মুসলিম পোর্ট

রাজধানী শহর ঢাকার যানজটে বছরে জিডিপির সরাসরি ক্ষতি ২ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি মাইনাস ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। ঢাকার অতি প্রবৃদ্ধির (ওভার গ্রোথ) কারণে ক্ষতি হয় জিডিপির ৬ শতাংশ। রাজধানীর যানজটে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি বাদ দিয়ে বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, যা জাতীয় বাজেটের প্রায় ২০ শতাংশের সমান। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে শহুরে মানুষের বেশির ভাগেরই বাস ঢাকায়। দেশের প্রায় ১৬ কোটি জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ বাস করে প্রধান শহরগুলোতে। শুধু ঢাকাতে বাস করে ১১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। ১০ লাখের মতো মানুষ বাস করে এমন শহর রয়েছে পাঁচটি। উন্নয়নের বেশির ভাগ ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় মানুষ রাজধানীতে আসছে। তবে অনেকে জীবিকার তাগিদে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। ২০৩০ সালে এ শহরের জনসংখ্যা হবে তিন কোটি।
ঢাকায় যানজট সমস্যা প্রতিদিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বিশেষ করে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, বিপণিবিতান ইত্যাদি জায়গায় যাতায়াত করা এখন দুঃস্বপ্নের মতো। যানজটে শ্রমঘণ্টা অপচয়জনিত জাতীয় উৎপাদনশীলতার ক্ষতি, জ্বালানি সাশ্রয় বা অসহনীয় দুর্ভোগ কমাতে কোনোই কাজে লাগছে না। ঢাকার অসহনীয় যানজটের মুখ্য কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ন। এ শহরের অতি সম্প্রসারণ অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি হয়েছে। অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ঢাকায় যানজটের একটি কারণ, বিভিন্ন এলাকার রাস্তার নির্মাণকৌশল। ক্রসিংগুলোতে সড়কের দু’টি পথ কখনোই একসাথে সচল থাকে না। রিকশার আধিক্যেও যানজট লেগে থাকে। এ ছাড়া রাস্তা বা ফুটপাথে অবৈধ দখলেও কোথাও কোথাও যানজট হয়। রাজধানীর যানজট কমাতে যেসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, কোনোটাই কাজে লাগছে না।

রাজধানীর যানজটে বিপুল আর্থিক ক্ষতি

ঢাকাকে সবার জন্য বসবাসের উপযোগী করতে সুদূরপ্রসারী ও সমন্বিত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন এখন সময়ে দাবি। রাজধানীর যানজট নিরসনে এ মহানগরে যতটুকু সড়কপথ আছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিছু পদক্ষেপ জরুরি ভিত্তিতে নিলে কাজে আসতে পারে। নগরীর পার্কিং সমস্যা, পরিবেশদূষণ ও জনদুর্ভোগের পরিপ্রেক্ষিতে আশু করণীয় হলো- পার্কিং চাহিদা নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়ন, বিনা মূল্যে পার্কিং বন্ধ করা এবং অবৈধ পার্কিংয়ে জরিমানার ব্যবস্থা করা। যেহেতু ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাধিক্য যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচ্য; সে জন্য প্রাইভেট কারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে। স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট এসটিপির হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকায় কম-বেশি ১৫ শতাংশ যাত্রী প্রাইভেট কারে যাতায়াত করে। অথচ ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে থাকে ৭০ শতাংশেরও বেশি রাস্তা। বাকি ৮৫ শতাংশ যাত্রী গণপরিবহন ব্যবহার করেন। দেখা যাচ্ছে- গণপরিবহন সড়কের মাত্র ৩০ শতাংশ জায়গা দিয়ে চলাচল করে। যেসব দেশের বড় বড় শহরে আগে যানজট ছিল, এখন নিয়ন্ত্রিত; সেসব দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ঢাকার যানজট নিরসনে পরামর্শ নেয়া দরকার। অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে ফুটপাথ ও অন্যান্য রাস্তা দখলমুক্ত করা দরকার। এ ছাড়া লেভেল ক্রসিংগুলোতে ওভারব্রিজ নির্মাণ করা, গাড়ির চালককে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে বাধ্য করার পাশাপাশি দেশী-বিদেশী সদস্যের সমন্বয়ে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন করে যানজট নিরসনে কাজ করা যায়।
রাজধানীর নান্দনিক বাসযোগ্যতা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে স্বাভাবিক চেহারায় ফিরিয়ে আনতে হলে উন্নয়ন বিকেন্দ্রীকরণ করে ঢাকার মতো আরো কয়েকটি শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নগর গবেষণায় আরো মনোযোগ এবং বিনিয়োগ করা জরুরি। তবে সবার আগে দরকার যানজট নিরসনে সরকারকে আরো বেশি মনোযোগী হওয়া।