মুসলিম পোর্ট

বাংলার মুসলিম স্থাপত্যে চৌ-চালা ছাদের ব্যবহারের প্রথম নিদর্শন হিসেবে আজও বিদ্যমান ষাটগম্বুজ মসজিদ। মসজিদটি খলিফাতাবাদ প্রদেশের প্রতিষ্ঠাতা গভর্নর খানজাহান আলী (১৪১৭-১৪৫৯ খ্রি.) ১৪৫০ সালে বাগেরহাট শহর থেকে প্রায় তিন মাইল পশ্চিমে ঘোড়াদীঘির পূর্বতীরে নির্মাণ করেন। 

মসজিদের বহির্দেয়ালের পরিমিতি উত্তর-দক্ষিণে ১৬০’ এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১০৮’। মসজিদের পূর্বদিকের বৃহত্তর দেয়ালে ১১টি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ এবং পশ্চিম দেয়ালে ১০টি মিহরাব অবস্থিত। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালেও সাতটি করে খিলানপথ অবস্থিত। এছাড়াও, মসজিদের চারকোনায় চারটি মজবুত গোলাকৃতির বুরুজ ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে কার্নিসের উপরে উত্থিত এবং উপরিভাগ ছোট আকারের গম্বুজ দিয়ে আবৃত। ষাট গম্বুজ মসজিদে মধ্যবর্তী খিলান পথের উপর স্থাপিত ৭টি চৌ-চালাসহ মোট ৭৭টি গম্বুজ ৬০টি স্তম্ভের উপর সংস্থাপিত। চার কোনার চারটি কিউপোলাসহ সর্বমোট গম্বুজের সংখ্যাও ৮১টি।

বাংলার কুঁড়েঘরের অনুকরণে চৌ-চালা ছাদ নির্মাণের রীতি সর্বপ্রথম ষাটগম্বুজ মসজিদেই পরিলক্ষিত হয়। এই মসজিদের প্রধান প্রবেশপথ বরাবর কেন্দ্রীয় মিহরাবের সম্মুখের সারির উপরিভাগে অর্থাৎ প্রশস্ত খিলানপথের (nave) উপরিভাগে সাতটি গম্বুজ রয়েছে। এই সাতটি গম্বুজের প্রত্যেকটির আকার স্বাভাবিক গম্বুজের আকার হতে ভিন্নতর। গোলাকৃতির পরিবর্তে এই সাতটি গম্বুজ বাংলা চৌ-চালা রীতিতে নির্মিত। 

চুন-সুরকির আস্তরণে আচ্ছাদিত গম্বুজের বিকল্প হিসেবে এই চৌ-চালা ছাদগুলো সরাসরি ছাদের উপর স্থাপিত। বাংলার কুঁড়েঘরের সঙ্গে এগুলোর পার্থক্য এই যে, কুঁড়েঘরে প্রশস্ত ছাঁইচ নির্মাণ করা হতো। এই মসজিদের উপর কোনো ছাঁইচ নির্মাণ না করেই চৌ-চালা ছাদগুলো সরাসরি ছাদের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে কিন্তু চালাগুলো ক্রমান্বয়ে ঢালু হয়ে ঈষৎ বক্রভাবে উপরে উত্থিত হয়ে একটিমাত্র শৈলশিরার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। এই চালাগুলোর মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্বের চালাদ্বয় ট্রাপিজিয়াম মতো এবং উত্তর ও দক্ষিণ পার্শ্বের চালা দুটি ত্রিভুজাকৃতির। দেশজ এই রীতি এই মসজিদের উপরে নির্মিত প্রতিটি চৌ-চালা ছাদের ক্ষেত্রেই অনুসরণ করা হয়েছে।