হাউসা স্থাপত্য বিখ্যাত একটি স্থাপত্য শিল্প। এ স্থাপত্য অধিকাংশক্ষেত্রে উত্তর নাইজেরিয়া অঞ্চলে দেখা যায়। নাইজেরিয়ান স্থাপত্য শিল্পের মধ্যে সাংস্কৃতিকভাবে হাউসার সৌন্দর্য ভীষণভাবে পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। হাউসা শিল্পটি হাজার হাজার বছর ধরে স্থাপনার প্রলেপে উজ্জ্বল রঙিন সুনিপুন ভাবে খোদাই হয়ে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করে চিত্রিত হয়ে আছে।
হাউসা স্থাপত্য শিল্প হচ্ছে উত্তর নাইজেরিয়ার স্থাপত্য শিল্পীদের নান্দনিক এক শিল্প। যে শিল্পের ছোঁয়া পেয়ে আকর্ষণীয় রূপ ধারণ করে মসজিদ থেকে শুরু করে বাসস্থান গুলোর দেওয়ালে দেওয়ালে এবং জনসাধারণের জন্য নির্মিত ভবন ও দরজায় ঐতিহ্যবাহী এই হাউসা শিল্প আবৃত্ত হয়ে আছে। এই স্থাপত্য হলো ইসলামী সভ্যতার অন্যতম একটি শিল্পও।
হাউসা হলো মূলত পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার বিচিত্রময় বৃহত্তম নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। তারা নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী হলেও সাংস্কৃতিকভাবে তারা এক জাতীয়। এই বৈচিত্রময় নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী সাধারণত দক্ষিণ ও উত্তর নাইজেরিয়ার সাহেলিন এবং সাভানা গোত্রে বসবাস করে। এই নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর হাত ধরেই উঠে এসেছে ঐতিহ্যবাহী হাউসা শিল্প। এদের উভয়ের উদাহরণ হচ্ছে ঠিক শরীর ও মনের সাথে আন্ত:সম্পর্কের মতো।
পাশাপাশি, হাউসা হচ্ছে মিশ্র স্থাপত্য শিল্প। বিশাল বিস্তৃত স্থাপত্য শিল্পের একক চিহ্ন হচ্ছে হাউসা। এ শিল্পের প্রতিটি ধাপ বেশ সুশৃঙ্খল শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে, যা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে এখনও বিদ্যমান রয়েছে।
স্থাপত্য শিল্প ইসলামী সভ্যতা দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। এক কথায় বলতে গেলে, স্থাপত্য শিল্প ইসলামী সভ্যতারই সৃষ্টি, যার ফলে এ শিল্প অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং যা তার নিজস্ব অঞ্চলের সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলে।
এই শিল্পের কারুকাজে সাধারণ উপকরণ ব্যবহারিত হয়। যেমন: কাদা,পাথর,ঘাস,ভুট্টার ডালপালা এবং ছাদ তৈরীর জন্য খড় ব্যবহৃত হয়। দেওয়ালে প্রলেপ দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় মেশিনে প্রস্তুতকৃত কাদামাটি ও রোদে শুকানো ইটও খড়। এই স্থাপনার প্রবেশদ্বার গুলো সংকুচিত হওয়ায় আসা-যাওয়া করতে সমস্যা হয়। এই স্থাপত্য শিল্প শতভাগ নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব। স্থাপত্যটির শিল্প বরাবরের মতো নতুনত্বও বহন করে। ফলে এটি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নতুন করে ফুটিয়ে তোলার মতো একটি সমৃদ্ধ স্থাপত্য।
ঐতিহ্যবাহী হাউসা স্থাপত্য শিল্পকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-
ক্যালিগ্রাফি, পৃষ্ঠতল নকশা, অলংকার সমৃদ্ধ বা শোভাবর্ধক নকশা।
এই তিন প্রকারের নকশা এখনও সাধারণ মানুষ এবং আমিরদের প্রসাদে দেখা যায়। এই স্থাপত্য শিল্প কানো নাইজেরিয়ায় মূল মাটির কাঠামো রয়ে গেছে। বিশ্বের সংরক্ষিত কিছু স্মৃতিস্তম্ভ এবং মসজিদ বাদে এই ঐতিহ্যবাহী হাউসা শিল্প সমগ্র মহাদেশ ও গ্রামীণ সম্প্রদায়ের নিকট স্থায়ী সংস্কৃতি হিসেবে চর্চা হয়ে আসছে। এই শিল্পের শিল্পীরা স্থাপনার ছাদ নির্মাণকে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মনে করে। স্থাপনার গুণগত মান এবং নকশার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ব্যবহার প্রয়োগ করা হয়।
হাউসার স্থাপত্য সজ্জায় দেওয়ালের খোদাই গুলি নান্দনিক শিল্পীদের দ্বারা নকশা করা হয়েছে। আকর্ষণীয় এবং আলংকারিক ধরণগুলো একটি পরিসীমার মধ্যে ব্যবহার করা হয়। যার মধ্যে হাউসা শিল্পের মৌলিক ধরন এবং কারু শিল্পের নিদর্শন গুলো পাশাপাশি লতাপাতা চিত্রবিচিত্র বক্ররেখা- বিজাড়িত অলংকরণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পুরুষ -পরম্পরাগত হাউসা শিল্পীরা হস্তকর্মের দক্ষ এবং নকশা খোদাই করার আগে যে শিল্পী ক্ষুধিত মূর্তি আঁকতে পারেন, তাদের পছন্দ করা হয়।
হাউসের শিল্পে ব্যবহৃত হয় সাধারণ নকশাগুলো হলো-
দাগি নট, অফিসের স্টাফ, তলোয়ার এবং বেশ কিছু আকর্ষণীয় ধরন। নকশার এই ধরণগুলো বড় এবং মাঝারি রুপে চিত্রায়িত করা হয়। কিন্তু, বিশ শতকের আধুনিক শিল্পীরা নকশার ধরনগুলো ছোট বড় ধরণ মিলিয়ে কারুকাজ করে থাকে। ফলশ্রুতিতে, স্থাপনার সম্মুখভাগের জটিল নকশা সাজসজ্জা সম্পত্তির মালিকের সম্পদ এবং সামাজিক অবস্থান প্রদর্শন করে।
হাউসাও স্থাপত্য শিল্পের চমৎকার নিদর্শন হলো- প্রাচীন শহর জাজ্জাউ (জারিয়া) এর প্রজ্জ্বলিত আমিরের প্রসাদ।
হাউসা স্থাপত্যের মূল উপাদান হলো, চূড়া। চূড়া হলো এই শিল্পের আচ্ছাদিত স্থাপনার একটি নান্দনিক বৈশিষ্ট্য। ফলে এ শিল্প গুলোর নানান আকার এবং কাঠামোযুক্ত বৈশিষ্ট্যে পায়।
শাড়ি শিংগুলির মতো, জাস্কওয়েকে মূলত ছাদের প্যারাপেট প্রাচীরে চারপাশে উলম্ব অনুমানকে শক্তিশালী করা হয়েছে। ফলে শিল্পীদের ছাদে উঠতে সহজ হয়।
ঐতিহ্যবাহী হাউসা শিল্পের ছোঁয়ায় নির্মিত স্থাপনার জন্য আধুনিক নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার শুধুমাত্র সংস্কৃতি রক্ষার জন্য নয়, বরং মজবুত স্থাপনা নির্মাণের জন্যও জরুরী বটে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের নির্মাণ কাজে সাশ্রয় এবং সাংস্কৃতিকভাবে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রেও এ শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য।
অনুবাদ: আসিফ মাহমুদ