং মারিব এলাকায় জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক ইনস্টিটিউটের কাজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল। আসিরীয়, ফার্সি ও আরবি উৎসের কিছু উল্লেখ ছাড়াও হিব্রু বাইবেল ও প্রাচীন দক্ষিণ আরবীয় শিলালিপিগুলো ছিল মূল উৎস। শিলালিপিগুলোর প্রধান অংশটি সাবা ও হিমারীয় রাজ্য থেকে এসেছে। কিন্তু স্বাধীন রাজ্য হিসেবে খুব বেশিদিন এটি স্থায়ী হতে পারেনি। ইয়েমেনকে ঘিরে প্রাচীনকাল থেকেই যে আগ্রহ ছিল তা বিদ্যমান এ শিলালিপিগুলো থেকে জানা যায়। পরপর এতগুলো সাম্রাজ্যের শাসন তাই প্রমাণ করে।
প্রথমেই জানা যায় সান রাজবংশের কথা। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীর দিকে সান রাজবংশ ইয়েমেনে তাদের আধিপত্য বিস্তার শুরু করেছিল। এর পেছনের কারণগুলো ছিল বাণিজ্যিক আধিপত্য বিস্তার। সাম্রাজ্যের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে লোহিত সাগরকেন্দ্রিক বাণিজ্যিক আধিপত্য কায়েম করা।
সাবায়িয়ানদের শাসনামলে বাণিজ্য ও কৃষি অনেক সমৃদ্ধ হয়েছিল। সাবা রাজ্যটি এখন বর্তমান সৌদি আরবের আসির অঞ্চলে অবস্থিত এবং এর রাজধানী ছিল মারিব। বর্তমান ইয়েমেনের আধুনিক রাজধানী সানার কাছে এটি অবস্থিত। আরব ঐতিহ্য অনুসারে, নুহ (আ.)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেম সানা শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যাকে সাম শহরও বলা হয়, যার অর্থ প্রাচীন শহর।
সাবায়িয়ানদের আধিপত্য ছিল ৮০০-৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। দক্ষিণ আরবে উৎপত্তি হওয়া প্রাচীনতম ঐতিহাসিক সূত্রের সময় অঞ্চলটি সাবা রাজ্যের অধীনে ছিল, যার কেন্দ্রগুলো বর্তমান সারার আগে সিরওয়াহ ও মারিবে অবস্থিত ছিল। তৎকালীন দক্ষিণ আরবের রাজনৈতিক মানচিত্রে বেশ কয়েকটি বৃহত্তর রাজ্য ও উপজাতি অঞ্চলও ছিল। যেমন আওসান, কাতাবান ও হাদরামাউত ছিল অন্যতম।
ইসা অমর আতার যিনি সাবার রাজা ছিলেন সে সময়। তিনি কাতাবান ও আল-জাওফের কিছু এলাকাকে তখন সাবার সঙ্গে যুক্ত করেন। তার কিছু সময় পরে অঞ্চলগুলো প্রথম কারিবিল আতারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে সাবা। তিনি খুব সম্ভবত রাজ্যটি সপ্তম শতাব্দীজুড়ে শাসন করেছিলেন। আধুনিক দক্ষিণ আরবে অবস্থিত নাজরান ও লোহিত সাগরের বাব আল-মান্দেব পর্যন্ত পুরো অঞ্চল তিনি শাসন একত্র করেন। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে সাবার উত্তর-পশ্চিমে আল-জাওফ নদীকে কেন্দ্র করে মিনিয়ান রাজ্যের গড়ে ওঠা ছিল আতারদের জন্য বিপজ্জনক। দ্বিতীয় ইসা আমর বাইন মারিবে একটি বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন। তিনি দক্ষিণ আবরের উত্তরাঞ্চল পুনরুদ্ধারে সফল হয়েছেন। অষ্টম ও চতুর্থ শতকে ইথিওপিয়ায় সাবায়িয়ানদের আধিপত্য বেড়ে যায়।
রাজ্যের সাফল্য গড়ে উঠেছিল চাষাবাদ, সুগন্ধি জাতীয় পণ্য ও মসলা ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে। এগুলো ভূমধ্যসাগর, ভারত ও আবিসিনিয়ায় রফতানি করা হতো। যে জায়গাগুলো ছিল বিভিন্ন সংস্কৃতির। আরবে পণ্য পাঠানো হতো মরু রুটে উট ব্যবহার করে। আর ভারতে যেত সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে। সাবায়িয়ানদের প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া যায় উত্তর ইথিওপিয়ায়ও। সেখানে দক্ষিণ আরবের বর্ণমালা, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক অনেক বিষয়ের পাশাপাশি শিল্প এবং স্থাপত্যে সাবাদের ছাপ ছিল। ধর্মের মাধ্যমে সাবায়িয়ানরা তাদের একটি আলাদা পরিচয় গড়ে তুলেছিল। সাবারা আল মাকাহর উপাসনা করত এবং বিশ্বাস করত তারা তার সন্তান। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সাবায়িয়ানরা বাণিজ্য করেছে বাব-এল-মানদেব সীমানাজুড়ে। প্রণালিটি আফ্রিকা থেকে আরব উপদ্বীপ ও ভারত মহাসাগর এবং লোহিত সাগরকে পৃথক করেছে।
ইয়েমেনে কৃষি এ সময় উন্নত সেচ ব্যবস্থার কারণে অনেক বেশি সফল হয়েছিল। এর পেছনে পানির সুব্যবস্থা ছিল অন্যতম, বাঁধ ও পাহাড় কেটে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মারিব বাঁধ নামে একটি বাঁধ ছিল, যে বাঁধটি চাষাবাদের জন্য সেচ ব্যবস্থায় ব্যবহার হতো। অবশেষে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে এটি ভেঙে যায়। এ সেচ ব্যবস্থার ব্যর্থতার ফলে ৫০ হাজার লোক স্থানান্তর হয়েছিল। সাবায়িন রাজ্যের রাজধানী মারিবের একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এখনো সেখানে দেখতে পাওয়া যায়।
হাদরামাউত সাম্রাজ্য
সর্বপ্রথম হাদরামাউতদের সম্পর্কে জানা যায় অষ্টম শতাব্দীতে প্রাপ্ত কিছু শিলালিপি থেকে। সপ্তম শতকের দিকে সাবাইকের রাজা কারাবিল আতরের একটি শিলালিপিতে উল্লেখ পাওয়া যায় হাদরামাউতের রাজা ইয়াদাইলকে তার সহযোগীদের একজন হিসেবে। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে মিনাইয়ানরা যখন কাফেলার রুটের নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করেছিল তখনো হাদরামাউতরা সম্ভবত বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে তাদের অন্যতম সহযোগী হয়ে উঠেছিল। তারা পেরেছিল অঞ্চলটি দখল করতে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের দিকে হাদরামাউতরা কাতাবান অঞ্চল নিজেদের অধিভুক্ত করেছিল। সাম্রাজ্য বিস্তারে যা অনন্য ভূমিকা রেখেছিল। এ সময়ে হাদরামাউত সাবা ও হিমারীয়দের সঙ্গে ক্রমাগত যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। যুদ্ধের মাঝেই সাবায়িয়ান রাজা শাইরুওম আতর ২২৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রাজধানী শাবওয়াহ দখল করেন। এর মাঝেই আকসুম সাম্রাজ্য দক্ষিণ আরবের থিফার রাজ্য নিয়ে হতক্ষেপ করতে থাকে। তাদের সঙ্গে যুদ্ধের এক পর্যায়ে ৩০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে হিমারীয় রাজা শাম্মার ইউহারিশ দ্বারা হাদরামাউতরা এটি জয় করে নিয়েছিল, যা সব দক্ষিণ আরবের রাজ্যগুলোকে একত্রিত করেছিল।
আওসান রাজ্য
ওয়াদি বায়হানের দক্ষিণে ওয়াদি মারখাহর রাজধানী হাযার, যা দক্ষিণ আরবের আওসানের প্রাচীন রাজ্য। এখন একটি কৃত্তিম ঢিবি দ্বারা চিহ্নিত, যা স্থানীয়ভাবে শাবওয়াহতে হাজর আসফাল নামে পরিচিত। এটি দক্ষিণ আরবের শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট শহর হিসেবে সুপরিচিত। শহরটি সপ্তম শতাব্দীর দিকে সাবা কারিবিল আতার ও রাজা মুকাররিব দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। ৭০০-৬৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে আওসান রাজ্য এডেন এবং এর আশপাশে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। এ সময়ে দক্ষিণ আরবের সাবায়িয়ান আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। পরবর্তী সময়ে তারা বাণিজ্যিক রুট নিয়ন্ত্রণের করার জন্য বিভিন্ন উপনিবেশ স্থাপন করেছিল।
কাতাবান রাজ্য
কাতাবান প্রাচীন ইয়েমেনের রাজ্যগুলোর মধ্যে একটি, যা বায়হান উপত্যকায় গড়ে উঠেছিল। অন্যান্য দক্ষিণ আরব রাজ্যের মতো এটিও সুগন্ধিযুক্ত জিনিস বিক্রির মাধ্যমে অনেক সম্পদ অর্জন করেছিল। কাতাবানের অবস্থান ছিল হাদরামাউত, সাবা ও মায়িন রাজ্যের মধ্য দিয়ে যাওয়া বাণিজ্য পথে। এর রাজধানী ছিল তিমনা। কাতাবায়িয়ানদের প্রধান দেবতার নাম ছিল আম্ম বা চাচা। তারা নিজেদের আম্মের সন্তান বলে মনে করত।
মায়িন সাম্রাজ্য
মায়িনদের শাসনামলে রাজধানী ছিল কারনাউতে। বর্তমানে তারা মায়িন নামে পরিচিত। তাদের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল ইয়াথিল, যা এখন বারাশিক নামে পরিচিত। আধুনিক ইয়েমেনের অন্যান্য অংশের মধ্যে রয়েছে কাতাবা ও উপকূলীয় ওয়াটার স্টেশন, যা এখন হাদরামাউত নামে পরিচিত। যদিও দক্ষিণ আরবের ইতিহাসে আগে সাবার আধিপত্য ছিল, তবে এরপর মিনিয়ান রাজ্য উত্তর-পশ্চিম ইয়েমেনের কেন্দ্র ছিল। এর বেশির ভাগ শহর ওয়াদি মাজহাবের পাশে অবস্থিত। তাদের সম্পর্কে জানা যায় মিনাইক শিলালিপি থেকে, এটি পাওয়া যায় মায়িন রাজ্যের অনেক দূরে উত্তর-পশ্চিমে। দক্ষিণ আরবের প্রথম রাজ্য ছিল এটি এবং এর অবসান ঘটে ১০০ খ্রিস্টাব্দে। সাম্রাজ্যের অবসানের পর মিনিয়ান ভাষায় পরে আর কাউকে কথা বলতে শোনা যায়নি।
হিমারীয় সাম্রাজ্য
হিমারীয়রা অবশেষে দক্ষিণ-পশ্চিম আরবকে একত্রিত করেছিল। লোহিত সাগরের পাশাপাশি এডেন উপসাগরের উপকূল নিয়ন্ত্রণ করে। রাজধানী শহর থেকে হিমারীয় রাজারা সফল সামরিক অভিযান শুরু করেছিল। পারস্য উপসাগর ও আরব মরুভূমির উত্তর পর্যন্ত তাদের রাজ্য প্রসারিত করেছিল।
খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে দক্ষিণ আরবের রাজ্যগুলো একে অন্যের সঙ্গে ক্রমাগত সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল। আকসুম এ সময় দক্ষিণ আরবের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে। সাবার সঙ্গে একটি মৈত্রী চুক্তি করেছিল। এ সময়ে হাদরামাউত ও কাতাবান একজোট ছিল। তবে জোট স্থায়ী হয়নি। হিমারাইটসরা থিফায় তাদের রাজধানী স্থাপন করে। ধীরে ধীরে সাবায়িয়ান রাজ্যকে তারা নিজেদের করে নেয়। তারা লোহিত সাগরের মাওযা বন্দর থেকে ব্যবসা করত এ সময়ে। হিমার রাজা ধুনুয়াস ষষ্ঠ শতাব্দীতে হিমারীয়দের রাষ্ট্রধর্ম পরিবর্তন করে ইহুদি ধর্মে পরিণত করেন এবং খ্রিস্টানদের গণহত্যা শুরু করেন। ক্ষুব্ধ হয়ে আকসুমের খ্রিস্টান রাজা বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিন ইয়েমেন আক্রমণ করে দখল করে নেন। এর প্রায় ৫০ বছর পরে ইয়েমেন পারসিয়ানদের হাতে আসে। ছয়টি প্রধান সাম্রাজ্য ছাড়াও ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ইয়েমেন আরো কিছু সাম্রাজ্যের অধীনে এসেছিল। আকসুম সাম্রাজ্য তার মধ্যে একটি। ৫১৭-এর কাছাকাছি সময়ে ইউসুফ আসার ইয়াথার নামক একজন ইহুদি রাজা মুদি কারাব ইয়াতিরের কাছ থেকে হিময়ারের রাজত্ব দখল করেন। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আকসুমদের শাসনের অবসান ঘটে সাসানীয়দের আক্রমণের ফলে।
সাসানীয় সাম্রাজ্য
সম্রাট প্রথম খসরো ওয়াহরেজের নেতৃত্বে সৈন্য পাঠিয়েছিলেন, যিনি ইয়েমেন থেকে আকসুম রাজ্যের অবসানের জন্য সাইফ ইবনে ধিইয়াজানকে সাহায্য করেছিলেন। আরবের দক্ষিণ অঞ্চল ইয়েমেনি ভাসালের অধীনে পারস্য আধিপত্যে পরিণত হয়েছিল। এভাবেই সাসানীয় সাম্রাজ্যের প্রভাব বিস্তার ঘটে। এটি নামে একটি পারস্য রাজ্য ছিল কিন্তু পার্সিয়ানরা ধিইয়াজানকে হত্যা করার পর ইয়েমেন বেশ কয়েকটি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। সাম্রাজ্যটি উন্নতি করেছিল সম্রাট দ্বিতীয় খসরোর সময়ে। যার উদ্দেশ্য ছিল সাম্রাজ্যকে কীভাবে বাইজেন্টাইনদের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে ইয়েমেনের মতো পারস্য সীমান্ত এলাকাগুলোকে সুরক্ষা করা যায়। ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় খসরোর মৃত্যুর পর দক্ষিণ আরবের পারস্য গভর্নর বাধন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। সে থেকেই ইয়েমেনে নতুন ধর্ম ‘ইসলাম’ অনুসরণ শুরু হয়।
– ফারিহা আজমিন