মুসলিম পোর্ট

গাজায় মৃত্যুর সংখ্যা ৮৪,০০০-তে পৌঁছেছে, নতুন এক গবেষণায় দাবি

এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে দখলদার ইজরায়েলের সরাসরি সামরিক অভিযানের ফলে গাজায় অন্তত ৭৫,২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সংখ্যা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের (GMoH) দেওয়া একই সময়ের হিসাবের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। GMoH -এর সেই সময়ে আনুমানিক ৪৫,৬৫০ জন মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল।

এই গবেষণার শিরোনাম “Violent and Nonviolent Death Tolls for the Gaza War: New Primary Evidence”, যেখানে একটি বৃহৎ আকারের গৃহস্থালী জরিপের ফলাফলে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে – যার নাম Gaza Mortality Survey (GMS)। এটি গাজায় সংঘটিত যুদ্ধ-সম্পর্কিত মৃত্যুর সবচেয়ে বিস্তৃত ও যৌক্তিক প্রমানাদির ভিত্তিপ্রাপ্ত একটি জরিপ বলেও দাবী করছে সংস্থাটি।

গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে, গত মার্চ থেকে শুধু অনাহার, নানাবিধ রোগ এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার ্ধ্বসের কারণেই অতিরিক্ত ৮,৫৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার ফলে গাজা যুদ্ধের মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৪,০০০।

এই গবেষণা পরিচালনা করেছেন এক আন্তর্জাতিক গবেষক দল। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো

  • মাইকেল স্প্যাগাট (রয়্যাল হোলোওয়ে, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়),
  • জন পেডারসেন (স্বাধীন গবেষক),
  • খালিল শিকাকি (ফিলিস্তিন নীতিমালা ও জরিপ গবেষণা কেন্দ্র),
  • মাইকেল রবিন্স (প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়),
  • এরান বেনদাভিদ (স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়),
  • হাভার্ড হেগ্রে (শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট, অসলো),
  • এবং দেবারতী গুহ-সাপির (ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অফ লুভেইন)।

এই গবেষণায় ২,০০০জন স্থানীয় ও যুদ্ধপিড়িত গাজার অধিবাসীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যেখানে ৯,৭২৯ জন মানুষের জীবনাবিস্থান সরাসরি তুলে লিখিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই গবেষণা তথ্য সংগ্রহ করা হয় ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে ৫ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত। ঠিক এই ভয়াবহ গণহত্যা চলাকালীন সময়েই এই জরিপ চলেছে বলে উল্লেখ করেছেন গবেষকবৃন্দ। মাঠপর্যায়ের কাজ পরিচালনা করে ফিলিস্তিন নীতিমালা জরিপ গবেষণা কেন্দ্র

জরিপে দেখা গেছে যে, সহিংস মৃত্যুর ৫৬.২ শতাংশই ছিল নারী, শিশু এবং বয়স্কদের মধ্যে। যা GMoH-এর রিপোর্টের সঙ্গেও মিলে যায় এবং মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে বলার যে অভিযোগ রয়েছে, সেটিও খণ্ডন করে এই জরিপটি।

Palestine This Week: গাজায় মৃত্যুর হিসাব কে রাখছে?

গবেষকরা এই পক্ষপাত কমানোর জন্য এবং গাজার ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি বিবেচনায় এনে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিয়েছেন, যেমন পরিসংখ্যানগত সমতা মিলিয়ে নেওয়া (statistical raking) এবং মোবাইল ট্র্যাকিং ও লাইভ ডেটা আপলোড ব্যবহার করে যাচাই। এছাড়াও, উত্তর গাজা ও রাফাহের মতো কম প্রতিনিধিত্ব পাওয়া অঞ্চলগুলোর তথ্য সংশোধন করা। তাহলেই গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা আরো বেড়ে যাবে।

সেই সাথে অসহিংস মৃত্যুর সংখ্যা, যেমন রোগ, অনাহার এবং চিকিৎসার অভাবে হওয়া মৃত্যু সাধারণত উপেক্ষিত হয়েছে মন্ত্রণালয়ের জরিপে। কিন্তু GMS একটি দৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে এই সংখ্যা নির্ধারণ করেছে। গবেষণায় বলা হয়, এই ধরনের অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছে ৮,৫৪০, যা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হতো না। তাই এটিও গণহত্যারই অংশ। নবজাতকরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জন্ম নেওয়া প্রতি ৩৫৭ শিশুর মধ্যে চারজন করে হত্যার শিকার হয়েছে, যা মারাত্মক ঝুঁকির ও যুদ্ধাপরাধের ইঙ্গিত দেয়।চ

এই গবেষণা এমন এক সময় এসেছে, যখন ইজরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার তদন্তের মুখোমুখি এবং গাজায় তাদের আচরণ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। লেখকরা বলেন, তাঁদের কাজ ভবিষ্যতের জন্য একটি সঠিক ঐতিহাসিক মূল্যায়ন ও জবাবদিহির ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে।


মুসলিম পোর্ট