মুসলিম পোর্ট

আমরা কি কখনো এমন কোনো বিশ্বব্যবস্থার কথা শুনেছি, যাতে যুদ্ধ হানাহানি নয়; বরং ব্যালেন্স অফ পাওয়ার (BoP) প্রতিষ্ঠায় সমমর্যাদা এবং সংলাপকে মূলনীতি ধরা হয়? কখনো কি শুনেছি এমন কোন বিশ্ববীক্ষার কথা, যা Absolute Anarchy” এর বদলে রাষ্ট্রসমূহকে Convince করে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলে? বৈশ্বিক ক্ষুধামান্দ্য ও দারিদ্রের মোকাবেলায় যে বিশ্বব্যবস্থা দান খয়রাত ও চ্যারিটির মুখাপেক্ষি নয়; বরং ন্যায়ভিত্তিক অর্থনীতির কথা বলে। যেখানে একজন মানুষও গরীব থাকবে না; অভুক্ত থাকা তো বহু দূর। শুনেছি কি এমন আন্তর্জাতিক বন্ধনের উপাখ্যান, যা “Violation of Sovereignty নয় বরং পারস্পরিক সমঝোতা ও সৌহার্দোর ভিত্তিতে সামগ্রিক উন্নয়ন ও টেকসই শান্তির প্রতিশ্রুতি দিতে সক্ষম?

ভাবতে অকল্পনীয় লাগলেও গত শতাব্দীর একেবারে শেষ সময়ে এমনই এক নতুন বিশ্বব্যবস্থার প্রস্তাবনা ও তার কার্যক্রম শুরু হয় ডি-৮ তথা Cooperation of Developing Countries এর সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও সামগ্রিক একটি বিশ্বব্যবস্থার প্রস্তাবনা হওয়ায় ডি-৮ এই 1 পাশ্চাত্য যায়নবাদ নিয়ন্ত্রিত বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে সর্বদা ব্যাক স্টেজেই থেকে যায়। কোথাও একে নিয়ে বিশদ কোন আলাপ আলোচনার দেখা পাওয়া যায় না। না আছে মানসম্মত কোন আর্টিকেল বা ডকুমেন্টারী। বক্ষ্যমান প্রবন্ধে তাই মোটামুটি বিশদভাবে ডি-৮ এর পরিচয়, কার্যক্ষমতা এবং অতীত ও বর্তমানের মূল্যায়নের একটি বিবৃতিমূলক বয়ান হাজির করার প্রয়াস চালানো হলো।

প্রেক্ষাপট-

বিংশ শতকের শুরুতে ইউরোপের শতাব্দীকালের উত্তেজনা বিস্ফোরিত হয়ে সমগ্র দুনিয়াব্যাপী দুই দুইটি মহাযুদ্ধ সংঘটিত হয়ে যায়। গোটা মানবতা এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন ও অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়। কোটি কোটি আদম সন্তান Mechanical Killing এর শিকার হয় প্রথবারের মতো। মানতার ইতিহাসে জঘন্যতম এ অধ্যায়সমূহ বিশাল বিশাল কিছু ঘটনা বা পটপরিবর্তনের জন্ম দেয়, যেমন প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে অটোমান সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি, জার সাম্রাজ্যের পতন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সংকুচিতকরণ এবং অস্ট্রিয়ান- হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের মূলোৎপাটন করা। এদের পরিবর্তে ব্রিটিশ বাদে অন্যান্য দেশে ফ্যাসিস্ট সরকারকে প্রতিস্থাপিত করা। অতঃপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে একনায়ক হিটলার, স্ট্যালিন, মুসোলিনি, ফ্রাঙ্কোকে সরিয়ে দেয়া। বিশ্বে শান্তি স্থাপনের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইয়ান্টা কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হওয়া। যার উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীতে শান্তি, স্বাধীনতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র স্থাপন করা।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, মেকি এই স্বাধীনতাকে একটি বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ করে দেয়া হয়, মানবাধিকার শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি দেশ, সমাজ বা গোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত করা হয়, যা তাদের বাইরে কারো জন্য প্রযোজ্য ছিল না। উপরন্তু, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ায় স্ট্যালিন ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আমেরিকা ও তার মিত্রদের স্নায়ুযুদ্ধ চলতে থাকে। শুরু হয় Neuclear arms race এর মত ভয়াবহতর মানব বিধ্বংসী অস্ত্র মহড়া। এভাবেই যায়নবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদী মিত্রদের স্নায়ুযুদ্ধ চলতে থাকে। এরপরেই যায়নবাদ এবং সম্রাজ্যবাদী দুনিয়া নতুন বিশ্বব্যবস্থা দাঁড় করায়। যে সভ্যতা রক্ত ও সমাধির উপর প্রতিষ্ঠিত। নতুন এই সিস্টেমের মূল বুনিয়াদ হচ্ছে ঘৃণা ও শত্রুতা।

৯০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গন এবং Warsaw Pact বানচাল হবার পর NATO-কে বিলুপ্ত করার দাবি উঠলে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এর বিপক্ষে মত দেন। তখন ফকল্যান্ড যুদ্ধে লৌহমানবী খেতাব পাওয়া এ ব্রিটিশ রমণী বলেন- “No idology can survive without a comon enemy. Our next enemy is Islam.” ইসলাম তখন তাদের এমন এক নিশানায় পরিণত হয়, সমগ্র দুনিয়া পাশ্চাত্যের নেতৃত্ব ইসলামের উপর হামলে পড়তে শুরু করে। ঠিক তখনই ন্যাটোর বেইজ কালার লাল থেকে সবুজ হয়ে যায়। সুতরাং তার এ উক্তি থেকে সহজেই অনুধাবন করা সম্ভব যে, Bush কর্তৃক উদ্ভাবিত New World Order কাদের জন্য এবং কীসের জন্য? 

ডি-৮ প্রতিষ্ঠা ও প্রতিষ্ঠাতা

এমতাবস্থায় দৃশ্যপটে হাজির হন গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুসলিম সিংহ পুরুষ প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান। তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর নাজমুদ্দিন এরবাকান ১৯৬৯ সাল থেকে মিলি গরুশ আন্দোলন যখন শুরু করেছিলেন তখন থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল, যায়নবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিপরীতে একটি ইসলামী ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করা। 

ইসলামী ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা ছিল তাঁর সারাজীবনের স্বপ্ন। কিন্তু বিশ্বপরিস্থিতি পরবর্তী দুই দশকে এতোটাই পরিবর্তিত হয়ে যায়, যে তখন মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার একক আধিপত্যের কারণে ১৯৭৬ সালের OIC সম্মেলনে প্রস্তাবিত ইসলামী ইউনিয়নের পদক্ষেপ ১৯৯৬ সালে বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। একদিকে সৌদি-ইরান সমস্যা, অন্যদিকে ইরাকের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের সকল দেশের সমস্যা ইউনিয়ন গঠনকে কঠিন করে তুলে। ক্ষমতার লোভে মত্ত হয়ে কেউ কাউকে সামান্যতম সম্মান প্রদর্শন করছিল না।

এরই মধ্যে ৮০ এর দশকে আমেরিকার সাথে সৌদির ডলার চুক্তি বিশ্ব অর্থ-ব্যবস্থায়

আমেরিকাকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলে। জারী হয় অধুনা Petro Dollar System. কিন্তু প্রফেসর এরবাকান ইসলামী ঐক্যের ব্যাপারে দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন। ইসলামী ইউনিয়নের পরিবর্তে পরবর্তী ৫০ বছরের কথা মাথায় রেখে বিশ্বব্যাপী একটি অর্থনৈতিক চক তৈরি করেন। একটি ইসলামী বিশ্বব্যবস্থার স্বপ্নকে সামনে রেখে তার স্বপ্নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন Developing-8 অর্থাৎ ডি-৮। সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়ার মূলমন্ত্র যেখানে ‘শক্তিই সকল কিছু সেখানে তার প্রতিষ্ঠিত ডি-৮ এর মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করেন সবার উপরে হক’।

তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় D-8 Organization for Economic Cooperation, সাধারণভাবে যাকে উন্নয়নশীল-৮ (D-8) বলা হয়। ১৯৯৬ সালের অক্টোবর মাসে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের শিরান প্রাসাদে অনুষ্ঠিত “উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা” শীর্ষক সেমিনারে তিনি বৃহৎ মুসলিম উন্নয়নশীল দেশ সমূহের মাঝে সহযোগিতার এক বলিষ্ঠ চিন্তা তুলে ধরেন। বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান, পাকিস্তান ও নাইজেরিয়ার প্রতিনিধিরা এতে অংশগ্রহণ করেন। তখন থেকে ধারাবাহিক কিছু প্রস্তুতিমূলক অধিবেশন শেষে ১৯৯৭ সালে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত “দেশ ও সরকার প্রধান সম্মেলন” এর সমাপনী অধিবেশনে ইস্তাম্বুল ডেক্লারেশনের মাধ্যমে ডি-৮ দাপ্তরিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে।

D-8 এর মূলনীতিসমূহ D-8 এর লোগোতে ছয়টি তারা সংগঠনটির ৬টি মূলনীতিকে ইঙ্গিত করে। সেগুলো হলো-

১. যুদ্ধ নয়, শান্তি। ২. দ্বন্দ্ব নয়, সংলাপ ।

৩. শোষণ নয়, সহযোগিতা। ৪. দ্বৈতনীতি নয়, আদালত ।

৫. অহমিকা নয়, সমতা।

৬. বলপ্রয়োগ বা কর্তৃত্ববাদিতার পরিবর্তে মানবাধিকার, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র (মত প্রকাশের স্বাধীনতা)।

যেহেতু প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান ডি-৮ এর প্রস্তাবক, তার প্রস্তাবনা অনুসারেই 

ন্যায়ভিত্তিক এক দুনিয়া প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রয়াস, ডি-৮ এর এধরণের সামগ্রিক মূলনীতি গৃহীত হয়। তার অনবদ্য আত্মজীবনী ‘দাওয়াম’-এ তিনি নতুন দুনিয়ার প্রস্তাবনা তুলে ধরেন, যার মূল মেরুদণ্ড এই ছ’টি মূলনীতিই। আমরা সেখান থেকে যে সারসংক্ষেপ পাই, তা হলো-

যুদ্ধ নয়, শান্তি এই মূলনীতির গুঢ়ার্থ হলো বস্তুবাদ নয়; বরং আধ্যাত্মিকতা। কারণ বস্তুবাদী মনস্তত্ত্বের একটি বৃহৎ এ্যাপ্রোচ হলো ডারউইনিজম। যেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শক্তিশালী জাতিগুলো তুলনামূলক কম শক্তিশালী জাতিগুলোকে শোষণ, অত্যাচার অনাচার এমনকি ethnic cleansing এর মাধ্যমে হলেও নিঃশেষ করে দিতে চায়। একে বর্তমান পরিভাষায় বলা হয় Social Darwinism সুতরাং একে মোকাবেলা করতে হলে আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে মানুষের মাঝে পারস্পরি সৌহার্দ্য, ভালোবাসা, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও শৃঙ্খলার চাষাবাদ করতে হবে।

দ্বন্দ্ব নয়, সংলাপ-শান্তির ধারকবাহক ইসলামকে যেকোনো মূল্যে ধ্বংস করে দুনিয়াতে ফাসাদ ও ফেরাউনিয়াত কায়েম করতেই পাশ্চাত্যের যত আয়োজন। উপনিবেশের মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের মতো শক্তিমান মুসলিম সালাতানাতসমূহের পতন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর উসমানী খেলাফতের পতন ঘটানো এবং পরবর্তীতে জাতিরাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত মুসলিম দেশসমূহের নেতৃত্বে তাদের দোসর বসানো। প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে কৃত্রিম সঙ্কট জারী করে শত্রুভাবাপন্ন করে তোলা। সেখানে অস্ত্র, মাদক ব্যবসা পরিচালনা। অস্থিতিশীল পরিবেশে ফায়দা নিয়ে খনিজ ও যাবতীয় সুবিধাদী লুট করা, এসবই পাশ্চাত্যের এজেন্ডা। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হলে মুসলিম দেশগুলোর জন্য দ্বন্দ্ব যুদ্ধের পথ নয়; বরং সংলাপের মাধ্যমে নিজেদের সকল সমস্যা সমাধান করা বাঞ্ছনীয়, অন্যথায় মুসলিম উম্মাহর সংকট উত্তরণ সুদূর পরাহত।

শোষণ নয়, সহযোগিতা- উন্নতি এবং অগ্রগতি একটি সমন্বিত বিষয়। এককভাবে তা অর্জন করা সম্ভব নয়। পাশ্চাত্যের ধনী কিছু দেশ তাদের ব্যাংকসমূহের মাধ্যমে দরিদ্র দেশ গুলোকে ইচ্ছাকৃত দরিদ্র বানিয়ে রেখেছে উচ্চ সুদে ঋণ গ্রহণে বাধ্য করার মাধ্যমে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সে ঋণের আসল তো দূরের কথা এমন কি আরোপিত সুদও তারা ঠিকমত পরিশোধ করতে পারছে না। এভাবে আয়ের সমতা নষ্ট করে ধনীকে আরো ধনী, গরীবকে আরো গরীব বানিয়ে তারা দুনিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করে দিয়েছে। প্রতিবেশিকে অভুক্ত রেখে যেমন নিজের ঘরে শান্তি বজায় রাখা সম্ভব নয়, তেমনই শোষণের এই পরিক্রমা কখনোই বিশ্বশান্তি আনবে না। তাই সহযোগিতার রোল মডেল স্থাপন করে সামগ্রিক উন্নতি ও অগ্রগতি সাধন করে নজির পেশ করতে হবে বিশ্ববাসীর সম্মুখে।

দ্বৈতনীতি নয়, আদালত- ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার মূল কাঠামো আদালতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকলেও পাশ্চাত্যের প্রপাগাণ্ডা ইসলামকে সন্ত্রাসবাদের সাথে জুড়ে দিয়েছে। তাদের প্রহসনমূলক দ্বিমুখিতা মুসলিম দেশগুলোর মানবিক জীবন যাত্রার শুধু অধঃপতনই। ঘটিয়েছে। শুধু মুসলিম দেশগুলোই নয়; বরং অপেক্ষাকৃত দুর্বল অমুসলিম দেশগুলোতেও 

তারা এই দ্বৈতনীতি চালিয়ে বিভেদ এবং সহিংসতার বিস্তার ঘটিয়েছে। এখান থেকে মুক্ত হতে হলে মানবাধিকার এবং স্বাধীনতা শুধু মুসলিমদের জন্য নয়; বরং সমগ্র বিশ্ববাসীর সাথে আদালতের সাথে নিশ্চিত করা জরুরী।

অহমিকতা নয়, সমতা- বিগত শতাব্দী আমাদের দেখিয়েছে অর্থনৈতিকভাবে অগাধ শক্তিধর শুধুমাত্র ইউরোপই নয়, বরং দূর প্রাচ্যের দেশসমূহ মাত্র ১০-১৫ বছরের ব্যবধানে জেলেপল্লী থেকে ইকনোমিক সুপার পাওয়ারে পরিণত হয়েছে। এর দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, উৎকর্ষের জন্য সবার সমান সক্ষমতা রয়েছে। সুতরাং বিশ্বশান্তির জন্য উঁচু নিচুর ব্যবধানকে ভুলে সমমর্যাদাকে ভিত্তি হিসেবে ধরতে হবে।

বলপ্রয়োগ বা কর্তৃত্ববাদিতার পরিবর্তে মানবাধিকার, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র (মত প্রকাশের স্বাধীনতা)- এই মূলনীতির মাধ্যমে প্রফেসর ড. এরবাকান প্রচলিত যায়নবাদের ক্রীড়নক জাতিসংঘ ব্যবস্থা, বিশ্বের ১৭০টি দেশকে নাম মাত্র সদস্য রাষ্ট্রকে নাম মাত্র ক্ষমতা দিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে ৫টি রাষ্ট্রকে ভেটো ক্ষমতা প্রদান করে যায়নবাদের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এভাবে তারা যখন যেভাবে ইচ্ছা মানবতাকে লুণ্ঠন করে যাচ্ছে। এ ব্যবস্থার বিপরীতে ‘হক’কে সর্বোচ্চ স্থান দিয়ে একটি নতুন জাতিসংঘের প্রস্তাবনা পেশ করেন। তাঁর ভাষায়-

“এই জাতিসংঘের উদ্দেশ্য বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করা নয়, যায়নবাদীদের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করা। অর্থাৎ তাদের চিন্তার মূলে হলো ফেরাউনী চিন্তা। তাহলে এখন কি করতে হবে?

কি করতে হবে এর উত্তরে আমি বলি, আমাদেরকে নতুন একটি জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যে জাতিসংঘ হবে হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত, কোন জাতি বা গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নয়, সত্যিকারের বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাই হবে এই জাতিসংঘের মূল লক্ষ্য। এই জাতিসংঘে কারোর কোন ভেটো দেয়ার পাওয়ার থাকবে না।

এরপর এই জাতিসংঘ এমন কিছু মূলনীতি প্রণয়ন করবে যা সকল রাষ্ট্র মানতে বাধ্য হবে। কোন রাষ্ট্র তার জনগণের উপর জুলুম করতে পারবে না, সকল মানুষকে তার ন্যায্য অধিকার দিতে বাধ্য থাকবে। মানুষের যেমন রাষ্ট্রের উপর অধিকার রয়েছে রাষ্ট্রেরও তেমন তার জনসাধারণের উপর অধিকার রয়েছে। আর সেটা হলো রাষ্ট্র জনগণের সাথে বৈষম্য মূলক আচরণ করতে পারবে না ও কোন ক্রমেই জুলুম করতে পারবে না, আর জনগণও অন্যের অধিকার হরণ করবে না এবং রাষ্ট্রদ্রোহী কোন কাজ করবে না।

এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ন্যায়ভিত্তিক একটি দুনিয়া প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মূলনীতি সমূহ প্রণয়ন করা প্রয়োজন এবং বিশ্বমানবতার সামনে আজকের এই জুলুমের দুনিয়ার আসল চেহারা তুলে ধরে তাদেরকে জাগ্রত করা প্রয়োজন। ‘দাওয়াম’ পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, নতুন দুনিয়ার বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ-

  • নতুন জাতিসংঘ; সমানাধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত, বর্তমান ব্যবস্থার মত শক্তিমানের স্বার্থ সংরক্ষণকারী প্রহসনের নাট্যশালা নয়।
  •  নতুন রাজনৈতিক দীক্ষা; যা মানুষকে অসহিষ্ণু করে তুলে না, ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য পাওয়ার এক্সারসাইজ করার জন্য বলে না, বরং মানুষের অধিকার প্রদান করার দীক্ষা দেয়। প্রযুক্তিতে সর্বোচ্চ সক্ষমতা অর্জন; প্রযুক্তিতে এমন সক্ষমতা অর্জন, যা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে মান বিধ্বংসী হবে না, বরং মানুষের সর্বোচ্চ উপকারে এসে মাসলাহাতের কাজ করবে। • নতুন মুদ্রাব্যবস্থা; ডলার ভিত্তিক শোষণযন্ত্র থেকে মানবতাকে মুক্তি দিতে নতুন মুদ্রাব্যবস্থা। তথা ইসলামী দিনার।
  • নতুন বিশ্বব্যাংক: বর্তমানে প্রচলিত কোন পরিবারের ব্যক্তিগত ব্যাংক নয়, বরং বৈশ্বিকভাবে . পারস্পরিক সহযোগিতা চুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় এক ব্যাংক।
  • নতুন IMF: যা মানুষকে শোষণ নয়, বরং দুনিয়াতে একজন ও যাতে দরিদ্র না থাকে, সে . লক্ষ্যে কাজ করবে। নতুন সাংস্কৃতিক সাহায্য সংস্থা, বর্তমান হলিউডের মতো নগ্নতা ও অশ্লীলতার প্রচারক নয়, বরং সত্য, সুন্দর ও কল্যাণকর সংস্কৃতির বিকাশ ও পরিচর্যার জন্য জাতি সমূহের মাঝে সাংস্কৃতির বিনিময় করবে।
  • নতুন প্রচার ও প্রকাশনা সংস্থা; যেখান থেকে মানুষকে ম্যানুপুলেট করা হবে না, প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়ে জলঘোলা করা হবে না বরং সত্যটা জানানো হবে অকুণ্ঠচিত্তে।। 
  • নারীদের প্রতি সব ধরণের যুলুম ও অত্যাচারের অবসান ঘটানো হবে। তাদের প্রকৃত অধিকার সংরক্ষণ করে মর্যাদা ও সম্মানের সর্বোচ্চ স্তরে আসীন করা হবে।

নতুন এই দুনিয়া প্রতিষ্ঠার তিনটি ধাপ রয়েছে-

১. ডি-৮ নিউক্লিয়াস প্রতিষ্ঠা।

২. ডি-৮ পরবর্তীতে অগ্রসর ৬০ টি দেশ নিয়ে ডি-৬০ গঠন এবং সর্বশেষ সমগ্র পৃথিবীকে এক ছাতার নিচে আনতে ডি-১৬০ প্রতিষ্ঠা। এর সাথে যুক্ত হবে ১০টি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান, যাদের হাতে সুপ্রিম পাওয়ার সোপর্দ করা থাকবে। এরা সবাই একত্রিত হলে ৫০০ কোটি বঞ্চিত জনতা সাম্রাজ্যবাদী বর্ণবাদীদের শোষণ থেকে মুক্ত হয়ে হক ও আদালতের উপর ভিত্তি করে একটু নতুন দুনিয়ার পত্তন ঘটাবে।

৩. ২য় ইয়াল্টা কনফারেন্স আয়োজন করে নতুন এক দুনিয়ার ঘোষণা দেয়া হবে, যার মৌলিক শর্ত হবে, এমন এক শান্তিপূর্ণ দুনিয়া যা শোষিত জনতার অধিকার নিশ্চিত করবে হক ও আদালতের ভিত্তিতে।

উপরোল্লিখিত এই রূহ ও জবাকে ধারণ করেই প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান নতুন দুনিয়ার নিউক্লিয়াস হিসেবে ডি-৮ কে একটি বিশ্বজনীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলে ধরেন এবং বলেন, ডি-৮ এবং বর্তমান উন্নত বিশ্বের জি-৮ (বর্তমান জি-৭) সমান্তরাল সংগঠন। অচিরেই ডি-৮ এবং জি-৮ এক টেবিলে বসে চুক্তি করবে এবং ২য় ইয়াল্টা কনফারেন্সের মাধ্যমে এক নতুন দুনিয়ার প্রবর্তন করবে।

যেহেতু প্রফেসর ড. এরবাকান সবসময় বলতেন, “হকের উপর প্রতিষ্ঠিত (ইসলামী) সভ্যতা শক্তির (Power) এর উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা পাশ্চাত্য সভ্যতার চেয়ে মর্যাদা সম্পন্ন।” তাই তিনি ইসলামী সভ্যতা ও ইসলামী ঐক্যের রূহকে ধারণকারী সংগঠন ডি-৮ এর উদ্দেশ্য হিসেবে শুধু সদস্য রাষ্ট্রসমূহের কল্যাণই নয়, বরং সমগ্র মানবতার উন্নয়ন ঘটানোকে নির্দেশ করেন।

১৯৯৭ সালে ইস্তাম্বুল সম্মেলনের ইশতেহার অনুসারে ডি-৮ এর উদ্দেশ্য হলো- • বিশ্ব অর্থনীতিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবস্থানের উন্নতি ঘটানো,

আন্তঃবাণিজ্যিক সম্পর্কে বৈচিত্র্য আনয়ন ও নতুন সুযোগ তৈরি করা, • আন্তর্জাতিক পরিসরে নীতি-নির্ধারণীর ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকে বুলন্দ করা, এবং বসবাসের জন্য আদর্শ মানদণ্ড স্থাপন করা।

ডি-৮ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুসারে তার প্রতিপাদ্যসমূহ হলো- 

ক. সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনাসমূহের কার্যকরী বিন্যাস সাধনের মাধ্যমে টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে যৌথ প্রচেষ্টাসমূহকে উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান ।

খ. জনমানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করা।

গ. সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগ, চেম্বার অফ কমার্স এবং ইন্ডাস্ট্রিগুলোর মাঝে সহযোগিতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে বেসরকারী বাণিজ্যিক খাতকে শক্তিশালী করা।

ঘ. উন্নয়নশীল দেশসমূহের অগ্রগতির বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে অন্যান্য দেশ, আঞ্চলিক

এবং বৈশ্বিক সংস্থাসমূহ এমনকি বেসরকারী সংস্থাসমূহের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করা। ঙ. বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কার্যকর ভূমিকা পালনে ডি-৮ এর সমন্বিত শক্তি ও সামর্থ্যকে কাজে লাগাতে একজোট হয়ে কাজ করা। মূলকথা হচ্ছে, ডি-৮ এর মূলনীতিসমূহের আলোকে সদস্য দেশগুলোর মাঝে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান ও আর্থ-সামাজিক এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিসরে অগ্রগতি নিয়ে আসার মাঝেই এই সংগঠনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিহিত।

ডি-৮ এর বৈশ্বিক ভিশন (২০১২-২০৩০) :

১২ নভেম্বর ২০১২ সালে ইসলামাবাদে আয়োজিত ডি-৮ এর ৮ম সম্মেলনে দেড়যুগ মেয়াদী ডি-৮ বৈশ্বিক ভিশন গৃহীত হয়। সংক্ষেপে এর বৈশিষ্ট্যগুলো হলো- • সদস্য দেশগুলোর মাঝে নিবিড় সহযোগিতা ও কার্যকর সমন্বয় সাধন করা এবং পারস্পরিক লাভজনক বিষয়ে আন্তঃনির্ভরশীলতা তৈরি করা।

আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার সাথে সঙ্গতি বজায় রাখতে অন্যান্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সাথে লিয়াজোঁ রক্ষা করা।

• সদস্য রাষ্ট্রসমূহের নিজ নিজ জাতীয় পরিসরে জি-৮ এর সমর্থন বৃদ্ধি করা এবং এর আওয়াজ ও ভারতকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ করতে সমন্বিতভাবে কাজ করা।

• সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জাতীয় পরিসরে সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগ ও সম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষে পারস্পরিক সমন্বয় মূলক অংশিদারিত্ব বাড়ানো।

• সুশাসন, আইনের প্রয়োগ, সাবলীল অর্থনৈতিক নীতিমালা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে গ্রহণ করা।

• সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে উন্নত জীবন যাত্রার মান নিশ্চিতকরণে সম্মিলিত সংগ্রাম পরিচালনা

করা।

• চলমান ও অনাগত বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবেলায় কৌশলগত ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয় সাধন করে জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কট, কৃত্রিম অর্থনৈতিক ঝুঁকি থেকে পরিত্রাণ লাভ করা ইত্যাদি।

এখানে উল্লিখিত দুই সম্মেলনের মূল কথাগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, নতুন এক দুনিয়ার প্রস্তাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু করে বৈশ্বিক সংগঠন ডি-৮ তার নিজস্ব ধাঁচ ও পরিভাষা হারিয়ে পাশ্চাত্য সভ্যতার অনেক আইডিয়া গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। নতুন পন্থা পদ্ধতি ও ব্যবস্থা তৈরির পর্যায় থেকে অন্যান্যদের তৈরিকৃত পন্থা ও পরিভাষাই Adopt করে নিতে দেখা যায়। এভাবে ডি-৮ প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরের মাথায়ই তার রূহ ও জযবাকে হারিয়ে ফেলতে থাকে। বিশেষত ২০১১ সালে এরবাকান হোজার ইন্তেকালের মাত্র এক বছরের মাথায় এমন রেডিক্যাল চেঞ্জ বিস্ময়কর এবং হতাশাজনকই বটে।

ডি-৮ এর প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকানের জীবনীগ্রন্থ- নতুন বিশ্বব্যবস্থার প্রস্তাবক ও মহান মুজাহিদ নাজমুদ্দিন এরবাকান গ্রন্থে ডি-৮ ভুক্ত দেশসমূহ ও তাদের শক্তিমত্তা ও গুরুত্ব অসাধারণভাবে তুলে ধরা হয় এভাবে-

D-8 গঠনের জন্য প্রথমে তিনি (প্রফেসর এরবাকান) স্ট্র্যাটেজিক পজিশনে ৮টি দেশের 

কথা চিন্তা করেন। সেই সাথে দেশের জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্র বিশ্বরাজনীতিতে কত বেশি প্রভাবান্বিত করতে পারবে সেটাকে প্রাধান্য দেন। আর সামরিক শক্তি তো অপরিহার্য একটি বিষয়। D-8-কে তিনি একটি পাওয়ার হাউজে পরিণত করতে চেয়েছিলেন যেন সংগঠনভুক্ত দেশসমূহের মাধ্যমে পুরো বিশ্বকে মুসলিমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং একই সাথে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মুসলিমরা এমন এক শক্তি হয়ে ওঠবে যাতে করে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে জুলুমের শিকার মুসলিমদের উপর সাম্রাজ্যবাদী পাশ্চাত্য শক্তি কখনো চোখ তুলে তাকাতে সাহস না করে।

যে কয়টি দেশ নিয়ে D-8 গঠিত হয়েছিল-

১. তুরস্ক, 

২. ইরান,

৩. মিশর,

৪. মালয়েশিয়া,

৫. ইন্দোনেশিয়া,

৬. নাইজেরিয়া,

৭. বাংলাদেশ এবং 

৮. পাকিস্তান।

দেশগুলোকে কেন নির্বাচন করা হয়েছে। ভৌগোলিক দিক দিয়ে এই ৮ দেশের অবস্থান বিবেচনা করলে উ-৮ এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব কতটুকু তা বুঝা কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক রুটগুলোর উপর একটু চোখ বুলিয়ে আসি।

তুরস্ক দেশটি সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। মুসলিম বিশ্বের শক্তিশালী দেশ হিসেবে তুরস্ক সর্বদা সবার সামনেই অবস্থান করছিল। বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে তুরস্ক। ইউরোপ এবং এশিয়ার সংযোগস্থল। চানাক্কালের এবং বসফরাস প্রণালীর মতো দুটো কৌশলগত প্রণালী এই দেশটির অধীনে। ইউরোপের গলার কাঁটা হিসেবে বিবেচিত এই একই সাথে কৃষ্ণ সাগরে অবস্থিত ক্রেচ প্রণালী তুরস্কের এই দুই প্রণালী ছাড়া অচল। অর্থাৎ তুরস্কের যদি চায় তাহলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৩টি প্রণালী নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ রাশিয়াকে এ পথেই বাণিজ্য করতে হয়।

মিশর ইতিহাস-ঐতিহ্য, নীল নদের অববাহিকায় গঠিত শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ মিশর হচ্ছে উত্তর আফ্রিকার অন্যতম একটি দেশ। আরব বিশ্বের সাথে যথাযথ সম্পর্ক রক্ষাকারী এবং এক সময়ে পৃথিবীর ৭০% অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণকারী সুয়েজ ক্যানেল এর অধিকারী হচ্ছে মিশর ভূমধ্যসাগর এবং লোহিত সাগরের সংযোগস্থল হচ্ছে সুয়েজ ক্যানেল। হযরত ওমর (রা.)-এর খিলাফতকালে মিশরের গভর্নর এলাকার অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে হযরত ওমরের কাছে দুই সাগরকে সংযুক্ত করার জন্য একটি ক্যানেল নির্মাণের পরামর্শ চেয়েছিলেন। হাল্কা শুরু হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে সেই পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন হয়নি। উসমানী আমলে সুয়েজ ক্যানেলটি নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে প্রায় ২৫০ বছরের অধিক সময় থেকে এই প্রণালী বিশ্বের অর্থনীতির বৃহৎ একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। আসছে। সুয়েজ ক্যানেল ছাড়া লোহিত সাগরের বাব আল মান্দেব এক প্রকার অর্থহীন। ইউরোপ থেকে এশিয়ার বাণিজ্য জাহাজের রুট একমাত্র এটিই।

ইরান মুসলিম বিশ্বের অন্যতম আরেকটি শক্তিশালী দেশ। আমেরিকার হাজারো অবরোধ সত্ত্বেও নিজ দেশের অর্থনীতিকে পুনরায় নির্মাণ করে পুরো বিশ্বের কাছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে শক্তিশালী একটি রাষ্ট্রের প্রতিবিম্ব হয়ে আছে বিশ্বরাজনীতিতে। মুসলিম বিশ্বের জন্য অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং ভৌগোলিকভাবে ইরান গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। বিখ্যাত হরমুজ প্রণালীর নিয়ন্ত্রণ এখনো ইরানের হাতে। ভৌগোলিকভাবে তুরস্কের সমান গুরুত্ব ইরানের। দেশটির উত্তরে কাম্পিয়ান সাগর, দক্ষিণে পারস্য উপসাগর। পশ্চিমে ইরাক, তুরস্ক, আরমেনিয়া, আজারবাইজানের সাথে সীমান্ত রয়েছে দেশটির, অপরদিকে পূর্বে দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিশালী দেশ পাকিস্তান ও খনিজ সম্পদের অধিকারী আফগানিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানের সাথে সীমানা ভাগ করে নিয়েছে ইরান। একই সাথে পারস্য সাগর পাড়ি দিলেই সৌদি, কুয়েত, কাতার, ওমান। অর্থাৎ ভৌগোলিকভাবে পুরো মুসলিম বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র বলা যায় ইরানকে।

মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া বর্তমান মুসলিম বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হিসেবে যদি কয়েকটি দেশকে বিবেচনা করা হয় তাহলে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সবার উপরে স্থান পাবে। এই দু’দেশ নিয়ে বিশ্বরাজনীতিতে তেমন আলোচনা না হলেও দেশ দুটির গুরুত্ব বুঝতে শুধুমাত্র মালাক্কা প্রণালীকে বিবেচনা করলেই হবে। এই প্রণালীর একপাশে মালয়েশিয়া অপরপাশে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশ। মালাক্কা প্রণালী হচ্ছে এই দুই দেশের অধীনে। পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপান, চীন, ও কোরিয়া উপদ্বীপের সকল বাণিজ্য এ প্রণালী দিয়েই করতে হয়। এছাড়া ভারত মহাসাগরে প্রবেশের অন্য কোনো পথ নেই।

একবার ভাবুন, উপরোক্ত প্রত্যেকটি দেশ যদি শক্তিশালী হয় এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্য পথে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে তাহলে এর ফলাফল হচ্ছে পুরো দুনিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া, এতটাই শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে উল্লিখিত প্রণালীগুলো বিশ্ব অর্থনীতিতে।

নাইজেরিয়া আফ্রিকার তেলসমৃদ্ধ একমাত্র দেশ হচ্ছে নাইজেরিয়া একই সাথে প্রশান্ত মহাসাগরের বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আফ্রিকার এই দেশটি। সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ এই দেশটি উমাইয়া আমল থেকেই মুসলিম অধ্যুষিত। ফরেন ডিপ্লোমেসি তথা বৈদেশিক ক্ষেত্রে কী কী কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তার উপর সর্বপ্রথম বই রচনা করে নাইজেরিয়া। আফ্রিকায় মুসলিমদের শক্ত অবস্থানের পেছনে নাইজেরিয়ার অবদান সেই ১৩ শতাব্দী থেকেই। ঐতিহাসিকভাবেই আফ্রিকার সব দেশের সাথেই নাইজেরিয়ার সুসম্পর্ক বিদ্যমান। তাই আফ্রিকার দেশ হিসেবে সংগঠনে নাইজেরিয়ার স্থান সবার প্রথমে হওয়াটা অতি স্বাভাবিক।

বাংলাদেশ : বাংলাদেশের উর্বর কৃষি জমিতে সাতশত বছরের উন্নত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কার না জানা? দেশটিতে নিকৃষ্টতম বৃটিশ শোষণের কয়েক বছর পূর্বের জিডিপি পরিসংখ্যানও যদি বিবেচনা করি- ২৩% নিয়ন্ত্রণ শুধু এ বাংলা অঞ্চলের-ই ছিল। যেখানে বর্তমান দুনিয়ার কথিত সুপার পাওয়ার সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার ১৮%।

পাকিস্তান : দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের কথা আলোচনার

অপেক্ষা রাখে না। ভারী শিল্পায়নের দারুণ সক্ষমতা, উন্নত কৃষি সম্ভাবনা, সমৃদ্ধ সামরিক শক্তি, কী নেই দেশটির!

D-8 এর গুরুত্ব

তেল : পৃথিবীর ১৫% তেল রিজার্ভ আছে এই ৮টি দেশে এবং এই ৮টি দেশ থেকে বাৎসরিক পৃথিবীর ১০% তেল উত্তোলন করা হয়। আবার এই ৮টি দেশকর্তৃক পৃথিবীর ৬.৭% তেল ব্যবহৃত হয়। গ্যাস। বিশ্বের ২৩.২% প্রাকৃতিক গ্যাসের রিজার্ভ আছে D-8 এর দেশসমূহে। সেই সাথে

D-8 থেকে বছরে বিশ্বের ১৩.২% গ্যাস উত্তোলন করা হয়। আর D-8 এর দেশসমূহ প্রতিবছর বিশ্বের ১১.২% গ্যাস ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও বর্তমান বিশ্বের স্ট্র্যাটেজিক পদার্থ বোরন ও ক্রোমিয়াম ব্যাপক পরিমাণে মজুদ

রয়েছে D-8 এর ভেতরে। বিশ্বের তুলা রপ্তানিতে D-8 এর দেশসমূহের বৃহৎ একটি ভূমিকা এখনো বিদ্যমান। স্ট্যাটেজিক পজিশন ছাড়াও D-8 এর অধীনে পৃথিবীর মধ্যভাগের সর্বোচ্চ এলাকা, সাথে রয়েছে ৮টি দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠী। মুসলিম বিশ্বের কথা চিন্তা করলে, মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ৬০% জিডিপি হচ্ছে D-8 এর একই সাথে OIC’ অন্তর্ভূক্ত দেশসমূহের ৬৫% জনশক্তি উ-৮ এর দেশসমূহ থেকেই। মুসলিম

বিশ্বের বৈদেশিক বাণিজ্যের দিক থেকে D-8, ১০০ ভাগের মধ্যে ৫৮ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে।

D-8 এর অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহের সম্মিলিত জিডিপি ৪.৯ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থাৎ এটি বিশ্ব অর্থনীতির ৫%। অথচ নিজেদের তুলনায় তা কিছুই না। বিশ্ববাণিজ্যের ১৬.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের অংশীদার হচ্ছে এই দেশসমূহ। যদি এখনো নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়ন করে এবং এসব প্রণালীতে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সক্ষম হয় তাহলে পৃথিবীর ৭০% বাণিজ্য মুসলিমরা নিয়ন্ত্রণ করবে। তার জন্য সব দেশকে একসাথে কাজ করতে হবে লড়তে হবে ।

জনসংখ্যা: D-8 এর অন্তর্ভুক্ত ৮টি দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১.১ বিলিয়ন অর্থাৎ তা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৬%। বর্তমানে ডি-৮ এর দেশসমূহের নিজেদের মধ্যে ব্যবসার পরিমাণ ১২০ বিলিয়নে উন্নীত করা না হলে মুসলিম বিশ্ব মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হবে না।

জনসংখ্যা একটি শক্তি। এই জনশক্তিকে ঈমানের বলে বলীয়ান করে কাজে লাগাতে পারলে মুসলিম বিশ্বে এমন এক দুর্বার শক্তির সৃষ্টি হবে যাকে মোকাবেলা করার সামর্থ্য পৃথিবীর কোনো শক্তির থাকবে না।

কর্মপদ্ধতি, ধরণ, কাজের ক্ষেত্র ডি-৮ এর কাঠামো

ডি-৮ এর মূল পর্যায়গুলো হচ্ছে

১. রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধানদের সম্মেলন সংস্থাটির সর্বোচ্চ পরিষদ, যেখানে ডি-৮ এর প্রতিপাদ্যগুলো বাস্তবায়নের স্বার্থ সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সভার বৈঠক চক্রাকারে ২ অথবা ৩ বছর অন্তর কোন সদস্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠিত হয়।

২. মন্ত্রী পরিষদ এখানে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রীগণ যুক্ত থাকেন এখানে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়। এরা বছরে অন্তত একবার অধিবেশনে বসে এবং প্রতি শীর্ষ

সম্মেলনের পূর্বে একবার অবশ্যই আলোচনায় বসে।

৩. কমিশন : এটা হচ্ছে নির্বাহী বিভাগ। যেখানে প্রতিটি সদস্য দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তৃক নিয়োগকৃত দূতগণ যুক্ত থাকেন। এরা মূলত মন্ত্রীপরিষদের অধীনে কাজ করেন। প্রতি কমিশনার তার নিজ দেশের প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত হন। এরা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে স্ট্যান্ডিং কমিটি বা এড-হক গ্রুপ তৈরি করেন এবং তার তদারকি করেন। এরা বছরে অন্তত দুইবার বৈঠকে বসেন; একবার মন্ত্রীপরিষদ অধিবেশনের তাৎক্ষণিক পূর্বে।

৪. সচিবালয় ডি-৮ এর সচিবালয় ইস্তাম্বুলে অবস্থিত। এটা সব ধরণে কার্যক্রম এবং মিটিং এর আয়োজন ও তত্ত্বাবধান করে। এর প্রধান হন সেক্রেটারী জেনারেল যিনি মূলত ডি-৮ এর “Chief Administrative Officer”। তিনি একবারের জন্যই ৪ বছর মেয়াদের নির্বাচিত হন। তিনি ডি-৮ এর মাঝে সমন্বয় ও সমতা রক্ষা করেন এবং মূল সংস্থাগুলোর সকল অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ডি-৮ এর মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন।

এছাড়াও ডি-৮ এর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, যেকোন দেশের মাঝে উদ্ভূত বিরোধ ও উত্তেজনা নিরসন, অর্থনৈতিক বাজেট প্রণয়ন, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সহ অন্যান্য আরো বেশ কয়েকটি বিভাগ রয়েছে।

ডি-৮ মূলত একটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠান যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এই লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে ডি-৮, ৬টি সেক্টরে অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে।

১. বাণিজ্য, 

২. শিল্প,

৩. কৃষি ও খাদ্য নিরপত্তা,

৪. পরিবহন ও যোগাযোগ,

৫. পর্যটন,

৬. জ্বালানী।

বর্তমান অবস্থা

সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার পরপরই পরিকল্পনা ছিল D-8 এর মধ্যকার দেশসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, পরবর্তীতে একটি অভিন্ন মুদ্রা তৈরি করা। এরপর বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহ নিয়ে ডি-৬০ তৈরি করা। সকল দেশ এখানে চুক্তি অনুযায়ী কাজ করবে। এক দেশ আরেক দেশের সাথে অর্থনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত হলে এবং এক মুসলিম দেশ অপর মুসলিম দেশের উপর নির্ভরশীল হলে এখানে কেউ নিজেকে আরেকজনের থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করবে না এবং ইউরোপ ও পাশ্চাত্যকে গণনাই ধরবে না। মুসলিম বিশ্ব।

D-8 প্রতিষ্ঠার পরপরই ৮টি দেশ নিজেদের মধ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে। প্রথম পদক্ষেপ ছিল, ১৯৯৭ তে তুরস্কে উৎপন্ন হেলিকপ্টার পাকিস্তানে বিক্রি করা। ৮টি দেশের মধ্যে ৬টি দেশ ভিসা চুক্তি স্বাক্ষর করে। যেখান থেকে বাদ রয়ে যায় বাংলাদেশ ও মিশর।

পাকিস্তানের ইসলামাবাদে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয় D-8 এর অধীনে। টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, লোহা, স্টীল, ফার্মাসিটিক্যাল এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে খুব দ্রুতই। সেই সাথে Shipping and Maritime Service-এর ক্ষেত্রে সকল দেশ চুক্তিবদ্ধ হয়।

দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে সংগঠনটি সকল দেশসমূহের মধ্যকার ব্যবসার পরিমাণ

সম্মিলিতভাবে মাত্র ১২০ বিলিয়ন ডলার। নিস্তেজ হয়ে পড়া এই সংগঠনটি টিকে আছে

মূলত এই ১২০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের কারণেই।

সাম্প্রতিক সময়ে ডি-৮ এর কর্মকাণ্ডের একটি চিত্রায়ণ ফুটে ওঠে মালয়েশিয়ান এক বিখ্যাত উপস্থাপকের টকশোতে দেয়া সংস্থাটির সাবেক সেক্রেটারী মালয়েশিয়ার প্রখ্যাত কূটনৈতিক ও অর্থনীতিবিদ ‘দাতো কু জাফর কু শারী’ এর এক ইন্টারভিউতে।

উপস্থাপকের নানাবিধ প্রশ্নের জবাবে তিনি ডি-৮ কে নিয়ে যা বলেন, তার সার সংক্ষেপ নিম্নরূপ-

ডি-৮ শুরুতে বেশ জোরেশোরে কাজ শুরু করলেও বৈশ্বিক পরিবর্তনশীল ঘটনা প্রবাহের মধ্যে সেরকম আলো ছড়াতে পারেনি। উপরন্তু সংযুক্ত রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতামূলক মনোভাব বার বার বাহত হয়েছে নানাবিধ কারণেই। তারা সেখানে এক ধরণে ইতিবাচক মনোভাব আনয়নের প্রয়াস চালিয়েছেন।

বর্তমান জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকের মর্যাদায় আসীন এ সংস্থাটি নানা কারণেই এখনো গণপরিসরে নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি। তবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সাথে চুক্তি করে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের প্রয়াস চলমান।

ডি-৮ শুরু থেকেই ইন্টেলেকচুয়ালিটির দিকে নজর দিয়ে এসেছে এবং পূর্বোল্লিখিত পাকিস্তানে রিসার্চ ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা ছাড়াও ইবনে সিনার জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত ইরানের হামদানে ডি-৮ এর নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক বিষয়াবলির উপরে মাস্টার্স ও পি এইচ ডি পর্যায়ে প্রতি সদস্য রাষ্ট্র থেকে ৫ জন করে প্রতি বছর স্কলারশিপ প্রদান করা হচ্ছে।

আপাতদৃষ্টিতে একাধিক সদস্য রাষ্ট্রের মাঝে উত্তেজনা বিরাজমান থাকা সত্ত্বেও ডি-৮ এর কল্যাণে আভ্যন্তরীণ উন্নয়ন প্রক্রিয়া চলমান। কারণ ডি-৮ অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা হওয়ায় রাজনৈতিক মতভেদকে এক পাশে রেখে ‘One for All All for One পলিসি অনুসারে কাজ করে যাচ্ছে। যেমন মিশর-তুরস্ক রাজনৈতিকভাবে দ্বান্দ্বিক অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও এক তার্কিশ ডেভলপার কোম্পানি মিশরে ৫টি ইকোনমিক জোন তৈরি করে দেয়।

পাশাপাশি বৃহৎপরিসরে সহযোগিতা ও উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে ইতোমধ্যে ডি-৮ এর জন্য

বিশেষায়িত তিনটি বিমান বন্দর রয়েছে-

১. সাবিহা গোজেন বিমানবন্দর, তুরস্ক,

২. জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, পাকিস্তান,

৩. নাওয়াকিন্দি বিমানবন্দর, নাইজেরিয়া।

সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ও এই প্রকল্পের আওতায় আসবে

বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার

নিজেদের মাঝে নিজস্ব মুদ্রার বিনিময়ের প্রস্তাবনা শুরু থেকে থাকলেও ডি-৮ এই প্রকল্পে এখন ও সফল হয়নি। তবে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর সাথে চুক্তি করে আঞ্চলিক মুদ্রা বিনিময় করতে D-Card এর প্রচলন খুব দ্রুতই করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যেখান থেকে ছাত্র, প্রবাসী শ্রমিক, প্রাইভেট ব্যাংকিং খাত ব্যাপক উপকৃত হতে পারবে। কেননা এখানে মুদ্রার মূল্যমান হিসেবে স্বর্ণের মজুদ সংরক্ষণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ডি-৮ চেম্বার অফ কমার্স প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। তবে অতি সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানটি “যারা ডি-৮ এর চেয়ারম্যান থাকবে, তারাই চেম্বার অফ কমার্সের দায়িত্বে থাকবে” মূলনীতি অনুসারে খুব সহজেই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। এর সদর দপ্তরের নাম হয়, D-8 Chamber of Commerce & Industries, Kualalampur. 

যার অধীনে Creative Economy and Finance Center for D-8″ নামে চমৎকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যেখানে হালাল অর্থনীতি এবং ইসলামী ব্যাংকিং নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়াও ইসলামী সভ্যতার অনন্য সব মিরাস যেমন যাকাত, ওয়াকফ, হিবা ও সাদাকাকে বর্তমান বিশ্বে গ্লোবাল ইকোনোমিতে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

সদস্যদেশগুলোর বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী, বিনিয়োগকারী, উৎপাদক সহ বিভিন্ন পর্যায়ে এসকল প্রকল্পের বিস্তৃতি রয়েছে। ডিজিটাল কারেন্সি, বকচেইন ইত্যাদির সাথে ইসলামী অর্থব্যবস্থাকে সংগতিপূর্ণ করতে চালু করা হয়েছে, Muslim Youngster Entrepreneurship. পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে Robotic Association. মসজিদসমূহকে কেন্দ্র করে প্রশিক্ষণ এবং দাতব্য ব্যবস্থা পুনপ্রতিষ্ঠায় চালু করা হয়েছে- Waqf Foundation, Malaysia,

সমাজে মহত্তম এই ব্যবস্থাকে পুনরায় প্রচলন করতে শরিয়ার আলোকে জারী করা হচ্ছে

নতুন ফতোয়া ।

পর্যালোচনা

অসীম সম্ভাবনা ও শক্তির আধার, মুসলিম উম্মাহর মুক্তির মনজিল ডি-৮ বর্তমানে স্থবির একটি সংগঠনে পরিণত হয়েছে এবং সময়ের পরিক্রমায় একটি বিশ্বজনীন বিকল্প জাতিসং হওয়ার পথ থেকে সরে এসে প্রচলিত আঞ্চলিক সংস্থা সমূহের মত আচরণ শুরু করেছে। এ অবস্থার পেছনে বিশ্লেষকগণ দায়ী করেন সদস্য রাষ্ট্র সমূহ অন্য জোটে যুক্ত থাকায় সে সকল স্বার্থের বেড়াজালে পড়ে ডি-৮ কে আগ্রহভরে গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছে না। একে শক্তির উৎস নয়; বরং বোঝা হিসেবেই বয়ে বেড়াচ্ছেন। এখানে একটি উদাহরণই যথেষ্ট-

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ডি-৮ এর প্রস্তাবক হওয়া সত্ত্বেও ২০০২ সালের পর থেকে D-8 এর তুলনায় ইউরোপ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে বেশি ধাবিত হয়েছে তুরস্ক সরকার। অথচ প্রতিষ্ঠার পর থেকে D-8 এর দিকে জোর দিলে হয়তো আজ ইউরোপ ও এশিয়াতে বিশ্বরাজনীতির নতুন চেহারা দেখতে পেত বিশ্ববাসী।

বাংলাদেশ ও ডি-৮

ডি-৮ এর অন্যতম সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্র বাংলাদেশ সম্প্রতি টানা ২য় বারের মত সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। সুতরাং ডি-৮ এর বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অতীতে বাংলাদেশ ও ডি-৮ সংক্রান্ত তেমন আশাব্যঞ্জক ইতিহাস না পাওয়া গেলেও সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১০ম ভার্চুয়াল ডি-৮ সম্মেলন, মন্ত্রীপরিষদ বৈঠক ও চেম্বার অফ কমার্সের মিটিং এ কর্তাব্যক্তিদের আলোচনা আশার সঞ্চার করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডি-৮ সম্মেলনে তার সভাপতির ভাষণে বলেন, “একা হয়ত আমরা কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার সামর্থ রাখি, কিন্তু এক সাথে পথচলা আমাদের বহু দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।” ডি-৮ এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগামী ১০ বছরের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করে তিনি তিনটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন- ১. বর্তমান বাণিজ্যের পরিমাণকে দ্বিগুণ করা, ২. খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং ৩. পৃথিবীর অন্যতম নেতৃত্ব দানকারী টেক জায়ান্টে পরিণত হওয়া ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রখ্যাত অধ্যাপক, ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ডি-৮ কে চলমান বৈশ্বিক মন্দা মোকাবেলায় সর্বোত্তম বিকল্প উল্লেখ করে বলেন, ডি-৮ ভুক্ত দেশে ১.১ বিলিয়ন মানুষের একটি বিশাল মার্কেট রয়েছে। সদস্য দেশগুলো যদি এই মার্কেট ব্যবহার করে স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় এবং অন্যান্য পারস্পরিক সহযোগিতা মাত্রা বৃদ্ধি করে তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক জ্বালানী ও খাদ্য সঙ্কট থেকে অনায়াসেই পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে।”

গত জুলাই মাসে ডি-৮ চেম্বার অফ কমার্সের বর্তমান বাংলাদেশি সভাপতি ফজলে ফাহিম তার তার বক্তব্যে ডি-৮ এর দেশগুলোর মাঝে আন্তঃমুদ্রা বিনিময় এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ বৃদ্ধির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একইভাবে বাংলাদেশের সরকারী নীতি নির্ধারক মহল, যেমন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্য মন্ত্রী, বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিষয় উপদেষ্টা বিভিন্ন বক্তব্যে ডি-৮ ভুক্ত দেশের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে খুব শীঘ্রই চালু হতে যাওয়া ১০০ টি ইকোনমিক জোন এবং ২০ টি হাইটেক পার্কে বাড়তি সুযোগ ও অগ্রাধিকার এবং বিনিয়োগ সুরক্ষা দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন এবং পারস্পরিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির অকৃত্রিম সহযোগী হতে আহ্বান জানান।

পারস্পরিক উন্নয়ন অগ্রগতি ও কোলাবোরেশনকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করতে এবারে মন্ত্রী পর্যায়ের ডি-৮ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এক বারের জায়গায় প্রয়োজনে বছরে একাধিকবার অধিবেশন আহ্বানের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

সার্বিকভাবে বুঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের নীতি নির্ধারক মহল ডি-৮ এর শক্তিমত্তাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে এবং সভাপতি রাষ্ট্র হিসেবে এই সংগঠনের মধ্য দিয়ে নিজেদের উন্নতি ও উৎকর্ষের হিসাব মিলাতে শুরু করেছে। যদি সত্যিকারার্থেই বাংলাদেশ সহ অন্যান্য রাষ্ট্র মুসলিম বিশ্বের অপার সম্ভাবনাময় এ সংগঠনে পূর্ণ শক্তি বিনিয়োগ করে তবে খুব দ্রুতই এ সংগঠন প্রতিষ্ঠাকালীন প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষার পথে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হবে।

ডি-৮, অতীত ও বর্তমান বিশেষণের পাঠ চুকিয়ে আমরা যখন ২৫ বছর বয়সী নতুন দুনিয়ার এ প্রস্তাবনার দিকে তাকাই, তখন দেখতে পাই। সংগ্রামী পূর্বপুরুষের তরফ থেকে অসামান্য এক হাতিয়ার আমাদের সামনে গড়াগড়ি খাচ্ছে, অথচ আমরা তার দিকে ভ্রুক্ষেপও করছি না। সুযোগ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাচ্ছি না; বরং প্রতিটি দেশই আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিসরে যুলুমতান্ত্রিক বিশ্ব শক্তিগুলোর অপরাজনীতির পাল্লায় পড়ে হিমশিম খাচ্ছি। এর কারণ কী?

এর কারণ হচ্ছে উম্মাহ চেতনাকে হারিয়ে ফেলা। যে উম্মাহ চেতনার বলে বলীয়ান হতে পারলে আজ আমরা সমগ্র মানবতার সামনে রহমতের ছায়া হয়ে উঠতে পারতাম। গোটা দুনিয়া থেকে সন্ত্রাস, বাড়াবাড়ি, যুদ্ধ, হানাহানি, জুলুম-সংঘাতকে প্রতিহত করে একটি বসবাসযোগ্য দুনিয়ার সু-সংবাদ দিতে পারতাম। ঠিক যে মুহূর্তে দুনিয়া বাইপোলার থেকে ইউনিপোলার হলো, তখন ও আমরা কিছু করতে পারিনি। বর্তমানে যখন ইউনিপোলার থেকে মাল্টিপোলার হচ্ছে, মুসলিম হিসেবে আমরা ইতিহাসের এ সন্ধিক্ষণে কোন ভূমিকাই রাখতে পারলাম না। আজ যখন বিশ্বমানবতা আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য NATO জোট থেকে উদীয়মান পরাশক্তি চীন কিংবা তাকেও অতিক্রম করে BRICS এর মতো নবপ্রতিষ্ঠিত সংস্থার দিকে নজর ফিরাচ্ছে। ঠিক সে মূহুর্তে ডি-৮ এর মতো বিশ্ব পরিবর্তনের সক্ষমতা ও ভিশন সম্পন্ন এক বিশ্বজনীন প্রতিষ্ঠান কালের গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ।

এখান থেকে মুক্ত হতে হলে যুব পরিসরে ডি-৮ ও ইসলামী ঐক্যের চিন্তার বীজ বুননের কোন বিকল্প নেই। সমসাময়িক দুনিয়া, চলমান দুনিয়ার নিকট অতীতের ইতিহাস, ইসলামী সভ্যতার উত্তরাধিকার ও সামগ্রিক শাস্তির বয়ানকে অনাগত প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে বৃহত্তর মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণ ও ঐক্য এবং বিশ্বমানবতার চূড়ান্ত মুক্তির ভাবনাকে প্রত্যেকের জ্ঞান ও চেতনার মনিকোঠায় পৌঁছে দেয়ার কোন বিকল্প নেই ।

বসবাস যোগ্য এক নতুন দুনিয়ার প্রস্তাবক, বিশ্ব মানবতার মুক্তি আন্দোলনের রাহবার প্রফেসর ড. নাজমুদ্দির এরবাকান তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে ডি-৮ নামক স্বপ্নের যে মনযিল আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন, তাকে তিনি নিজ ভাষায় চিত্রায়ণ করেছেন এভাবে- “ডি-৮ হচ্ছে বিংশ শতাব্দীর তরফ থেকে একবিংশ শতাব্দীর প্রতি দেওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার।”

আজ আমরা সবাই পাশ্চাত্য যায়নবাদী সভ্যতার সাড়ে তিনশো বছরে রক্তাক্ত ইতিহাস, বিগত শতাব্দীর বারুদ মেশা ইতিহাসের গন্ধ, পারমাণবিক হুমকিতে দুনিয়াকে সদা তটস্থ করে অবশেষে বায়োলজিক্যাল ওয়ারের মাধ্যমে সমগ্র মানবতার উপরে পতনোন্মুখ মরণ কামড়, বিশ্বব্যাপী পাওয়ার ট্রানজিশন, ফেরাউনি শক্তিগুলোর মধ্যে ঘন ঘন পরিবর্তনশীল দৃশ্যপট দেখে খুব সহজেই উপলব্ধি করতে পারছি, আজ নতুন একটি যুগের এবং নতুন একটি বিজয়ের প্রয়োজন। যা সমগ্র মানবতা আজ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। নতুন একটি শান্তিময় দুনিয়া গঠন করার জন্য আমাদের এই মুসলিম উম্মাহ পুনরায় নেতৃত্ব দিবে। সম্মানিত একটি জাতির এবং সম্মানিত একটি ইতিহাসের উত্তরাধিকারীগণ এই বিজয়ের পতাকাবাহী হিসাবে কাজ করবে।

সুতরাং আমাদের অবশ্যই সর্বাগ্রে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে যে, ইসলামী ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে। গৌরবোজ্জ্বল উম্মাহর সোনালী ইতিহাস ও মুক্তির ভাবনাকে বুলন্দ করে উম্মাহর প্রতিটি সদস্যকে পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া অসামান্য মিরাস, ডি-৮ ও নতুন দুনিয়ার প্রস্তাবনাকে সামনে রেখে সর্বাত্মকভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। ডি-৮ কে তার প্রতিষ্ঠাকালীন রূহ ও জযবার সাথে মিলিয়ে পাঠ করতে হবে। মুক্তির স্বপ্ন জ্বেলে যাওয়া এ সংস্থাকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে নিকট ভবিষ্যতে মুক্তি ও জাগরণের বন্দর হিসেবে। মানুষকে করতে হবে দৃঢ় প্রত্যয়ী ও আত্মবিশ্বাসী। তবেই ডি-৮ তার মূল লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ । আমাদের জাতির সর্বাঙ্গীণ উৎকর্য ও কল্যাণ লাভের উদ্দেশ্যে মুক্তি ও পুনর্জাগরণে চিন্তাকে

সর্বাঙ্গণে ব্যাপৃত করতে হবে। বিপুল জনশক্তি, সামরিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও সুবিধাকে একক পরাশক্তিতে পরিণত করে যুলুমবাজ পাশ্চাত্য যায়নবাদী সভ্যতার মূলোৎপাটন করে ডি-৮ আগামীর জন্য মুক্তিদ্বার হিসেবে বিবেচিত হবে, ইনশাআল্লাহ।

আমাদের চিন্তায় জাগরূক থাক মুক্তির আহ্বান, আমাদের ভাবনায় জেগে থাক পুনর্জাগরণের আওয়াজ, আমাদের সমগ্র জীবন ব্যয় হয়ে যাক একটি নতুন দুনিয়া প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে।

কায়েম হোক ‘হক ও আদালত’কে সর্বাগ্রে স্থান দেয়া এক বিশ্বব্যবস্থার প্রজানের পর প্রজন্য ধরে যে স্বপ্ন আমরা জারী রেখেছি।

লেখক- হিশাম আল নোমান