মুসলিম পোর্ট

আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত সাহারা মরুভূমির দেশ আলজেরিয়া। দেশটির  রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র দেশটির রাজধানী আলজিয়ার্স যা একইসাথে দেশটির বৃহত্তম শহর ও সমুদ্রবন্দর  । আল জাজাইর (দ্বীপপুঞ্জ) বা আলজেরিয়ার  রাষ্ট্রীয় নাম ডেমোক্রেটিক অ্যান্ড পপুলার রিপাবলিক অব আলজেরিয়া।

পৃথিবীর বৃহত্তম আরব দেশ এবং একইসাথে আফ্রিকার  বৃহত্তম এই দেশটির  মোট আয়তন ২৩,৮১,৭৪১ কি.মি.(৯,১৯,৫৯৫ মাইল )।  ৯৭.২৫ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশটির মোট জনসংখ্যা ৪ কোটি ৪ লাখ যার   ২.৭৫ শতাংশ ইহুদি ও খ্রিস্টান।

অধিকাংশ আলজেরীয় প্রচলিত কথ্য আরবি ভাষার একাধিক উপভাষার কোনো একটিতে কথা বলে। বিদ্যালয়গুলোতে আধুনিক প্রমিত আরবি ভাষা শেখানো হয়। আলজেরিয়ার ইমাজিগেন নৃগোষ্ঠীর মানুষ আমাজিগ ভাষার বিভিন্ন ভৌগোলিক উপভাষায় কথা বললেও এদের বেশির ভাগই আরবি ভাষায়ও সমানভাবে কথা বলতে পারে। ১৯৯০ সালে আরবিকে সরকারিভাবে আলজেরিয়ার জাতীয় ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

ইসলামের আগমন 

বিখ্যাত মুসলিম সেনাপতি ওকবা বিন নাফির নেতৃত্বে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের মধ্যভাগে এ অঞ্চল উমাইয়া খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত হয় । এ সময় মুসলিমরা উত্তর আফ্রিকা জয় করে এবং এ অঞ্চলে ইসলাম ও আরবি ভাষার প্রচলন করে। অল্প সময়ের মধ্যেই এ জনপদের প্রধান ধর্ম ইসলাম এবং ভাষা হিসেবে আরবির ব্যাপকতা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। 

আলজেরিয়ায় ইসলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং রাষ্ট্র ধর্ম।নাগরিকদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম যারা মাযহাবগত দিক থেকে মালিকি মাযহাবের অনুসারি। ইসলাম সমাজকে তার কেন্দ্রীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় প্রদান করে এবং অধিকাংশ ব্যক্তিকে তাদের মৌলিক নৈতিক ও মনোভাবগত অভিমুখীতা প্রদান করে। 

 ১৮৩০ সালে ফান্সের আগ্রাসী উপনিবেশবাদ প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত কালক্রমে বিভিন্ন মুসলিম শাসকগণ সফলভাবে  আলজেরিয়া শাসন করে এসেছে; যদিও পঞ্চদশ শতকের সূচনালগ্ন থেকে ১৫৫৫ সালে পোপ পিয়াস কর্তৃক চতুর্থ ক্রুসেড এবং ১৫৬৭ সালে স্পেনের জুয়ান জেসকন আক্রমণসহ বহুবার আলজেরিয়াকে দখলমূলক আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে।

ঔপনিবেশিক সময়কাল

১৮৩০ সালে ইউরোপের গোত্রভুক্ত ফ্রান্স আলজেরিয়া দখলের মধ্য দিয়ে আফ্রিকায় প্রবেশ করে। হত্যা, লুণ্ঠন আর দমন-পীড়নের মাধ্যমে তারা দেশটি শোষন করে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত।  প্রায় ১৩২ বছরের এই  তথাকথিত ‘সভ্যতার মিশনে’ তারা নির্বিচারে হত্যা করেছে লক্ষ্য লক্ষ্য নিরপরাধ মানুষকে। খোদ ফ্রান্সের সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১০ লাখ আলজেরীয় এবং এক লাখ ফরাসি নিহত হয়েছে এই সময়ে। আর  আলজেরীয় তথ্যসূত্র মতে,  ২০ লাখের বেশি আলজেরীয়কে এই সময়ে হত্যা করেছে।  এছাড়াও মানুষের নূণ্যতম  মৌলিক অধিকার ব্যহত করা, নিরীহ মানুষদের উপর নির্যাতন, আদিবাসীদের   স্থানচ্যুত করা, উর্বর কৃষিজমি অন্যায়ভাবে বাজেয়াপ্ত করা,  পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো এবং ব্যাপক পরিমাণ সম্পদ নিজ দেশে অবৈধভাবে পাচার করা ছিল খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। 

অন্যান্য আরব কিংবা আফ্রিকার দেশের তুলনায় আলজেরিয়া শাসন করা ফ্রান্সের জন্য কঠিন ছিল কারণ আলজেরিয়ান জনগণ সফলভাবে ফরাসী শাসনের বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। 

১৮৩০ সালে উপনিবেশ শুরু করলেও আলজেরিয়ার উপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন আনতে ফ্রান্সের প্রায় ৭০ বছর লেগে গিয়েছিল। ১৯৫৪ সাল থেকে আলজেরিয়ার জনগণ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করে যা ১৯৬২ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। 

জাতীয় সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণ

আলজেরিয় ঐতিহাসিকগণের ধারনা মতে,  আলজেরিয়া থেকে অবৈধভাবে পাচারকৃত খনিজ সম্পদ দ্বারাই ফ্রান্সের এই অর্থনীতি ফুলেফেপে উঠেছে।

১৯৫৬ সালে আবিষ্কৃত তেলের খনি, সোনা ,লোহাসহ বিভিন্ন খনিজ সম্পদ লুটপাট করেছে ফ্রান্স।

আনাদোলু এজেন্সির ঈসা বিন আকৌন যিনি একটি আলজেরীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রফেসর, তার সাথে কথা বলে জানা যায় যে, আলজেরিয়ায় যেসকল খনিজ সম্পদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল সেগুলো বাজেয়াপ্ত করার জন্য  ১৮৪৩ সালের ২৩ই মার্চ  ফ্রান্স উপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ একটি সিদ্ধান্ত জারি করে যা ছিল সম্পূর্ণরুপে আলজেরিয়ায় থাকা মূল্যবান সম্পদ দখল ও লুন্ঠন করার জন্য। বিন আকৌনের মতে, ফ্রান্স উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে এই সমস্ত সম্পদ তাদের আয়ের উৎস হতে পারে, তাই তারা এগুলো জাতীয়করণের উদ্যোগ নেয়। 

 আদিবাসী জনসাধারণ আইন 

ফরাসি ঔপনিবেশিক প্রশাসন ১৮৭১ সালে আদিবাসী জনসাধারণ আইন জারি করে। ঐতিহাসিকগণ বলেন এই আইন জারির ফলে আলজেরিয়ার সম্পদ চুরি করে  ফ্রান্সে  পাচার করা তাদের জন্য আরো সহজ হয়ে উঠেছিল। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে এই আইন  আলজেরীয় জনগোষ্ঠীকে উপনিবেশবাদীদের উপর পুরোপুরি নির্ভর করে ফেলেছিল। এই আইনের কারণে উপনিবেশবাদীরা আলজেরিয়ার উর্বর জমিসমূহ নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় এবং আলজেরীয়দের তাদের নিজেদের জমিতেই এক পঞ্চমাংশ ফসলের বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ দেয়। ফলে আলজেরীয় জনগোষ্ঠী নিজ দেশেই হয়ে যায় অভিবাসী ।  তাদের চলাচলের পরিসরও হয়ে যায় সীমিত। উপনিবেশবাদী ফ্রান্সের অনুমতিক্রমেই কেবল তারা নির্দিষ্ট কিছু স্থানে ভ্রমণ করতে পারত ! এই আইন  ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত জারি ছিল । এই আইনের মাধ্যমেই  আলজেরীয়দের সম্পদ শোষন ও লুন্ঠন , কৃষিজমি দখল ও শুষ্ক ও পাহাড়ি জমি থেকে তাদেরকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। আলজেরিয়ার ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের আইনজীবী আম্মার বিন তৌমি, যিনি ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত আলজেরিয়ায় ফরাসী ঔপনেবেশকতার বিরুদ্ধে চলমান  মুক্তিসংগ্রামে সামনের সারি থেকে সসস্ত্র নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি ২০১২ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এই আইনের উদ্দেশ্যই ছিল আলজেরীয়দেরকে আটকে রাখা এবং সেখানে অবৈধভাবে বসতি স্থাপনকারীদের লুন্ঠন ও অরাজকতার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। 

১৯৭০ সালে আলজেরীয়দের বিরুদ্ধে জারী করা আরেকটি আইন ছিল ক্রিমিয়াক্স ডিক্রি যা ইহুদিদেরকে ফরাসি নাগরিকত্ব প্রদান করেছিল। এই আইন আলজেরীয়দেরকে ইহুদিদের থেকে পৃথক করেছিল। যার ফলস্বরূপ ইহুদিদের বিশেষাধিকার দেয়া হয়েছিল এবং মুসলিম আরব ও বার্বারদেরকে তাদের অধীনে করে রেখেছিল এবং দ্বিতীয় শ্রেণির আদিবাসী মর্যাদা দিয়েছিল। 

২০২২ সালের ২১ই ফেব্রুয়ারিতে  আমীর আব্দুল কাদের ইসলামিক সাইন্স ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে ঐতিহাসিক ও গবেষকগণ বলেছেন যে ১১০ টন আলজেরীয় স্বর্ণ ও রুপা এবং ১৮০ বিলিয়নেরও বেশি সম্পদ ফ্রান্সে রয়েছে। সেমিনারে বক্তৃতা দেয়া কালীন সময়ে ইতিহাসবিদ ফয়সাল বিন সাদ তালিনানী আলজেরিয়ায় করা ফ্রান্সের উপনিবেশকে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর এবং বর্বর উপনিবেশ বলে ঘোষনা দিয়েছেন । তার মতে ঐপনিবেশিক  ফরাসিদের লুটপাট আলজিয়ার্সের বাব আল জাদীদ এলাকার আমিরাতের প্রাসাদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।  ঐতিহাসিক তথ্যানুসারে সেখানে ৭ টন ৩১২ কেজি স্বর্ণ, ১০৮ টন ৭০৪ কেজি রুপা, বালুমিশ্রিত খাটি সোনা, মূল্যবান পাথর , বিলাশবহুল পোশাক এবং অন্যান্য আলজেরিয়ার সঞ্চয় এবং বৈদেশিক অর্থ লুটপাট করা হয়েছি। তালিনানী বিশ্বাস করেন যে দখলের সময় যা লুটপাট করা হয়েছিল তার মূল্য ছিল ৮০ মিলিয়ন ফ্রাংক, আজকের দিনে যার মূল্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার !!!

কাবিলিয়া গ্রামে চালানো অভিযান

১৯০৭ সালে আলজেরীয় মুক্তিকামী জনগণের গেরিলা সংগঠন  ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের আক্রমণ যখন তুঙ্গে তখন আলজেরিয়ায় ফ্রান্সের নিযুক্ত সেনাপ্রধান জেনারেল মরিস চেলসের নির্দেশে রাজধানী  আলজিয়ার্সের ৭৫ মাইল দক্ষিন অনেকগুলো গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত  এক পাহাড়ি এলাকা কাবিলিয়ায়  চালানো হয় এক  নৃশংস গণহত্যা। কাবিলিয়ার তৎকালীন জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২০ লাখ যার মধ্যে অনেকেই গেরিলা সংগঠন  ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টে ( এনএলএফ)  যোগ দিয়েছিল। জেনারেল মরিসের নেতৃত্বে কাবিলিয়ার সকল গ্রামকে একবারে ধ্বংস করে দেয়া হয়। সেখানকার জনগণ যাতে এনএলএফকে কোন ধরনের সহযোগিতা করতে না পারে এজন্য সকল অধিবাসীদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পরুপী কিছু গ্রামে পুনর্বাসিত করা হয় এবং কড়া নজরদারীতে রাখা হয়। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশ্বাসঘাতকতা এবং গণহত্যা

১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জেনারেল শার্ল দ্য গোলের আহবানে আলজেরিয়ান তরুনরা ফ্রান্সের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়। ১৯৪৫ সালে ফান্স ও তার মিত্রবাহিনী জয়লাভ করে। বিজয় উদযাপনের জন্য আলজেরিয়ার সেফিদ শহরে একত্রিত হয় আলজেরীয় তরুনরা। সেখানে এক যুবক স্বাধীন আলজেরিয়ার পতাকা উন্মোচন করায় স্বাধীন আলজেরিয়ার পক্ষে শ্লোগান দেয়া শুরু করে উপস্থিত জনতা। এমতাবস্থায় জেনারেল দোভালের নেতৃত্বে ফরাসী সেনারা গুলি চালালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় সেই যুবক। মুহুর্তেই পুরো এলাকায় তান্ডব শুরু ফরাসি সেনারা। সেদিন সেফিদে এক হাজার আলজেরীয় নিহত হয়।  একইদিনে সেফিদের পাশের শহর গুয়েলমাতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিক্ষুদ্ধ আলজেরীয় জনতা। ফরাসি সৈন্যরাও সেখানেও গুলিবর্ষন করে। ফলে শহর দুটিতে  বসতি স্থাপনকারী ফরাসীদের সাথে দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ে স্থানীয় আলজেরীয়রা। ইউরোপিয় ইতিহাসবিদদের মতে  সেই দাঙ্গায় ১০৩ জন ফরাসি নাগরিক মারা যায়। তবে আলজেরীয় সূত্রে জানা যায় যায় এর সংখ্যা সর্বসাকুল্যে  ১২ জনের বেশি নয়। এর প্রতিক্রিয়ায় এক মহা হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করে অবৈধ ফরাসী শক্তি। ফরাসীদের চালানো এই গণহত্যায় প্রাণ হারায় ৪৫ হাজার নিরীহ আলজেরীয়। মুসলমানদের এলাকাগুলোতে প্রবেশ করতে ব্যার্থ হয়ে কারাটা ও বগি এলাকায় বিমান হামলা চালায়। এরপর ফরাসী সেনার জাইন শহরে আলজেরীয়  বন্দীদের নির্বিচারে হত্যা করে। ইউরোপীয় ঐতিহাসিকদের মতে নিহত আলজেরীয়দের সংখ্যা ৬ হাজার। তবে নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকগণের দাবী এই ৫ দিনে মোট নিহতের সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজারের বেশি। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক এলিষ্টার হর্নের বিখ্যাত গ্রন্থ A Savage War of Peace গ্রন্থে এই গণহত্যার নৃশংসতার বর্ণনা রয়েছে। কতটা নৃশংস ছিল এই হত্যাকাণ্ড  তা ফুটে ওঠে এক ফরাসি সেনা কর্মকর্তার মন্তব্যে। আলজেরীয়দের লাশ গুম করার দায়িত্বে থাকা ওই সেনা কর্মকর্তা তাঁর অন্য সহকর্মীকে বলেন, ‘তুমি তাদের যত দ্রুত হত্যা করেছ, তার চেয়ে দ্রুত আমি তাদের কবর দিতে পেরেছি।’

এই গণহত্যার পর আলজেরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলন জোড়দার হয়। ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আলজেরীয়দের গণবিস্ফোরণের শুরু হয় ১৯৫৪ সালে। দীর্ঘ ৮ বছরের এই মুক্তিসংগ্রামের  ফলে  শেষ পর্যন্ত ১৯৬২ সালে ফরাসিরা আলজেরিয়াকে স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয়।

গণতন্ত্র লুটের অনন্য নজির

দীর্ঘ ৮ বছর  যুদ্ধের পরও স্থিতিশীলতা  ফিরে আসে নি এই ভূখন্ডে।  স্বাধীনতা অর্জন পরবর্তী সময়ে ৯৮ শতাংশ মুসলিমের এই ভূখণ্ডে সেক্যুলারিজমের নামে ইসলামবিদ্বেষের বীজ বপন করে দেয় সেক্যুলার সরকার।  তাই সাধারণ জনগণের মধ্যে বিরাজ করতে থাকে তীব্র ক্ষোভ।

সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের  কারণে, ১৯৯০ সালের নির্বাচনে ইসলামপন্থীরা বিজয়ী হওয়া সত্বেও শুরু হয় ভয়ংকর গৃহযুদ্ধ। এতে এক দশকে প্রায় দুই লাখ মানুষ নিহত হয়।

দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর, ১৯৯৯  সালে ক্ষমতায় আসেন আবদেল আজিজ বুতেফলিকা।  ২০ বছর ধরে দেশ শাসন করে, ৮২ বছর বয়সী আবদেল আজিজ বুতেফলিকা যখন পঞ্চমবারের মতো নির্বাচনের ঘোষণা দেন তখন সেখানে শুরু হয় আবারও তীব্র বিক্ষোভ। তাদের স্লোগান ছিল, ‘বাই বাই বুতেফলিকা’। 

পরবর্তীতে জনতার তুমুল বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেল আজিজ বুতেফলিকা। বুতেফলিকার পদত্যাগের ঘোষণার পর রাজধানী আলজিয়ার্সে উল্লাসে ফেটে পড়ে দেশটির জনগণ। যদি তিনি এই অঙ্গীকার  করেন যে পুনর্নির্বাচিত হলে রাজনৈতিক সংস্কার এবং আরেকটি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের জন্য তিনি একটি কনফারেন্সের আয়োজন করবেন; কিন্তু নতুন প্রজন্মের কাছে এ ধরনের মোটা কথাবার্তা কোন গ্রহনযোগ্যতা পায়নি ।  বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে সালমু সিদ্দিক নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা এখন শতভাগ গণতন্ত্রের দিকে যাব। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগের শাসকদের সরিয়ে দেওয়াটা খুব প্রয়োজন ছিল।’

সংকলনঃ সাদ আবরার