আজ ১৭ ই জুন!
বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম সিপাহসালার
মিশরের সাবেক একমাত্র গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট ড. মুহাম্মাদ মুরসির ৪র্থ শাহাদাত বার্ষিকী।
পূর্ণ নাম: মুহাম্মদ মুরসি ইসা আল-আইয়াত। তিনি ১৯৫১ সালের ৮ই আগস্ট মিশরের শারক্বিয়া প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। (মৃত্যু ১৭ই জুন, ২০১৯)
১৯৭৫ সালে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক ও ১৯৭৮ সালে একই বিষয়ে সাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করে ওই বছরই উচ্চ শিক্ষার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান মুরসি।
১৯৮২ সালে ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ক্যালিফোর্নিয়াতে মোহাম্মদ মুরসির প্রকৌশল বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন এবং তিনি ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, নর্থরিজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।
পরবর্তী সময়ে ১৯৮৫ সালে মুরসি শারকিয়া প্রদেশের জাগাজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপনার চাকরি ছেড়ে মিশরে চলে আসেন।
২০০০ সালে মোহাম্মদ মুরসি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাংগঠনিকভাবে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য হলেও হোসনি মুবারাকের শাসনামলে মুসলিম ব্রাদারহুড মিশরের প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ছিল। তাই তিনি সতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। সাংসদ হিসেবে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মিশরের সংসদে বহাল ছিলেন মুরসি। এ সময়ে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।ফিলিস্তিনের ন্যায়সংগত আন্দোলনের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন মুরসি।
২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি গণবিক্ষোভের মুখে হোসনি মোবারকের পতন হয়। এরইমধ্যে মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় দলটির প্রত্যক্ষ সমর্থনে ‘মুসলিম ব্রাদারহুড ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি’ (এফজেপি) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হলে মুরসি তার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ২০১২ সালে মে ও জুনে দুই পর্বের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল জনসমর্থনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন মুরসি। এ সময় মুসলিম ব্রাদারহুড ও এফজেপি আনুষ্ঠানিকভাবে মোহাম্মদ মুরসিকে ‘মিশরের সর্বস্তরের মানুষের রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
তবে ক্ষমতাগ্রহণ করেই দীর্ঘ সামরিক শাসনের যাতাকলে ক্ষয়িষ্ণু মিশরকে পতনের হাত থেকে রক্ষার জন্য দ্রুত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি মুরসি।
সমালোচক ও বিরোধীদের ভাষ্য, মুরসি দেশের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছিলেন। একইসঙ্গে তিনি দেশের স্বার্থের চেয়েও মুসলিম ব্রাদারহুডের ইসলামপন্থি কর্মসূচিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র এক বছরের মধ্যেই মুরসি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামে মিশরের জনগণ। এরই সুযোগ নিয়ে মুরসির বিরুদ্ধে ওই গণবিক্ষোভ ও অভ্যুত্থানে সমর্থন দেয় সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দখলদার ইসরায়েলের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলো। সরকারিভাবে বিবৃতি দিয়ে মুরসি সমর্থকদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সৌদি আরব।
কারাবন্দী নিঃসঙ্গ মুরসি।
বাস্তবতা এই যে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ান মুরসি। দখলদার ইসরায়েল অবরুদ্ধ গাজাবাসীর জন্য মিশরের সীমান্ত খুলে দিয়ে জেরুজালেম ও আল আকসা মসজিদের ওপর ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণের পক্ষে অবস্থান নেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টাও করেন। তার এ দুটি পদক্ষেপই কাল হয়ে দাঁড়ায়। মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নামে সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও ইসরায়েল। অভিযোগ রয়েছে মুরসির বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভ উস্কে দেওয়ার জন্য এই তিনটি দেশ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছিল।
২০১৩ সালের ৩০ জুন মিশরজুড়ে রাস্তায় রাস্তায় মুরসির সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ সুযোগে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই দেশটির তৎকালীন সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে ও বন্দি করে। এভাবেই সমাপ্তি ঘটে মজলুম নেতা মুহাম্মদ মুরসি অধ্যায়ের…
আল্লাহ আপনার যাবতীয় সংগ্রামকে কবুল করুন হে জান্নাতের মেহমান! পরবর্তী প্রজন্মকে সত্যিকার বীপ্লবের অনুঘটক হবার তৌফিক দান করুন।
আমিন…