ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ প্রবেশের জন্য বিশেষ যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়েছে যুদ্ধবাজ ইজরায়েল। এতে কমপকক্ষে ৬৩ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩৪ জন ছিলেন ত্রাণপ্রার্থী।
রোববার (২৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
এর আগে, গাজার তিনটি এলাকায় প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সামরিক অভিযান স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয় ইজরায়েলি সেনাবাহিনী। এখন থেকে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে এবং পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তা প্রতিদিন চালু থাকবে।
রোববার ইজরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গাজার আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ এবং গাজা সিটি এলাকায় তারা সামরিক অভিযান বন্ধ রাখবে। এই এলাকায় মার্চ মাস থেকে নতুন করে স্থল অভিযান শুরু হয়নি।
সেনাবাহিনী আরও জানায়, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খাবার ও ওষুধবাহী গাড়িবহরের জন্য নির্ধারিত নিরাপদ পথও চালু থাকবে।
এদিকে মিশরের রাষ্ট্রায়ত্ত আল-কাহেরা নিউজ টিভি জানায়, রোববার থেকে মিসর সীমান্ত দিয়ে গাজার উদ্দেশে ত্রাণ পরিবহন শুরু হয়েছে। এর আগে, ইসরাইল বিমান থেকে ত্রাণ ফেলাও শুরু করে বলে জানায়, যা তারা গাজার মানবিক পরিস্থিতি কিছুটা সহজ করতে নেওয়া উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ জানায়, গাজায় মানবিক বিরতি ঘোষণার ফলে ত্রাণ সরবরাহের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হবে। তবে তারা অভিযোগ করে, ইসরাইল তাদের গাড়িবহরের জন্য যথেষ্ট বিকল্প রুট দিচ্ছে না, যা ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত করছে।
অন্যদিকে, গাজার পথে মানবিক জাহাজ ‘হানদালা’তে ইসরায়েলি হামলা, ২১ আরোহীর খোঁজ নেইইতালি থেকে গাজামুখী মানবিক সহায়তা নিয়ে যাত্রা করা ‘হানদালা’ নামের একটি জাহাজে শনিবার (২৬ জুলাই) রাতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। জাহাজটিতে তখন ২১ জন আরোহী ছিলেন, যাঁদের মধ্যে আইনপ্রণেতা, চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকের মতো বেসামরিক নাগরিকরাও ছিলেন।
হামলার মুহূর্তটি সরাসরি সম্প্রচারে (লাইভস্ট্রিমে) দেখা যায়। সেখানে দেখা যায়, ইসরায়েলি সেনারা জাহাজে উঠে যাত্রীদের হাত উঁচু করতে বলছে। কিছুক্ষণ পরেই সম্প্রচারটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকেই আরোহীদের অবস্থান ও অবস্থা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
‘হানদালা আটক!’—এমন ঘোষণা দেয় জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন। তারা তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলুকে বিষয়টি নিশ্চিত করে।
অন্যদিকে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, নৌবাহিনী এখন জাহাজটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এটি নিরাপদে ইসরায়েলের উপকূলে আনা হচ্ছে। সব যাত্রীও নিরাপদে আছেন বলে জানানো হয়।
টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, ‘হানদালা’ জাহাজটিকে আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়ার পর আরোহীদের ইসরায়েল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
জাহাজটি গাজায় শিশুদের খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য নিয়ে যাচ্ছিল। এসব সামগ্রী আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক ও মানবিক আইন মেনে পরিবহন করা হচ্ছিল বলে জানায় ফ্লোটিলা কর্তৃপক্ষ।
জাহাজটি ইসরায়েলি নৌবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে একটি বিপদ সংকেত (ডিস্ট্রেস কল) পাঠায়। এরপরও অভিযান চালানো হয়, যা অনেকের চোখে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সরাসরি বাধা ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সামিল।
এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২১ আরোহীর পরিচয় কিংবা অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু জানানো হয়নি। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, এটি মানবিক সহায়তার ওপর অগ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপ।