খ্রিষ্টীয় ১০ম শতাব্দীতে সিরিয়ায় জন্ম নেওয়া মুসলিম বিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বেত্তা মরিয়ম আসতুরলাবী। এস্ট্রোল্যাব-সময় পরিমাপকের এক প্রাচীন প্রযুক্তি, আবিষ্কারের একজন অগ্রপথিক।
এস্ট্রোল্যাবের কলাকৌশন নির্ধারণের মরিয়ম আসতুরলাবীর অবিস্মরণীয় অবদানকে বিশ্ব একপ্রকার অবজ্ঞাই করেছে। কিন্তু ১০ম শতকে তার আবিষ্কার পরবর্তী বিজ্ঞানী সমাজকে সময় ও মহাশূন্যের ধারণাকে অতিসত্বর বিশ্লেষণে অনেক বেশি সাহায্য করেছিল।
এস্ট্রোল্যাব- গ্রহ মণ্ডলী, তারকারাজি, চাঁদ ও সূর্যের অবস্থান পরিমাপের এক প্রাচীন কার্যকর প্রযুক্তি। জ্যোতিঃশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিদ্যায় এর ব্যাপক ব্যবহার হতো। বিশেষত, মুসলমানরা তাদের কিবলা নির্ধারণে, নামাজের ওয়াক্ত কিংবা রমজান ও ঈদের সঠিক সময় জানতে এস্ট্রোল্যাব ব্যবহার করত।
এস্ট্রোল্যাব মূলত বৃত্তের মতো একটি যন্ত্র যার চারিদিকে চন্দ্র , সূর্য ও গ্রহমন্ডলের অবস্থান ও সময়ের পরিমাপক অঙ্কিত থাকতো। তথ্য সংগ্রহ ও নিরূপণে ঘড়ির কাটার ন্যায় এর কাঁটা পরিবর্তিত হতো।
ধারণা করা হয়, এস্ট্রোল্যাবের জন্ম প্রাচীন গ্রিসে। কিন্তু তার নকশা আবিষ্কৃত হয়েছে মুসলিম বিশ্বে।
খ্রিস্টীয় ১০ম শতকে বিখ্যাত পারসিক মুসলিম জ্যোতির্বিদ ‘আব্দুর রহমান আল সুফি’ তারকারাজির অবস্থান নির্ণয় থেকে শুরু করে কাবা ঘরের অবস্থান বা স্থাপনা সমূহের উচ্চতা পরিমাপসহ এস্ট্রোল্যাবের বহুজাতিক ব্যবহার আবিষ্কার করেছিলেন।
এস্ট্রোল্যাব মূলত চার অংশে গঠিত:
১.প্লেট
২. স্থির তারকারাজি ও সৌর অয়ন বৃত্তের এক বিশ্লেষণ অংক
৩. বিভিন্ন অক্ষাংশের জন্য আলাদা আলাদা প্লেট
৪. একটি পেরিস্কোপ।
ইসলামিক এস্ট্রোল্যাব গুলোতে ধর্মীয় অন্তর্লিখন পাওয়া যায় । যেমন কোরআনের আয়াত, অনুপ্রেরণামূলক উক্তি, ধর্মীয় কথন এবং হিজরী সময়।
মরিয়ম আস্ত্রুলবি তার পিতা আল ইহয়া আস্ত্রুলবির এস্ট্রোল্যাবের কাজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। বাগদাদের এক এস্ট্রোল্যাব নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষানবিশ ছিলেন। তিনি তার অর্জিত ধারণা ও জ্ঞানগুলো তার মেয়ের সাথে আলোচনা করতেন যা মরিয়মকে এ ব্যাপারে আরো বেশি উৎসাহিত করে তোলে।
তৎকালীন বাগদাদের বিখ্যাত এস্ট্রোল্যাবার “মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ নাসতুলুসের” থেকে মরিয়ম ও তার পিতা শিক্ষা নিয়েছিলেন। যিনি ৯২৭/৯২৮ অব্দে এস্ট্রোল্যাব আবিষ্কার করেন।
বর্তমানে, তার আবিষ্কৃত এস্ট্রোল্যাব কুয়েতে “ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম” এবং কায়রোর “ইসলামিক আর্ট মিউজিয়ামে” সংরক্ষিত রয়েছে।
মরিয়ম ছিলেন খুবই মেধাবী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জ্যোতির্বিদ যিনি গণিতের নির্ভুল হিসাব ও তার ফলাফলের প্রতি অবিচলিত ছিলেন। যোগাযোগ এবং পরিবহনে এস্ট্রোল্যাব ব্যবহারের নিখুঁত ব্যবহার নিশ্চিতকরণেও তার অবদান অসামান্য।
পাশাপাশি, মরিয়ম আস্ত্রুলবি এস্ট্রোল্যাবের আনকোরা নকশাকাঁরও ছিলেন। বাগদাদের শাসক “সাইফুদ-দৌলা ” তার নিখুঁত ও উদ্ভাবনী নকশা দ্বারা আকৃষ্ট হয়েছিলেন। শুধু তাই না, তিনি মরিয়মকে আলেপ্পোর কোর্টে দায়িত্বও দিয়েছিলেন।
পাশাপাশি, তিনি নৌচালনা ও সময় সংরক্ষণ প্রযুক্তি আবিষ্কারে অবদান রেখেছিলেন।
১৯৯০ সালে পালেমোর মানমন্দির থেকে হেনরি ই,হল্ট গ্ৰহানু আল-ইহয়া ৭০৬০ আবিষ্কারের পর সেটি মরিয়মের নামে নামকরণ করা হয়।
জ্যোতির্বিদ্যার অগ্রদূত সিরিয়ান মুসলিম নারী মরিয়াম আসতুরলাবী আধুনিক সময়ের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবনে উৎসাহী সকল নারীদের অনুপ্রেরণার বাতিঘর।
বিজ্ঞান ও এস্ট্রোল্যাবের প্রতি মরিয়ম আসতুরলাবী অনন্য উৎসাহের জন্য নাইজেরি-আমেরিকান লেখক “নেন্দি ওকরাফোর” মরিয়মের গল্পকে ঘিরে তার উপন্যাস “বিন্তি” লিখেছিলেন যা তাকে নেবুলা অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেছিল।
লিখেছেন- আব্দুল্লাহ আল যুবায়ের