৭ অক্টবরের পরে দখলদার ইসরাইলের সাথে বেড়েছে তুরস্কের বানিজ্য! কথার সাথে কাজের মিলের বিস্তর ফারাক!!
গাজা ইস্যুতে সাম্প্রতিক তুরস্ক সরকারের সোশ্যাল মিডিয়াতে দেওয়া বক্তব্য সত্যিই প্রশংসনীয় এবং সমগ্র উম্মাহর কাছে তা আশার সঞ্চার করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু পর্দার আড়ালে তুরস্ক ও দখলদার ইসরাইলের সাম্প্রতিক বাণিজ্য বিষয়ক পরিসংখ্যানসমূহ সম্পূর্ণ বিপরীত এক চিত্র প্রদরশন করছে!
২০২২ সালের ডিসেম্বরে দেশটির রপ্তানি, ২২.৯ বিলিয়ন ডলার ছিল, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ২৩.০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ঘোষণা করেন, আমাদের মোট বার্ষিক রপ্তানি ২৫৪.১৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৫৫.৮১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
তিনি সেখানে যোগ করেন-
“আমাদের রপ্তানি হয়তো বার্ষিক বা মাসিক ভিত্তিতে খুব বেশি বাড়েনি, কিন্তু কিছু দেশে আমাদের রপ্তানি দারুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, সেই ‘কিছু’ দেশের মাঝে দখলদার ইসরায়েল ও রয়েছে। যদিও তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী ওমের বোলাত বলেছেন যে- “গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলের সাথে আমাদের পারস্পরিক বাণিজ্য গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশের বেশি কমে গেছে।” তবে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে- গত ডিসেম্বর মাসে তুরস্কের সাথে ইসরাইলের রপ্তানী বানিজ্য প্রায় ৩৫% বৃদ্ধি পেয়েছে । আর এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ছেলে বুরাক এরদোয়ান!।
যেখানে দেখা যায়, ইসরায়েলে তুরস্কের রপ্তানি, যা নভেম্বরে ৩১৯.৫ মিলিয়ন ডলার ছিল, ডিসেম্বরে এসে তা ৪৩০.৬ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
যেখানে বৃদ্ধির হার ঠিক ৩৪.৮%।
নভেম্বরে ভিন্ন কথা বল্লেও সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে বাণিজ্য মন্ত্রী স্বীকার করেন এবং বলেন যে-হ্যাঁ, ইজরায়েলে আমাদের রপ্তানি ডিসেম্বরেই বিগত সময়গুলোর মাঝে সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে যা কিনা ৭ অক্টোবরের হামলার আগে জুলাই মাসে যে পরিমাণ ছিল, তাঁর থেকেও বেশি (৪০৮.৩ মিলিয়ন ডলার)।
এখানে বলাই বাহুল্য, সন্ত্রাসী ইসরায়েলকে মুখের বুলিতে উড়িয়ে দেওয়া এরদোয়ান সরকারের দ্বিমুখীতার একটি স্বরূপ এই উচ্চমুখী রপ্তানি সূচক! আর এখানেই আবারো বড় সাফল্য দেখছে এরদোয়ান সরকার। এমনকি তুরস্কের পার্লামেন্টে ইসলামপন্থী সাদেত পার্টির প্রস্তাবিত “তুরস্কের সাথে দখলদার ইসরাইলের ব্যবসা বাণিজ্যের হোতাদের খুঁজে বের করা হোক” – মর্মে যে বিলটি উত্থাপিত হয়েছিল তা উত্থাপনের সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষমতাসীন একেপি ও জাতীয়তাবাদি দল এমএইচপি এর এমপিদের দ্বারা খারিজ করে দেওয়া হয়। যার দরুণ কারা বর্তমান পরিস্থিতিতেও নির্লজ্জের মত দখলদারদের সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছে তাদের পরিপূর্ণ মুখোশ উন্মোচন ও আর করা সম্ভব হয়নি।
নতুন বছরের প্রথম দিনেই তুরস্কের গালাতা সেতুতে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। একথা বলাই যায়, কেউ যদি এই দুদেশের রপ্তানির পরিসংখ্যান দেখে তবে ১লা জানুয়ারির গালাতা সেতুর জনসমাগমকে ইসরায়েলের সাথে তুরস্কের বাণিজ্য সাফল্য উদযাপনের একটি প্রদর্শনী মাত্র বলেই মনে করবে।
যদিও প্রেসিডেন্ট এরদোয়্নের ছেলে বিলাল এরদোয়ান তুরস্কের পুঁজির মালিকদের হুমকি দিয়েছে এবং তিনি বলেছিলেন যে- “পুঁজির মালিকদের সাবধান হওয়া উচিত।” এক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকেই যায়- বিলাল এরদোয়ান যদি এক্ষেত্রে সত্যিই আন্তরিক থাকেন, তাহলে তুরস্কের দখলদার ইসরাইলের সাথে বাণিজ্য না বেড়ে বরং কমে যেত।
এছাড়াও, তুরস্কে কোকাকোলা এবং ম্যাকডোনাল্ডস বয়কটের আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছিল যা ছিল সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু এখন এসে সেই পৃষ্ঠপোষকতাকে মনে হচ্ছে যেন সেটি ছিল কেবল কোক আর হ্যামবার্গার বয়কটের ঘোষণা দিয়ে জাতিকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার মতন, কেননা এর আড়ালেই তুরস্ক সরকার নিজ জনগণের চোখে ধুলা দিয়ে দখলদার ইসরাইলের সাথে নিজেদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রেকর্ড সংখ্যক হারে বৃদ্ধি করেছে।
-ডেস্ক রিপোর্ট, মুসলিম পোর্ট