শতকাল ধরে বহমান সময়ের ধারাবাহিকতার সাক্ষী হিসেবে টিকে থাকা নগরী তিমবাকতু। যা ছিল পশ্চিম আফ্রিকায় ইসলামের অন্যতম রাজধানী। আযওয়াদ অঞ্চলের জনগোষ্ঠির স্বাধীনতা ও মুক্তির আশাকে কেন্দ্র করে, ইতিহাসের কোলে যার বিস্তার ঘটেছিল ‘মরুকন্যা’ হিসেবে। সুপ্রাচীন নাইজার নদীর তীর মনে করিয়ে দেয় ভুলে যাওয়া সে নগরীর ইতিহাসকে, বর্তমানে যেখানে বুলেটের শব্দ কখনো স্তব্ধ হয়না!
১১’শ শতাব্দীতে যখন এই শহরের গোড়াপত্তন করা হয়, ১০৮০ সালের দিকে তিমবাকতু এমন একটি নগরীতে পরিণত হয়- যেখান থেকে কাফেলা যাত্রা করত, আলিমরা সেখান থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে বেরিয়ে যেতেন, জ্ঞান এবং ধন- সম্পদ আহরণকারীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছিল জায়গাটি।
প্রচলিত বয়ানগুলো থেকে পাওয়া যায় যে, তিমবাকতু নামটির অর্থ ’বাকতুর কূপ’, এখানে একজন বৃদ্ধার বাড়ি ছিল। যার আশেপাশে অনেক যাযাবর গোত্র বসতি স্থাপন করেছিল। অতীতে তিনি গ্রীষ্ম-শীতের সফরের মৌসুমে একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় আবাস বা সরাইখানা তৈরি করতেন। সেই সময়ের ইসলামের গুরুত্বপূর্ন রাজধানী মৌরিতানিয়ার বিভিন্ন কাফেলা এখানে বিশ্রামের জন্য আসত। সেই সময় তাদের সফরে বিভিন্ন ব্যবসায়িক মালামাল যেমন- খেজুর, লবন, কাপড়, বই, স্বর্ণ, গোলাম, রেশম, উটপাখির পালক এবং অন্যান্য মরুভূমির জিনিসপত্র বোঝাই থাকত।
তিমবাকতুর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবং আজ অবধি সেখানে বিভিন্ন জাতি এবং জাতীয়তার সহাবস্থান রয়েছে। যেমন বেরাবিশ, কুনতাহ এবং অন্যান্য গোত্রগুলি ছাড়াও ফুলান ও সোনহাই উপজাতি এবং বারবার উপজাতি, যেমন- মাসুফাহ এবং অন্যান্য সম্প্রদায়।
বহু শতাব্দীকাল যাবত এদের সকলেই শান্তি ও অখণ্ডতার মাধ্যমে সহাবস্থান করে আসছে। আবহমান কাল থেকে সমাজের অভিজাত এবং সাধারণদের একত্র করার জন্য ইসলামী জ্ঞানের বিকাশ, এই নগরীর ইতিহাসে মূল ভূমিকা পালন করেছে।
রাষ্ট্র ও সাম্রাজ্যের ধারাবাহিকতাঃ
তিমবাকতুকে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিক পরিবার ও নেতৃত্ব শাসন করেছে । প্রথম দিককার শাসকরা বার্বার মাসুফাহ উপজাতির নেতা ছিলেন। তাদের শাসনকাল প্রায় এক শতাব্দী ধরে চলেছিল। এই শাসন খ্রিস্টীয় চৌদ্দ শতকের ত্রিশের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয়। তাদের শাসনকালে প্রখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা এই শহরটি পরিদর্শন করেন। তিনি এটিকে মুখোশধারীদের শহর হিসেবে অভিহিত করেন।
তারপর অর্ধ শতাব্দীকালব্যাপী তিমবাকতু শাসন করে ইমগুশরিন গোত্র। মালি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই শাসন জারী ছিল।
হিজরী নবম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সুলতান সুনইয়া আলি ধ্বংসযজ্ঞ, হত্যা, লুন্ঠন এবং ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে তিমবাকতু শহর করতলগত করে নেন। সুনইয়া আলীর বংশের শাসক এবং আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে তিমবাকতুর ভাগ্য আবারও কিছু মহান শাসকের মাধ্যমে সুপ্রসন্ন হয়।
তাদের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলেন সুলতান আসকিয়া মুহাম্মদ আল-হাদী (১৪৯৩-১৫২৮), যিনি তাঁর শাসনামলে এই শহরটিকে এক মহৎ অবস্থানে পৌঁছে দেন, কারণ তিনি আলিমদের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। তার শাসনামলে এই শহর থেকে একটি বিশাল সংখ্যক বিশ্বজনীন আলিম বের হন যাদের সুখ্যাতি দিগন্ত বিস্তৃত হয়ে ওঠে। যেমন আহমদ বাবা আল-তানবাক্তী (মৃঃ ১০৩৬ হি/১৬২৬ খ্রী)।
সুলতানুয যাহাব বা ’স্বর্নের সুলতান’ খ্যাত মানসা মুসার মাধ্যমে এই শহরটি পরিশীলিত ও সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। তার মশহূর হজ্জের সফর থেকে ফিরে আসার সময় তিনি সেখানে শিক্ষক, বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী নিয়ে আসেন।
ঐতিহাসিক বর্ণনা মতে, সম্রাট মনসা মুসা – যিনি ১৪ শতাব্দীতে মালির শাসনকর্তা ছিলেন, তিনি ১৩৪৪ সালে প্রায় ১৮০ টন স্বর্ণ সাথে নিয়ে হজ্জের সফরে গিয়েছিলেন!! যার ফলে মিশরে দশ বছর ব্যাপী এক বিশাল মুদ্রাস্ফিতি দেখা দেয়!!
হজ্জ থেকে ফিরে আসার পথে তিনি তাঁর সাথে মিশর থেকে আবু ইসহাক আল-সহিলী নামক একজন আন্দালুসীয় মি’মার (স্থপতি) নিয়ে এসেছিলেন। মসজিদের নকশা ও নির্মাণের বদৌলতে তাঁকে ২০০ কেজি স্বর্ণ উপহার দিয়েছিলেন। জিংগারবীর মসজিদটি ছিল তার এক অমর মাস্টারপিস। ৭০০ বছরের বেশি বয়ষ্ক এই মসজিদটি আজ অবধি দিন রাত্রির আবর্তনের সাক্ষি হিসেবে সূর্যের সাথে ফিসফিসিয়ে আলাপন চালিয়ে যায়!!
সম্রাট মনসা মুসা এবং তাঁর পরে আসা শাসকদের শাসনামলে মসজিদ ও ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্রগুলির ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। সেই পঞ্চদশ শতকেই সেখানে ২০০ টির অধিক বিরাট বিরাট মসজিদে ২৫,০০০ এর ও অধিক শিক্ষার্থী ছিল!!
১৫৯১ সালে সা’দীয়ানরা তিমবাকতু জয় করেন। সুলতান আহমাদ আল মানসূর আয যাহাবীর সময়কাল থেকেই তিমবাকতুর সমৃদ্ধির অবসান যুগের সূচনা হয়।
এই ঘটনার সময় তিমবাকতুর বেশ কয়েকজন আলেমকে জোর পূর্বক মারাকেশে (মরক্কো) পাঠিয়ে দেয়া হয়। এঁদের মধ্যে সর্বাধিক বিখ্যাত হলেন ইসলামী মাগরেবের ’আল্লামা’ খ্যাত আহমেদ বাব আল-তানবক্তি, যিনি সেখানে দশ বছরেরও বেশি সময় অবস্থান করেছিলেন। এ সময়েই তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ معراج الصعود في حكم مجلوب بلاد السود অর্থাৎ, “কালোদের দেশের দাস বানানো জনতার উপর রাজত্ব চালানোর সোপান ” রচনা করেন। ওই অঞ্চলে চলমান দাস ব্যবসায়ের বিরুদ্ধে এটিই ছিল সর্বপ্রথম বুদ্ধিবৃত্তিক বিদ্রোহ। কেননা কোন ধরনের বাছবিচার ছাড়াই ওই সময় কালো রঙকে দাসত্বের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হতো!!
কালক্রমে, তিম্বাকতুর সামরিক জান্তারা মরক্কোর সা’দিয়ান সাম্রাজ্যের অধীনতা থেকে মুক্তি লাভ করে। তখন শহরটি অশান্তি এবং বিশৃঙ্খলায় ছেয়ে যায়। ১৮শ শতকের শেষ দিকে ফরাসীদের উপনিবেশ স্থাপনের আগ পর্যন্ত এই গোলযোগপূর্ন সময় চলমান থাকে। ফরাসীদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনগণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিল। বিশেষত উপজাতিরা সকলেই জয়লাভ করেছিল আলী আল আনসারির নেতৃত্বে; তার ডাক নাম আঙ্গুনা, তিনি ১৮৯৭ সালে ফরাসি হানাদার বাহিনী কর্তৃক আগুনে পুড়ে শাহাদাত বরণ করেন।
প্রথম দিকে তিমবাকতুতে ফরাসীদের আগ্রাসন ইউরোপীয়ানদের বিশ্বজোড়া সম্মিলিত কনকুয়েস্ট এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলনা। কারন সেই ১৫ শ শতক থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন শহরের সাথে এর বানিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। তাছাড়া ডাচ, পর্তুগিজ এবং ফরাসীরা এখানে মুসাফির এবং ধন সম্পদ আহরণকারী হিসেবে এসেছিল। যদিও পরবর্তীতে ফরাসীরে এখানে উপনিবেশ স্থাপন করে বসে।
ফরাসী উপনিবেশিক শাসনামলে, তিমবাকতুতে প্যারিসীয় শাসকেরা প্রচন্ড মাত্রায় অত্যাচার চালায়। শহরের বাসিন্দাদের তীব্র বিরোধিতা লক্ষ্য করা সত্ত্বেও তারা পশ্চিম আফ্রিকায় ফরাসী উপনিবেশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাওয়া ‘আফ্রিকার প্রতিরোধ যোদ্ধা’দের জন্য তিমবাকতুকে নির্বাসনের যায়গা বানিয়ে ফেলে! সাংস্কৃতিক ও সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে এই শহরের ঐতিহ্যকে লন্ডভন্ড করে দেয়।
ফরাসী গবেষকরা গ্রন্থাগার এবং পান্ডুলিপি সংগ্রহশালাগুলোকেও টার্গেট করে। তারা শহরের বহু ইসলামিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন “চুরি” করে তাদের গ্রন্থাগারে নিয়ে গিয়ে ফরাসী সংরক্ষণাগারগুলিতে অন্তর্ভুক্ত করে ফেলে।
কিছু সময়ের জন্য মালি রাষ্ট্রটি, তিমবাকতু ও তার সন্তানদের প্রতি ফরাসীদের তুলনায় কোন অংশেই অধিক করুনাশীল ছিলনা। কেননা তাদের যথেষ্ট নিপীড়ন ও অপমনা সহ্য করতে হয়েছে। বিশেষত ১৯৬৩ সালের বিপ্লবের সময়, যা মালিতে তাদের রাজনৈতিক অধিকারের দাবিতে তুয়ারেগ জনগোষ্ঠীর প্রথম রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল। তখন মালির সাবেক রাষ্ট্রপতি মোদিবো কেইটা (স্বাধীনতার পরে মালির প্রথম রাষ্ট্রপতি,১৯৬০-১৯৬৮) এর সরকারের মেয়াদ চলছিল। আন্দোলনকারীদের কঠোরভাবে দমন করা হয় এবং তাদের বেশিরভাগ নেতাকর্মীকে কারাবন্দী করা হয় এবং এই ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ঘটনাগুলির পরে, আযওয়াদীগন নগরীর বামাকো শাসনামলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযোগ দায়ের করেন। যার মধ্যে পানীর কুয়োগুলিতে বিষ ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে মানুষ, প্রাণী এবং পরিবেশের স্বতন্ত্র গনহত্যা ঘটানোর মত অভিযোগ ও রয়েছে!!
মালির পরবর্তী শাসনব্যবস্থাও আ’মভাবে তিমবাকতুর অধিবাসী সহ সমগ্র উত্তঞ্চলের জনতাকে অস্বীকার করেই চলছিল। পরবর্তীতে তারা স্বীকার করে যে, তাদের এই অত্যাচার ও বাড়াবাড়ির পেছনে কারন ছিল উত্তরাঞ্চলীয় সশস্ত্র আন্দোলন কর্তৃক পরিচালিত সহিংসতা এবং বিদ্রোহ।
২০১২ সালে, শহরটি তার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় সংযোজন করে, তখন ইসলামী মাগরেব আল-কায়েদা সংস্থার সাথে যুক্ত সশস্ত্র আন্দোলনগুলি এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি ধসের পরে আনসার আল-দীন ওই অঞ্চলে প্রবেশ করে। মালিয়ান সেনাবাহিনী এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির প্রত্যাহার এবং বেশিরভাগ সরকারী পরিষেবা স্থগিতের পরে এই অঞ্চলে এ বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছিল। তারা দাবী করে যে, এই অন্তরবর্তীকালীন সময়ে তারা তিমবাকতুকে তামাম বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা করেছিল। তবে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্তৃপক্ষ মনে করে যে, ওই শহরে এই সমস্ত ইসলামী দলগুলির প্রবেশের ফলে শহরটি একটি অন্ধকার সময় প্রবেশ করেছে। কারণ তারা আলেম, আউলিয়া ও ধার্মিক ব্যক্তিদের কয়েক ডজন মাজার ও স্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছে। যেখানে এই শহরটি কয়েক শতাব্দী ধরে এসকল মহান ব্যাক্তিত্বের সুবাসিত পদভারে একটি পূন্যভূমিতে পরিণত হয়েছিল।
অবশ্য এসকল দলগুলিকে পরবর্তীতে সেখান থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বকারী এই স্থাপনা ও গ্রন্থাগারসমূহকে ভগ্নদশা থেকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
বিগত কয়েক দশক ধরে তিমবাকতু পশ্চিমা পর্যটকদের চরমভাবে অভিভূত করেছে। বিশেষত মিডিয়ার মাধ্যমে পশ্চিমা পর্যটন অফিসগুলো এই শহরকে বেশ ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বিগত কয়েক দশক ধরে তিমবাকতু পশ্চিমা পর্যটকদের চরমভাবে অভিভূত করেছে। বিশেষত মিডিয়ার মাধ্যমে পশ্চিমা পর্যটন অফিসগুলো এই শহরকে বেশ ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ‘বিস্ময়ের শহর’ হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে।
ঐতিহাসিক এই শহরটির উচ্চ চাহিদা থাকার কারণে, তার পর্যটন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি শহরে প্রথম বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখানে একাধিক আধুনিক হোটেলও স্থাপন করা হয়েছিল।
তিমবাকতু বহু সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানতাত্ত্বিক নিদর্শনের জন্য জন্য বিখ্যাত। যার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণটি হল প্রাচীন একটি গ্রন্থাগার- যাতে প্রায় তিমবাকতু বহু সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানতাত্ত্বিক নিদর্শনের জন্য জন্য বিখ্যাত। যার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণটি হল প্রাচীন একটি গ্রন্থাগার- যাতে প্রায় ৩০,০০,০০০ পাণ্ডুলিপি রাখা আছে এবং এই পাণ্ডুলিপির প্রতিটি পৃষ্ঠা আফ্রিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী সাংস্কৃতিক ভাণ্ডার সংরক্ষণ করে।
এখানে অনেকগুলো প্রত্নতাত্ত্বিক মসজিদও রয়েছে। যেমনঃ শহরের পশ্চিমে অবস্থিত “জেনক্রেবার মসজিদ”। এটি আন্দালুসীয় স্থপতি এবং কবি আবু ইসহাক আল-সাহেলি নির্মাণ করেছিলেন, যাকে মালির সুলতান মনসা মুসা হজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই এই অঞ্চলটিতে ‘আন্দালুসীয় স্থাপত্য’ প্রবেশের সূচনা হয়েছিল। ইউনেস্কো ১৯৯২ সালে এই মসজিদকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করে।
তিমবাকতুর অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন হলো “সুনকারী মসজিদ”, এটি শহরের অন্যতম প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ছিল। এটি ১৪০০ সালে প্রাচীন শহরের কেন্দ্রস্থলে শেখ আল মুখতার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত “সিদি ইয়াহিয়া মসজিদের” উত্তর পূর্বে অবস্থিত ছিল।
আজ সেই ঐশ্বর্যমন্ডিত তিমবাকতু সময়ের চাদরে আবৃত হয়ে ঘুমিয়ে আছে স্মৃতির আঙ্গিনায়।ইতিহাসের বিরাট এক অংশজুড়ে যার অবস্থান মানবীয় সৃজনশীলতার এক অনুপম নিদর্শন হিসেবে, পশ্চিম আফ্রিকার ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজধানী হিসেবে। উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত বিস্তৃত কয়েক দশক পুরাতন ছত্রভঙ্গ পরিস্থিতি, প্রান্তিকতা এবং অবিচারের লাগাতার অভিযোগের কলঙ্ক বয়ে বেড়ানো মালি আজ তাকিয়ে আছে বামাকোর নতুন শাসকগোষ্ঠীর দিকে। তারা কি পারবে আসকিয়া মুহাম্মদ আল-হাদী এবং মনসা মুসার গৌরবান্বিত স্মৃতি পুনরুদ্ধার করতে? নাকি তারা আবার সুনইয়া আলীর সেই বিদ্ধংসী শাসন বলয় কায়েম করবে!
অনুবাদ- হিশাম আল নোমান