মুসলিম পোর্ট

খ্রিষ্টীয় তেরো শতকের শেষ দিকে এবং চৌদ্দ ও পনেরো শতকে ইসলাম ভারত ও আরব উপদ্বীপ থেকে মালয় উপদ্বীপ ও ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জে আসতে শুরু করে। খ্রিষ্টীয় পনেরো ও ষোলো শতাব্দীর শুরুর দিকে ভারতের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসলাম দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বিস্তৃতি লাভ করে। এই অঞ্চলে ইসলামের প্রবেশ এবং বিস্তার ঘটেছিল বাণিজ্যের পথ ধরে এবং সুফি সাধকদের মাধ্যমে। এভাবে ইসলাম মালয় উপদ্বীপ, সুমাত্রা এবং জাভা দ্বীপাঞ্চল থেকে শুরু করে ফিলিপাইন পর্যন্ত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিলো। কেননা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ইসলামী সভ্যতার মূল ভিত্তি ছিল স্থানীয় সংস্কৃতি। ধর্মীয় আকিদা বিশ্বাস এবং শৈল্পিক অর্জন বিশেষ করে নিজস্ব শিল্পের ভিত্তিমূলে স্থাপিত ছিল সেই সংস্কৃতি।

এ অঞ্চলের মুসলমানরা সবসময় নিজেদের অঞ্চলে বিদেশীদের উপস্থিতির বিরোধী ছিল। এ কারণেই ১৫১১ সালে মালয়-তে এবং ১৫২২ খ্রিষ্টাব্দে মুলুক দ্বীপে পর্তুগিজদের উপস্থিতির বিরুদ্ধে মুসলমানরা ব্যাপক সংগ্রাম করেছিল। সতেরো শতকেও তারা হল্যান্ডিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল। ১৬৪১ খ্রিষ্টাব্দে হল্যান্ডিরা মালয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় মালাকা দ্বীপ দখল করে নিয়েছিল। আবার আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে তারা পূর্ব ভারত দ্বীপ তথা বলা যেতে পারে বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার ওপর নিজেদের আধিপত্য বা উপনিবেশ স্থাপন করে। এভাবে তারা এই অঞ্চলের মশলাপাতি ব্যবসার ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে সক্ষম হয়।

এই বিশাল এলাকার ওপর হল্যান্ডিদের বাণিজ্যিক শাসন কায়েম থাকার পরও মুসলমানরা উনিশ শতক পর্যন্ত নিজেদের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ বা পরিচয় অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়। আঁচেহ, মালয়, মিনাং কাবাউ এবং জাভার মতো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অঞ্চলগুলোর প্রত্যেকটিতে বিশেষ ইসলামী সমাজ গড়ে উঠেছিল। সে সমাজ একদিক থেকে যেমন মুসলিম সমাজের সাদৃশ্যপূর্ণ তেমনি কোনো না কোনো দিক থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।

১৮১৯ সালে ব্রিটিশ বাহিনীও মালাকা প্রণালী দখল করে নিয়েছিল। এ সময় তারা সিঙ্গাপুরে নতুন একটি ঘাঁটিও নির্মাণ করে। এরপর ধীরে ধীরে তারা সমগ্র মালয়ব্যাপী তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার শুরু করে। হল্যান্ড সরকারও ১৯১১ সালের মাথায় পূর্ব ভারতের সমগ্র দ্বীপাঞ্চল তথা ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ওপর প্রথমবারের মতো  নিজেদের পরিপূর্ণ আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। এই পুরো অঞ্চলের ওপর একক সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল তারা।

ইন্দোনেশিয়া হলো সহস্রাধিক দ্বীপের সমষ্টি। এই ইন্দোনেশিয়ায় ধীরে ধীরে ইসলামী জাগরণের সূচনা এবং বিকাশ ঘটে। এ অঞ্চলে ইসলামী জাগরণের পাশাপাশি সামাজিক কিছু স্বাধীন সংস্থা ও সংগঠনও ছিল যারা তখনকার সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। আমরা সেইসব আন্দোলন এবং আন্দোলনকারী ব্যক্তিত্বদের নিয়ে কথা বলবো, ইনশাআল্লাহ।

সুন্নি আলেম-ওলামা, রাজনৈতিক চিন্তাবিদগণ, সূফীগণ, বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সংগঠন বা সংস্থার পরিচালকগণ চেয়েছিলেন নিজেরাই তাঁদের দেশের ভবিষ্যৎ গঠন করবেন। এক্ষেত্রে মুসলমানরাই অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন। তাঁরা সর্বপ্রথম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন হল্যান্ডিদের বিরুদ্ধে। মালয়েশিয়ায় পতনোন্মুখ আশরাফদের শাসনের বিরুদ্ধেও তাঁরা বিদ্রোহ করেছিলেন। ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে মাতারাম বাদশাহী শাসনের স্থায়িত্ব বিধান করা থেকে সতেরো শতকের সূচনালগ্নে জাভার আশরাফ এবং সম্পদশালীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ কেন্দ্রিক আশরাফ এবং সম্পদশালী এলিটদেরকে ‘পুরিয়া’ বলা হতো। আর দ্বীনদার আশরাফদের বলা হতো ‘কিয়ায়ি’। এই কিয়ায়ি’রা হল্যান্ডের উপনিবেশিক শাসনের যুগে পুরিয়ায়িদের দৃষ্টি আকর্ষণের মধ্য দিয়ে সমগ্র জাভা সমাজে স্বাধীন প্রতিনিধিত্বের সুযোগ লাভ করেছিল। যার ফলে হুকুমাতে তাদের শক্তি, সামর্থ্য ও প্রভাব অনেক বেড়ে গিয়েছিল।

এই পর্যালোচনার বাইরেও মালয় এবং ইন্দোনেশীয় মুসলমানগণ সংস্কারকামী চিন্তা-চেতনার সাথে পরিচিত হন। সেইসাথে তাঁরা ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ এবং মূল্যবোধগুলোর ব্যাপারে আরো বেশি সচেতন হয়ে ওঠেন। হল্যান্ডিদের শাসনের বিরুদ্ধে জাভায় কিয়ায়িরা এবং কৃষিজীবীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ১৮৪০ এবং ১৮৫০ এর দিকে এই এলাকাটিতে ইসলামী জাগরণের সূত্রপাত ঘটে। এর প্রমাণ হিসেবে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ভ্রমণের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। সেইসাথে দ্বীনি মাদ্রাসা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন ফেরকা এবং ধর্মীয় সংস্থার সদস্য হবার প্রবণতাও বেড়ে যায়। তরিকতে কাদেরিয়ার মাধ্যমে মাযহাবি বা ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সাথে তাদের অনুসারীদের যোগাযোগ শক্তিশালী হয়ে উঠে। এই কাদেরিয়া তরিকতের বেশিরভাগ সদস্যই ছিল কিয়ায়িরা। তরিকতপন্থীরা চাইতো কুরআনের বিধি-নিষেধগুলো যেন সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা হয়। এইরকম আদর্শে বিশ্বাসী তরিকতপন্থীরা ইসলামী আদর্শ প্রচারে ব্যাপক তৎপরতা চালায়। যার ফলে বিদেশী উপনিবেশবাদীদের মোকাবেলায় দ্বীনি জাগরণমূলক আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল।

ইন্দোনেশিয়ায় এই ইসলামী জাগরণের সূচনার ফলে বিদেশী উপনিবেশবাদীদের বিরুদ্ধে মারাত্মক বিরোধিতা শুরু হয়ে যায়। আর আশরাফরা যেহেতু তাদের সহযোগী ছিল, সেজন্যে কৃষিজীবী এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মাঝে আশরাফ শ্রেণী বিরোধী মনোভাব এবং ক্ষোভ তুঙ্গে ওঠে। যার পরিণতিতে ১৮৮৮ সালে বিশাল অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটে। তবে এই অভ্যুত্থানের সূচনা ঘটেছিল হল্যান্ডি সেনাদের হামলা এবং জাভার নেতৃবৃন্দের পৃষ্ঠপোষকতার মধ্য দিয়ে। তবে এই অভ্যুত্থানকে ভয়াবহভাবে দমন করেছিল তারা। মিয়াং কাবাউতে পাদ্রি আন্দোলন, ক্যালিমানটানে বানজারমাসিন যুদ্ধ, ১৮৭১ থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত আঁচেহ যুদ্ধ ইত্যাদি সেই বিরোধিতারই ঐতিহাসিক প্রমাণ।

কিয়ায়ি এবং কৃষিজীবীদের ইসলামী আন্দোলনের শেকড় ছিল ইন্দোনেশিয়ার সামাজিক ঐতিহ্যের গভীরে। যার ফলে পুরিয়ায়িরাও পরবর্তী পর্যায়ে বাধ্য হয়েছিল জাতীয় এই গণজাগরণমূলক আন্দোলনে এসে যোগ দিতে। শেষ পর্যন্ত তারাও হল্যান্ডিদের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে কিংবা বলা যায় উনিশ শতকের সূচনালগ্নে জাতীয় আন্দোলন সংগ্রামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছিল।

১৯৬০ এর দশক থেকে মুসলমানরা তুরস্ক থেকে জার্মানিতে হিজরত বা অভিবাসন করেন এবং মুসলিম সমাজ গঠন করেন। এখন সেখানে মুসলমানদের সংখ্যা চল্লিশ লাখের মতো।

মুসলমানরা জার্মানিতে বহু মসজিদ, ইসলামী সংস্থা এবং ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। হামবুর্গে ইসলামিক সেন্টারের মতো মিউনিখ এবং আঁচে’তেও বিভিন্ন সংস্থা গড়ে উঠেছে। জার্মানিতে তৎপর এইসব ইসলামিক সেন্টারের কার্যক্রমগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তুরস্ক থেকে আসা মুসলমানরাই চালিয়ে থাকে। তুরস্কের ইসলামপন্থী দলগুলো সেদেশে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার উপযুক্ত ক্ষেত্র না পেয়ে তুরস্কের বাইরে চলে যায় এবং তাদের কর্মতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করে। বিশেষ করে তারা ইউরোপের দিকে যেতে পছন্দ করতো। এভাবেই তারা জার্মানি চলে যায় এবং নিজ দেশে কাজের উপযুক্ত ক্ষেত্র না পেয়ে বাধ্য হয়ে তারা জার্মানিতে তাদের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করে।

জার্মানিতে তাদের এরকম কার্যক্রম পরিচালনার একটি প্রতিষ্ঠান হলো ‘গোরুশ’ জাতীয় সংস্থা। ইরানেও ইসলামী বিপ্লবের বিজয় জার্মানিতে তৎপর ইসলামী দল ও সংস্থাগুলোর ভেতরে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছিল। মুসলমানদের কর্মতৎপরতার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক ছিল তাদের সন্তানদেরকে ইসলামী শিক্ষাদীক্ষা দেওয়া। জার্মানিতে মুসলমান ছাত্রদের শতকরা নব্বই ভাগ ইসলামী শিক্ষার ক্লাসগুলোতে যায় এবং শতকরা পঞ্চাশ ভাগ ছাত্র অংশ নেয় কুরআন শিক্ষার ক্লাসে। জার্মানির স্থানীয় মুসলমানরা বিশেষ করে যুবক শ্রেণী সেদেশে ইসলামী সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জার্মানির একজন খ্যাতিমান মুসলিমের নাম হলো ‘মুরাদ বেলফার্ড হফম্যান’। তিনি মরক্কোতে জার্মানির রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। মুসলমান হবার পর তিনি জার্মানির সমাজে ইসলামকে পরিচিত করানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

বেলজিয়ামের মোট জনসংখ্যার সাড়ে তিন ভাগই ছিলো মুসলিম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তারা উত্তর আফ্রিকা এবং তুরস্ক থেকে এই দেশে হিজরত করে। ১৯৭০ সালের দিকে ব্রাসেলসে সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৮০ সালের শেষ নাগাদ ৩০০ মসজিদ তৈরি হয় বেলজিয়ামে। বেলজিয়ামের মুসলমানরা প্রধানত মিশরের ইখওয়ানুল মুসলেমিন বা মুসলিম ব্রাদারহুড এবং মুসলিম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের কাছ থেকে প্রেরণা লাভ করেছে।

হল্যান্ডেও ১০ লাখের মতো মুসলমান রয়েছে। এই সংখ্যা হল্যান্ডের মূল জনসংখ্যার ছয় ভাগ। এখানকার মুসলমানরাও উত্তর আফ্রিকা এবং তুরস্ক থেকে এসেছে। ১৯৭৯ সালে হল্যান্ডে তুর্কিদের সাংস্কৃতিক ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে ইসলামী বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলার ধারা সৃষ্টি হয়। মসজিদসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ইসলামিক সেন্টার এতো বেশি গড়ে ওঠে যে ১৯৮০’র দশকে সেখানে মসজিদের সংখ্যা দাঁড়ায় পঞ্চাশে। হল্যান্ডের মুসলমানরা মুসলিম তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে সেখান থেকে ‘কেবলা’ নামক ম্যাগাজিন ছাপেন। এই কেবলা ইসলামী আদর্শ ও বিধি-বিধানগুলোর প্রচার প্রসারে নানামুখি প্রভাব ফেলেছিল।

ইউরোপের একটিমাত্র দেশ আলবেনিয়া, যেখানে পুরো জনসংখ্যার সত্তর ভাগই হলো মুসলমান। বলকানের ওপর ওসমানী আধিপত্যের সময় তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এদিক থেকে আলবেনিয়ায় মুসলমানদের ভিত যথেষ্ট মজবুত। সেখানে কমিউনিজমের পতনের ফলে ধর্মীয় বা মাযহাবি কর্মকাণ্ড পরিচালনার উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। সাবেক যুগোস্লাভিয়াতেও ত্রিশ লাখেরও বেশি মুসলমান বসবাস করতো। দেশটি ওসমানী সাম্রাজ্য থেকে বেরিয়ে আসার পর ব্যাপক চাপের মুখে পড়ায় বেশিরভাগ মুসলমানই তুরস্কে চলে যায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পর মুসলমানরা বহু সংস্থা গড়ে তুলেছিল। আলহেদায়া এবং মারহামাত নামের দুটি যুব সংগঠন চেষ্টা করেছিল বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনার মতো দেশ দুটোর আদলে স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাদের শক্তি খর্ব হয়ে যায় এবং তাদের নেতাদের কেউ কারাবন্দী হয় আবার কারো বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ হয়। ১৯৬০ এর দশকে যুগোস্লাভিয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে দূরত্ব বজায় রাখে এবং জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন গড়ে ওঠার পর যুগোস্লাভিয়ায় মুসলমানদের অবস্থার উন্নতি ঘটে। এ সময় বহু মাদ্রাসা এবং মসজিদ গড়ে উঠেছিল। মুসলিম বিশিষ্ট চিন্তাবিদ এবং জ্ঞানসম্রাট আলিয়া ইজ্জেত বেগোভিচ ইসলামী বিবৃতি প্রকাশ করার পর ইসলামী কর্মতৎপরতা উন্নয়নের দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নীত হয়।

ইসলামী বিপ্লবের জন্য যুগোস্লাভিয়া সরকার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তাই ১৯৮৩ সালে আলীয়া আরো ১২জন মুসলিম নেতাসহ দীর্ঘ মেয়াদে কারাবন্দী হয়ে পড়ে। যুগোস্লাভিয়া আলাদা হওয়ার পর বেশিরভাগ দেশ বিশেষ করে সার্বিয়ার মতো দেশ চেষ্টা করেছিল ইউরোপের ভেতর যেন কোনো মুসলিম দেশ গড়ে উঠতে না পারে। এই লক্ষ্যে বসনিয়ার মুসলমানদের ওপর তারা গণহত্যা চালিয়েছিল। এই গণহত্যার ফলে বসনিয়া মুসলমানরা উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে বসনিয়ার  মুসলমানদের মাঝে যেমন আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি পায় তেমনি পুরো মুসলিম উম্মাহর মাঝেও আত্মসচেতনতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

আমেরিকায় প্রথম পর্যায়ের মুসলমানরা ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ। দাস ব্যবসার জন্যে তাদেরকে আফ্রিকা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের বেশিরভাগই বাধ্য হয়েছিল নিজেদের নাম পরিচয় পরিবর্তন করতে। এর ফলে সামাজিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কৃষ্ণাঙ্গ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এক্স ফ্যামিলি’র পক্ষ থেকে এরকম একটি আন্দোলন গড়ে উঠে। ‘ম্যালকম এক্স’ এর নেতৃত্বে এ আন্দোলনটি গড়ে উঠেছিল। এই আন্দোলনটি ছিল মূলত মার্কিন সমাজে কৃষ্ণাঙ্গদের মর্যাদাহানী করার বিরুদ্ধে এবং তাদের ওপর বিচিত্র জুলুম নির্যাতন চালানোর বিরুদ্ধে এক ধরনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ। তিনি তাঁর নিজ ধর্ম ইসলামের জায়গায় খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলেন। সেইসাথে ফ্যামিলি নেইম ‘লিটল’ তাঁর পছন্দ হচ্ছিল না, কেননা এই নামটি শ্বেতাঙ্গ দাস ব্যবসায়ীরাই তাঁকে দিয়েছিল।

১৯৮০’র দিকে বহু মুসলমান আমেরিকায় গিয়েছিল একটা ইসলামী পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে। তাদের প্রচেষ্টায় তাবলিগ বা প্রচারের মাধ্যমে এবং মসজিদ মাদ্রাসা, ছাপাখানা, প্রকাশনাসহ ব্যাংকের মতো অর্থনৈতিক অনেক প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠে। এসবের পেছনে সবচেয়ে বেশি শ্রম ও মেধা ব্যয় করেছিলেন ভার্সিটি ছাত্ররা। এরপর একের পর এক গড়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বহু সংগঠন। এমস, এস, এ, মুসলিম ব্রাদারহুড এবং জামায়াতে ইসলামীর মতো সংগঠনগুলো এ সময়ই গড়ে উঠেছিল।

– মুসলিম পোর্ট