যাত্রীবাহী বিমান এবং গাড়ী আবিষ্কার হওয়ার পূর্বে পবিত্র ভুমি সমূহ ভ্রমন করা ছিল খুবই কষ্টসাধ্য এবং দুষ্কর। হিজাজের রেল প্রকল্পটি মূলত সেই সময়েই নেওয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পটি গ্রহন করেছিলেন উসমানী খিলাফাতের তৎকালীন খলিফা, খলিফা আব্দুল হামিদ খান। ইস্তানবুল থেকে হজ্জযাত্রীদের ভ্রমন যাতে সহজ সাধ্য হয় এই জন্য এই প্রকল্প গ্রহন করে হয়েছিল। এই জন্য এটা দামেস্ক হয়ে মক্কা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়েছিল, যাতে করে পুণ্য ভুমি মক্কা-মদিনা সফর কারী এবং হজ্জযাত্রী দের যাতায়াত সমস্যা দূরীভূত হয়। ইস্তানবুল থেকে পবিত্র মক্কা নগরীতে যেতে ৫ দিন সময় লাগবে বলে একটি ধারনা দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞগণ। যত্রতত্র সীমানা টেনে মুসলিম উম্মাহকে ভাগ করার পূর্বে এই লাইনটি স্থাপন করা হয়েছিল। সেই সময়ের নাগরিকদের ভ্রমন করতে কোন প্রকার ভিসা এবং পাসপোর্টের দরকার হত না। এই রেল পথ স্থাপনের অন্য একটি উদ্দেশ্য ছিল সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করা এবং আরব উপদ্বীপকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা।
নিচের ছবিতে দামেস্ক থেকে মক্কা পর্যন্ত সম্প্রসারিত রেললাইনটির প্রস্তাবিত ম্যাপটি। এই মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে যে, উসমানী খিলাফাতের রেল পথের সাথে হিজাজের রেলপথটি সংযুক্ত হয়েছে।
এই মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে যে, উসমানী খিলাফাতের রেল পথের সাথে হিজাজের রেলপথটি সংযুক্ত হয়েছে।
উসমানী খিলাফাতের খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের নেতৃত্বে ১৯০০ সালে এই কাজ শুরু হয় এবং ১৯০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মদিনা পর্যন্ত সম্পন্ন করতে সক্ষম হন।
নিম্নের ছবিটি মদিনা রেলওয়ে ষ্টেশনের উদ্বোধনকালে তোলা হয়।
বামেঃ মসজিদে আনবারিয়া, ডানেঃ মদিনা রেলওয়ে ষ্টেশন। যদিও এই রেলওয়ে ষ্টেশনটি এখন যাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয়েছে। নিম্নে জাদুঘরের ছবি
১৯১৩ সালে সর্বপ্রথম এই রেলওয়ে টি জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। দামেস্ক এটার প্রথম স্টপেজ হিসাবে নির্ধারণ করা হয়। এটি হজ্জযাত্রীগণ, ব্যবসায়ীগণ এবং সরকারী কর্মকর্তা গণ এই পথে যাতায়াত করতেন।
হজ্জযাত্রীগণ ক্যাটলিতে চা গরম করছেন।
হিজাজ ট্রেনের অভ্যন্তরীণ একটি কেবিন।
হিজাজের ট্রেন যাত্রীদের দৃশ্য।
বিভিন্ন বড় বড় শহরে প্রতিষ্ঠিত ষ্টেশন। যেমন আম্মান, দামেস্ক, হাইফা এবং জেরুজালেম।
হিজাজ রেলওয়ে স্টেশন, দামেস্ক।
হিজাজ রেলওয়ে ষ্টেশন, হাইফা (ফিলিস্তিন)
দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, হিজাজের এই ট্রেনটি কোন দিনই শেষ হয়নি। সুলতান আব্দুল হামিদ খানকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেওয়ায় এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে এই প্রকল্পটি আর আলোরমুখ দেখেনি। আরব বিদ্রোহের সময়, আরবগণ ব্রিটিশদের পক্ষ অবলম্বন করে উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই সময়ে উসমানী খলিফাগণ যেন রসদ না পাঠাতে পারে এই জন্য ব্রিটিশরা বিভিন্ন জায়গায় বোমা ফেলে রেল লাইনকে ধ্বংস করে দেয়। আরব লরেন্স নামক ছবিতে এই বিদ্রোহ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
চিত্রে, রেলওয়ে কে ধ্বংস করার জন্য আরব বিদ্রোহীগণ রাজা ফয়সালের নেতৃত্বে অগ্রসর হচ্ছে। ব্রিটিশরা তাকে ইরাকের রাজা হিসাবে নিয়োগ দেয়।
এখনো আরবের মরুতে সেই রেল লাইনের লাইন গুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
এমনকি, মরুভুমিতে ট্রেনের অংশবিশেষ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়।
উসমানী খিলাফাতের পতন হওয়ায় এই রেল পথ স্থাপনের কাজটি আজীবনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এটা দুঃখের বিষয় যে, হজ্জযাত্রী বহনের জন্য এই অসাধারণ পরিকল্পনাটি স্থগিত হয়ে যায় এবং যেটুকু কাজ হয়েছিল তাও পুরুপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। ইনশল্লাহ হিজাজ রেলওয়ে একদিন পুনরায় স্থাপিত হবে এবং মুসলিম উম্মাহকে পুনরায় একত্রিত করবে। যখন আবার সকলেই পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া সমগ্র মুসলিম উম্মাহ ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাবে।
– বুরহান উদ্দিন