সংস্কৃতি ও অবক্ষয় এখন নতুন করে আলােচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। এ নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তির কারণে বাংলাদেশের মানুষের সংস্কৃতি কী এবং এ দেশের সংস্কৃতির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য কী, তা নিয়ে তর্ক ওঠে। ফলে সংস্কৃতির মূল বিষয় নিয়ে অস্পষ্টতা দূর করা বিশেষভাবে প্রয়ােজন ।
সংস্কৃতি কী এবং কী নয়, এ সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে ১০০ বছরের। এ বিতর্ক বেড়ে যায় মার্কসিজমের উত্থানের পর। মার্কসিজমের উত্থানের পর একটি নতুন দর্শন আসে Art for Life’s Sake নামে । তখন এ নিয়ে একটি বিতর্ক দেখা দেয় যে, Art for Art’s sake না Art for Life’s Sake? এ বিতর্ক আগে ছিল না। কমিউনিস্টরা এ বিতর্ক তুলে ধরেন । এটি করতে গিয়ে তারা বাড়াবাড়িও করেছেন । আর্ট এখানে সংস্কৃতি অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। সংস্কৃতির ভেতর যে একটি সৌন্দর্য থাকতে হবে, তা তারা হাইলাইট করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন । তারা এটিকে পুরােপুরি উপেক্ষা করেছেন । অন্য দিকে, যারা ‘আর্ট ফর আর্টস সেক’-এর পক্ষে, তারাও এ ইস্যুকে রাজনীতিকায়ন করেছেন। তারা বলেন, আর্ট আর্টের জন্য। অর্থাৎ, এর মধ্যে সৌন্দর্য থাকতে হবে; সৌন্দর্যের চেতনা থাকতে হবে, যা কিছুই সুন্দর করে এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত করে জীবনের বিভিন্ন দিক, সাহিত্য ও শিল্পকলায়, তা-ই সংস্কৃতি।
সংস্কৃতির প্রশ্ন যদি আমরা বিচার করতে চাই তাহলে সেখানে দুটো দিকই থাকতে হবে। জীবনের জন্য তা প্রয়ােজনীয় হতে হবে। জীবনের জন্য হবে, জীবনকে বাদ দিয়ে নয়। এর মাধ্যমে জীবনকেই ধারণ করতে হবে। এটিই সত্য কথা। অন্য দিকে এটি সত্য, যা কিছু সুন্দর নয় তা আর্ট বা সংস্কৃতি হবে না, তা জীবনের জন্য হলেও। কাজেই দুটি উপাদানই প্রয়ােজন: দু’টিই সত্য। এ বিতর্কের পরিসমাপ্তি প্রয়ােজন। তবে আমার মনে হয় বর্তমানে এর পরিসমাপ্তি কিছুটা হয়ে গেছে । মার্কসিজমের পতনের পর এ বিতর্ক আর খুব একটা আছে বলে মনে হয় না। এ বিতর্ক ইসলামপন্থীদেরও দরকার নেই । ইসলামপন্থীদেরকেও সংস্কৃতির মধ্যে দু’টি বিষয়ের সমন্বয় ঘটাতে হবে ।
সংস্কৃতির বিভিন্ন ডাইমেনশন আছে । যেমন- সঙ্গীত, সাহিত্য থেকে শুরু করে নাটক সিনেমা সব কিছুই সংস্কৃতির মধ্যে রয়েছে। আরেক দিক থেকে বলতে গেলে বলা যায়, মানুষের জীবনাচারই সংস্কৃতি। মানুষের পুরাে জীবনপদ্ধতিই সংস্কৃতি । সে হিসেবে, সংস্কৃতির অর্থ আরাে ব্যাপক।
সংস্কৃতির সংজ্ঞার ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে কিছুটা মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু মৌলিকভাবে আমরা স্বীকার করি, সংস্কৃতি একটি ব্যাপক বিষয়। সংস্কৃতি পুরাে জীবনব্যবস্থার সাথেই সংশ্লিষ্ট। সংস্কৃতি প্রতিটি জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর যেমন অনেক দিক বা ডাইমেনশন রয়েছে, তেমনি সর্বোপরি, এটি জীবনকে সার্ভ করতে হবে। সৌন্দর্যকেও সার্ভ করতে হবে। আবারাে বলি, এটিকে সুন্দরও হতে হবে এবং জীবনের জন্যও হতে হবে। সংস্কৃতিকে কয়েকটি ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে হবে।
সংস্কৃতির প্রথম ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস। সুস্থ বিশ্বাসের ওপর সংস্কৃতিকে দাঁড়াতে হবে। যদি দুর্নীতিগ্রস্ত চিন্তার (Corrupt Thought) ওপর সংস্কৃতি দাঁড়ায়, সে সংস্কৃতিও দুর্নীতিগ্রস্ত হবে। কারণ, বিশ্বাস আচরণকে প্রভাবিত করে । সংস্কৃতি হচ্ছে আচরণ । তার পেছনে রয়েছে বিশ্বাস । এ বিশ্বাস দুর্নীতিগ্রস্ত হলে আচরণও সে রকমই হবে। বিশ্বাস সুস্থ হলে সেটিও সুস্থ হবে।
এখানে মুসলিম জাতির কথা বললে তার ভিত্তি অবশ্যই তাওহীদ হতে হবে। তাওহীদ বলতে আমরা বুঝি একজন স্রষ্টা রয়েছেন । সব সৃষ্টির একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। আমরা মানুষ; আল্লাহর প্রতিনিধি । আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তার মিশনকে এ বিশ্ব, মহাকাশ সর্বত্র কার্যকর করা । এ জন্য মুসলিম সংস্কৃতিকে সবসময়ই শিরকমুক্ত হতে হবে। মুসলিম সংস্কৃতি এমন হতে হবে, যেন খলিফার মর্যাদা রক্ষা পায় । আল্লাহর যে প্রতিনিধি মানুষ, তার সাথে খাপ খায়। ইসলামের ক্ষেত্রে এটি হচ্ছে তাওহীদ। তেমনি যদি আমরা ইসলামের বাইরে গিয়ে দেখি, তাহলে অমুসলিমদের মধ্যেও সুস্থ বিশ্বাস থাকতে হবে।
সেটি তাওহীদ না-ও হতে পারে। সেটি আমার দৃষ্টিতে সঠিক নাও হতে পারে। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে যা-ই হোক না কেন, যদি স্রষ্টার ওপর বিশ্বাস থাকে, মানবতাবাদী হয়, তার ওপরেও যে সংস্কৃতি গড়ে উঠবে সেটিও ভালাে হবে। মানবতার একটি অংশ মুসলিম। বাকি অংশ অমুসলিম। তাদের সংস্কৃতি ভাল হবে যদি তা সুস্থ বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে হয়। তাদের ক্ষেত্রে সেটি স্রষ্টার ওপর হতে হবে । যদি নাস্তিকতার ওপর হয়, তাহলে ক্ষতি হবে । যদি স্রষ্টার অস্তিত্বের ওপর ভিত্তিশীল হয়, তাহলে তা নাস্তিকতার চেয়ে অনেক ভালাে হবে, এতে কোনাে সন্দেহ নেই । সেটি যদি মানবতাবাদী হয়, তাহলে অবশ্যই ভালাে হবে । কিন্তু সেটি যদি জাতিপূজা বা গােত্রপূজা হয়, তাহলে সেটি হবে অসুস্থ সংস্কৃতি। তাহলে আমরা বলতে পারি, সংস্কৃতির জন্য সুস্থ বিশ্বাস লাগবে।
সংস্কৃতির দ্বিতীয় ভিত্তি হলাে শালীনতা যা অশ্লীলতামুক্ত হতে হবে। অবশ্য এটি প্রথমটির সাথে সম্পর্কযুক্ত। যদি সংস্কৃতি সুস্থ বিশ্বাসের ওপর গড়ে ওঠে, তাহলে তা অশ্লীলতামুক্ত হবেই। কারণ কোনাে সুস্থ বিশ্বাসই বলে না, অশ্লীলতা ভালাে । এ সংস্কৃতি অবশ্যই মানবজাতির জন্য হতে হবে। সংস্কৃতিকে মানবজাতির মহৎ উদ্দেশ্য পূরণ করতে হবে। মার্জিত হতে হবে, মানবতাবাদী হতে হবে; কল্যাণধর্মী হতে হবে ।
সংস্কৃতির তৃতীয় ভিত্তি হচ্ছে- সৌন্দর্য চেতনা। এখানে সুন্দরের চেতনা থাকতে হবে । কোনাে কিছুই অসুন্দর করা যাবে না। সৌন্দর্যমণ্ডিত হতে হবে।
কাজেই সার্বিকভাবে বলা যায়, সংস্কৃতির ভিত্তির জন্য একটি সুস্থ বিশ্বাস থাকতে হবে । মানবতাবাদীও মানুষের প্রয়ােজনে হতে হবে । অশ্লীলতামুক্ত হতে হবে । কল্যাণধর্মী এবং সৌন্দর্য-চেতনামণ্ডিত ও সৌন্দর্য-বুদ্ধিমণ্ডিত হতে হবে।
সংস্কৃতি কি মানুষের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত? নিয়ন্ত্রিত হলে কতটুকু? এটি আসলে ইয়েস ও নাে’র প্রশ্ন। এটি ঠিক যে, সংস্কৃতিকে মানুষ নির্মাণ করে। একা এক ব্যক্তিই সংস্কৃতি নির্মাণ করে না। অনেকে মিলে, অনেক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে একটি সংস্কৃতি শত বছরে, হাজার বছরে গড়ে ওঠে। তাই যদি হয়, তাহলে এটি কে গড়ল? মানুষ গড়ল। কিন্তু কোনাে এক ব্যক্তি বা এক প্রজন্মের বা এক বংশের ওপর এর কোনাে নিয়ন্ত্রণ নেই। এ জন্যই আমি বিভিন্ন সময় বলে থাকি, সংস্কৃতি নিয়ে খেলা চলবে না। সংস্কৃতি মানুষের গভীর চেতনা থেকে উৎসারিত। এটি খুব স্পর্শকাতর বিষয়। সংস্কৃতি নিয়ে সতর্কতার সাথে এগােতে হবে। ইসলামপন্থীদের এ ব্যাপারটি ভালোভাবে বুঝতে হবে, আমার অনেক কিছু পছন্দ হবে না; কিন্তু সেটিকে সরাতে হবে ধীরে ধীরে। ধৈর্য ধরে সরাতে হবে। যেটি রাখলে চলে, সেটি রাখতে হবে। কারণ, ইসলামের শুরুতেই রাসূল (সা,), সরাসরি ইসলামবিরােধী নয় এমন স্থানীয় রাতিনীতি, আচার-আচরণকে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আরব আচার প্রথাকে মেনে নিয়েছিলেন।
ইবনে তাইমিয়ার একটি বিখ্যাত ফতােয়া আছে,
“যেকোনাে দেশের স্থানীয় কাস্টমস (রীতিপ্রথা) যদি সরাসরি ইসলামবিরােধী না হয়, একেবারে সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ না হয়, তাহলে সেটি থাকবে”।
আমরা এ ব্যাপারে অনেক সময় কিছুটা হঠকারিতা করে বসি; কিছুটা বাড়াবাড়ি করে বসি। এগুলাে থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে। ইসলামের যে মহত্ত্ব, সামগ্রিকতা, ব্যাপকতা এবং বহু মত ও পথের সুযােগ আছে, সে বিষয়টি মনে রাখতে হবে।
সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন মতামতকে মানতে হবে । এখানে বিভিন্ন মত ও পথের স্বীকৃতি আমাদের দিতে হবে । বিশ্বব্যাপী ইসলামের যে সংস্কৃতি, তার তাে একেক দেশে একেক সংস্করণ । ইন্দোনেশিয়ার ইসলামী সংস্কৃতি রূপে রসে রঙ্গে একই সাথে ইসলামিক হবে, ইন্দোনেশিয়ানও হবে এবং এই দুইয়ের মধ্যে কোনাে দ্বন্দ্ব থাকবে না। সংস্কৃতির ভেতর যদি সুস্পষ্টভাবে ইসলামবিরােধী কোনাে মৌল উপাদান না থাকে তাহলে তা ইসলামী সংস্কৃতিতে অন্তর্ভুক্ত হতে বাধা নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযােজ্য। তেমনিভাবে তা প্রযােজ্য মরক্কো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে। প্রত্যেকের নিজস্ব রঙ হবে। আমার মনে হয় এটি অনেকটা এ রকম হবে যে, একই বাগানে ১০০টি ফুলগাছ। এ বিষয়গুলাে ইসলামি সংস্কৃতি কর্মীদের ভেবে দেখা দরকার। এ বিষয়টি বিচার করে দেখা দরকার ।
এ অবস্থায় আগামী দিনগুলােতে সংস্কৃতি কতটুকু ভিন্ন থাকবে, বলা মুশকিল । আমার মনে হয়, সংস্কৃতির অনেক কিছু এক হয়ে যাবে। যেমন- পােশাক-পরিচ্ছদ বিশ্বব্যাপী ক্রমেই কাছাকাছি চলে আসতে পারে। এটি অসম্ভব নয় । স্বীকার করতে হবে, ইতােমধ্যেই পুরুষ পােশাকের ক্ষেত্রে শার্ট-প্যান্ট প্রায় এক হয়ে গেছে। যদিও নারী পােশাকের ক্ষেত্রে ঠিক অন্য রকম হয়েছে। মুসলিম বিশ্বে তাে নারীর পােশাক নানা-ভাবে অন্য রকমই রয়ে গেছে। ফলে আমি মনে করি, অনেক ক্ষেত্রে কাছাকাছি এলেও যেসব ক্ষেত্রে এক হবে না, সেসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন থেকে যাবে। যেমন- খাওয়া- দাওয়া, এর উপকরণাদি একেক জায়গায় একেক রকম থেকে যাবে। আবার প্রতিটি এলাকার নিজস্ব গানের সুর আলাদা থেকে যাবে। প্রতিটি এলাকার নিজস্ব প্রকৃতি, নদী, সমুদ্র, বন, ফসল ও মাঠ আছে । এর এক ধরনের আলাদা সুর আছে। সুতরাং গানে, সঙ্গীতে পার্থক্য থেকে যাবে। প্রতিটি এলাকার জনগোষ্ঠীর নিজস্বতার জন্য এবং অন্য জনগােষ্ঠী ও এলাকার ভিন্নতার জন্য সাহিত্যেও একটি পার্থক্য থেকে যাবে।
আমাদের অবশ্যই পরিকল্পিত সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে হবে। ‘লা ইকরাহা ফিদ্দীন’-এর ভেতরও এ তাৎপর্য রয়ে গেছে। রাসূল (সা.) ইহুদিদের সাথে প্রথম চুক্তিতেই তাদের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতা দিয়ে দিলেন। সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা দিলেন । এটি প্রমাণ করে, সংস্কৃতিকে জোর করে বদলে দেয়া ইসলামও নয়, মানবতাও নয়।
এখানে আগ্রাসনের ব্যাপারেও আমাদের এ দিকটি খেয়াল রাখতে হবে। পাশ্চাত্যের কালচার দুর্ভাগ্যজনকভাবে হলেও বস্তুবাদের ওপর ভিত্তিশীল। বস্তুবাদ হলাে, ভােগবাদ ও স্বার্থপরতা। এ কারণেই কালচার খুব নােংরা হয়ে গেছে । কালচার নিছক নারী কেন্দ্রিক-ই শুধু নয়, নারীর অপব্যবহার কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। এটিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার যে প্রবণতা, তা রুখতে হবে। এ জন্য পশ্চিমাদের মধ্যে যারা ভালাে তাদেরও উৎসাহিত করতে হবে। পশ্চিমা বস্তুবাদ নাস্তিকতা না হলেও নাস্তিকতার কাছাকাছি। এর বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। এ বস্তুবাদ মানবতার জন্য কল্যাণকর নয়।
সংস্কৃতির বাইরে কোনাে মানুষ থাকতে পারে না। সমাজ হতে পারে না তাই মানুষের পক্ষে সংস্কৃতি বিমুখ হওয়াও সম্ভব নয় । কালচারের মূল দিক হচ্ছে জীবনাচার, পুরাে জীবন। প্রত্যেকটি কথা, প্রত্যেকটি উচ্চারণ, বক্তব্য, চলাচল, ভ্রমণ, কথন সব কিছু হচ্ছে তার কালচার । আমরা খুব গভীরভাবে না দেখার কারণে গান-নাচকেই বড় ভেবে এসব বিষয়কে ছােট ভাবি । কিন্তু এগুলাে না থাকলেও একটি জাতির পক্ষে সংস্কৃতিবান হওয়া সম্ভব। এগুলাে বাদ দিয়েও জাতি সংস্কৃতিবান হতে পারে অনেক জাতিই আছে, যাদের গান খুব পপুলার নয়, যাদের নাচ নেই, তাতে কিছু আসে-যায় না।
আমরা বিনােদনের নামে যা খুশি তাই করতে পারি না। জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে বিনােদন। এর প্রয়ােজন আছে। আধুনিক বিশ্বে বিনােদনকে গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষের দৈনিক জীবনের একটি বড় অংশ রাস্তায় চলে যায়। তার সাথে অফিসের সময়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষ ব্যস্ত। এ অবস্থায় তার জন্য অবশ্যই সুস্থ বিনােদনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিনােদনকে সুস্থ হতে হবে; অসুস্থ হওয়া যাবে না। অশ্লীল হওয়া যাবে না। কু-স্বভাব সৃষ্টি করে, অপরাধ ছড়ায়, এমন কিছু করা যাবে না। খারাপ যা খুব কম ঘটে, তাকে নাটকে এনে জাতিকে জানাতেই হবে- তা আসলে জরুরি নয়। সাহিত্যের নামে যেটি করা হয় তা হলাে একটি পরিবারের দুর্ঘটনা পুরাে জাতিকে জানানাে হয় । কিন্তু তা যদি সুন্দর কিছু হতাে, তাও কথা ছিল ।
আসলে বিনােদনের মধ্যে একটি সীমা থাকতেই হবে। সে সীমা থাকতে হবে আইন ও প্রথার মাধ্যমে। এ ব্যাপারে স্বাধীনতার নামে আমরা কদাচারকে অনুমােদন করতে পারি না। আমরা এমন স্বাধীনতা চাইনা, যে স্বাধীনতা মানুষকে অমানুষ বানায়।
সূত্রঃ বিআইআইটি কর্তৃক প্রকাশিত “উন্নত চিন্তা, মহৎ জীবন, আদর্শ সমাজ” গ্রন্থ।